আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরোক্ষভাবে নাক কাটার প্রচ্ছন্ন হুমকি দিলেন হরিয়ানার বিজেপি নেতা সুরজ পাল আমু।
তিনি (শনিবার) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘যেসমস্ত নারী রাক্ষসী প্রবৃত্তির হয়, যেমন শূর্পণখা; নাক কেটে তাকে শিক্ষা দিয়েছিলেন লক্ষ্মণ। মমতা যেন এ কথা ভুলে না যান।’
হরিয়ানার বিজেপি নেতা সুরজ পাল আমু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পৌরাণিক মহাকাব্য রামায়ণের শূর্পণখার কথা মনে করিয়ে দিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। লক্ষ্মণ যেভাবে শূর্পণখাকে নাক কেটে শাস্তি দিয়েছিল সেকথাই তিনি মমতাকে মনে করিয়ে দিয়েছেন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
ভারতে সঞ্জয় লীলা বনশালী পরিচালিত ‘পদ্মাবতী’ ছায়াছবিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রাজ্যে হিন্দুত্ববাদীরা তীব্র বিরোধিতা করছে। বিভিন্ন রাজ্যে ছবি মুক্তির ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করাসহ নানাভাবে বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছে।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোয়াপধ্যায় গতকাল (শুক্রবার) এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘অন্য রাজ্য যদি ছবি মুক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ছবির টিম নিশ্চিন্তে বাংলায় চলে আসতে পারে। এখানে ছবি মুক্তির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, ক্রীড়া ও শিল্পের কোনো জাত হয় না এবং তা ভৌগোলিক সীমারেখাতেও আবদ্ধ থাকে না। শিল্প, শিক্ষা ও ক্রীড়ার জন্য বাংলার দরজা সবসময় খোলা আছে।’
এরপরে আজই হরিয়ানার বিজেপি নেতা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রচ্ছন্নভাবে নাক কাটার হুমকি দিয়েছেন।
পদ্মাবতী ছবির অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোনের মুণ্ডচ্ছেদে ৫ কোটি টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেন ওই বিজেপি নেতা। আর পদ্মাবতীর পরিচালক সঞ্জয়লীলা বনশালীর মাথা কাটলে আরো পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার এবং যিনি ওই কাজ করবেন তার পরিবারের সব দায়িত্ব তিনি নেবেন বলে ঘোষণা দেন হরিয়ানা বিজেপির মুখপাত্র সুরজ পাল আমু।
ওই ছায়াছবিতে সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির ভূমিকায় অভিনয় করা রণবীর সিংয়ের হাত-পা মেরে ভেঙে দেবেন বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দেন। দল থেকে তাকে কৈফিয়ত চাওয়া হলেও থামার লক্ষণ নেই হরিয়ানার বিজেপি নেতা সুরজ পাল আমুর।
এদিকে, আজ দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে ভারতের ভাইস-প্রেসিডেন্ট বেঙ্কইয়া নাইডু বলেন, ‘বর্তমানে বেশ কিছু সিনেমা নিয়ে একটা নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে সাধারণ মানুষ মনে করছেন সিনেমাগুলোতে কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম বা জাতিকে অপমান করে তাদের ভাবাবেগে আঘাত করা হচ্ছে। আর সেজন্য তারা সড়কে নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘শারীরিক ক্ষতি করলে এক কোটি টাকা পুরস্কার দেয়ার কথা যারা ঘোষণা করছে তাদের কাছে আদৌও এত টাকা কী আছে? আমার সন্দেহ আছে। সকলেই এক কোটি টাকা পুরস্কারের ঘোষণা করছে। এক কোটি টাকা পাওয়া এত সহজ নাকি?’
তিনি আরো বলেন, ‘গণতন্ত্রে এ ধরনের প্রতিবাদের কোনো স্থান নেই। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিবাদ হতে পারে। বেঙ্কাইয়া নাইডু বলেন, ‘আপনি কোনওভাবেই শারীরিকভাবে বাধা দিতে পারেন না, আর এ ধরনের হুমকি কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।’ এটা প্রতিবাদের সঠিক নিয়ম নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ভারতের ভাইস-প্রেসিডেন্ট বেঙ্কাইয়া নাইডু অবশ্য মানুষের ভাবাবেগে আঘাত করে কোনো সিনেমা তৈরি করা ঠিক নয় বলেও মন্তব্য করেছেন। (পার্সটুডে)