আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের কর্ণাটকের উডুপ্পিতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ আয়োজিত ধর্মসংসদ সভায় অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর পক্ষে সাফাই দেয়াসহ হিন্দুদের চার সন্তানের জন্ম দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
হরিদ্বারের ভারত মাতা মন্দিরের স্বামী গোবিন্দদেব গিরিজি মহারাজ গতকাল (শনিবার) বলেন, ‘ভারতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি যতদিন কার্যকর না হচ্ছে, হিন্দুদের কম করে চারটে করে সন্তান হওয়া উচিত। তার দাবি, অতীতে যেখানেই হিন্দু জনসংখ্যা কমে গেছে সেই এলাকা ভারতের হাতছাড়া হয়েছে এবং জনবিন্যাসের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে।’
(রোববার) ধর্মসংসদের শেষ দিনে স্বামী গোবিন্দদেব গিরিজি মহারাজের মন্তব্য সমর্থন করে স্বামী নরেন্দ্র নাথ বলেন, কেবলমাত্র হিন্দুরাই কেন দুই সন্তানের নীতি মেনে চলবে?
স্বামী নরেন্দ্র নাথ বলেন, যদি মুসলিম ও খ্রিস্টানরা ২০ সন্তানের জন্ম দেয় তাহলে হিন্দুদেরও এত সন্তান হওয়া উচিত।’
স্বামী নরেন্দ্র নাথ আজ আত্মরক্ষার জন্য হিন্দুদের হাতে মোবাইল ফোনের পরিবর্তে অস্ত্র থাকা উচিত বলেও বিতর্কিত মন্তব্য করেন।
এ নিয়ে আজ ‘ওয়েলফেয়ার পার্টি অব ইন্ডিয়া’র পশ্চিমবঙ্গের সভানেত্রী শাহজাদী পারভীন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘এদেশে বিভিন্ন ভাষাভাষী ও বিভিন্ন ধর্মের মানুষ ভ্রাতৃত্বের সঙ্গে বাস করে। কিন্তু সম্প্রতি ভারতে যা ঘটছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এখানে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আনার যে চেষ্টা চলছে তা কোনোভাবেই কল্যাণকর নয়। এতে বিভিন্ন ধর্মের মানুষদের পার্সোনাল ল’য়ের ওপরে আঘাত আসবে। অমুসলিম মা-বোনদের যেরকম পার্সোনাল ল’অনুসারে আগ্নি সাক্ষী রেখে বিয়ে হয়, তারা শাখা-সিঁদুর পরেন, তারা মারা গেলে চিতায় দাহ করা হয়। একইভাবে মুসলিমরা তাদের বিয়ের সময় আলেম ডেকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তারা মারা গেলে পার্সোনাল ল’ অনুসারে তাদেরকে কবর দেয়া হয়। এরকম অনেক জাতি আছে যাদের নিজ নিজ পার্সোনাল ল’ আছে।’
শাহজাদী পারভীন বলেন, ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি যদি চালু করা হয় তাহলে কোনো মানুষই শান্তিতে থাকতে পারবে না এবং তাদের ব্যক্তিগত আইনসমূহ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ভারতের মানুষ যে লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছিল সেই ‘এক দেশ-এক জাতি-এক প্রাণ’ হয়ে ওঠার পরিবর্তে ভারত আজ অন্য দিকে হাঁটতে শুরু করেছে।’
তিনি সন্তান জন্ম দেয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘একজন মা তার গর্ভে ক’জন সন্তান ধারণ করবেন তা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু যদি কোনো সংখ্যা বেঁধে দেয়া হয় তাহলে নারী স্বাধীনতা হস্তক্ষেপ করা হবে। একজন মা ক’টি সন্তান নেবেন তা যদি কোনো রাজনৈতিক দল ঠিক করে দেয় তাহলে ভারতের জন্য, ও ভারতের গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত তা অত্যন্ত লজ্জার!’
তিনি বলেন, ভারতের সংবিধান অনুসারে প্রত্যেক মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত আছে। মানুষ যে রাজনৈতিক দল বা ধর্ম পালন করুন না কেন প্রত্যেকের পারস্পারিক সাংস্কৃতিক পরিচিতি রক্ষা করা মানবিক দায়িত্ব বলেও শাহজাদী পারভীন বলেন। পার্সটুডে