দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত করেনি নির্বাচন কমিশন। তারপরও থেমে নেই প্রার্থীদের আগাম প্রচারণা। যে যার মতো কৌশলে ভোটারদের মন জয় করতে ব্যস্ত। দলীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান বাদ দিচ্ছেন না কোনটিই। প্রতিটি অনুষ্ঠানেই অংশ নিচ্ছেন নিয়মিত। চালাছেন গণসংযোগ। দিচ্ছেন নানা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। নির্বাচন কমিশন (ইসি) চলতি বছরের শেষে ও আগামী বছরের শুরুতে পৌরসভা নির্বাচনের জন্য তাদের সম্ভাব্য প্রস্তুতির কথা জানান দেয়াতেই এখন থেকেই সরব হয়ে উঠেছেন মৌলভীবাজার পৌরসভার সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তারা এখন থেকেই লিফলেট, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে নিজেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জানান দিচ্ছেন। মৌলভীবাজার সদর পৌরসভার সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা নিজেদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে কেন ও কি কারণে পৌরবাসীর সেবায় তারা নিয়োজিত হতে চান তা লিফলেট ছাপিয়ে জনগণের হাতে হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন। প্রার্থীদের ছবি সম্বলিত এ লিফলেটগুলো পৌর ভোটারদের আগাম নির্বাচনী আমেজ দিচ্ছে। প্রার্থীদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে শহরের চায়ের দোকান, হোটেল, রেস্তরাঁ আর জনসমাগম স্থলগুলোতেও চলছে সরগরম আলোচনা। প্রার্থীরা কে কোন মতও পথের কে মেয়র হলে কি করবেন আলোচনা উঠে আসছে এসকল বিষয়। প্রার্থীরা ভোটারদের মন জয় করতে এখন থেকেই তাদের প্রার্থীতার খবর জানিয়ে দিচ্ছেন। নিচ্ছেন আগাম দোয়া ও আশীর্বাদ। তাদের সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মাধ্যমে চালাচ্ছেন তাদের ভোট জরিপও। ভোটারদের আগাম সমর্থন আদায়ে করছেন ঘরোয়া বৈঠক। সেখানে থাকছেন তাদের আত্মীয়স্বজন, সমর্থক ও কর্মীরা। তাদের মতামত নিয়ে ঠিক করা হচ্ছে ভোটের আগাম পরিকল্পনা। প্রার্থীরা পাড়া মহল্লার ছোট-বড় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সবার সহযোগিতা ও দোয়া চাইছেন। এসব অনুষ্ঠানে নগর উন্নয়নে নিজেদের নানা পরিকল্পনার বিষয়টি তুলে ধরে সকলের দৃষ্টি আর্কষণ করা চেষ্টা চালাচ্ছেন। এখন থেকেই রুটিন করে প্রার্থীরা একেক পাড়া ও মহল্লার মসজিদে একেক দিন জুমার নামাজ আদায় করে ভোটাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। আর সেখানে নিজেদের প্রার্থিতার বিষয়টি জানিয়ে তাদের আগাম দোয়া নিচ্ছেন। করছেন চা চক্র আর মতবিনিময় সভার আয়োজন। দলের সমর্থন পেতে এখন থেকে আগেভাগেই দলের সিনিয়র নেতা, সাবেক ও বর্তমান এমপিদের সমর্থন পেতে তাদের মন জয় করতে চালাচ্ছেন নানা তদবির। তাদের আস্থাভাজন হওয়ারও জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন নানা কৌশলে। নিজ দলের নিবেদিত কর্মীদের কাছে টানতে খাতির যত্নের কমতি নেই। মৌলভীবাজার: আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মৌলভীবাজার সদর পৌরসভায় যারা প্রার্থী হচ্ছেন বলে এ পর্যন্ত নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- বর্তমান পৌর মেয়র ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল করিম ময়ুন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান বাবুল, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সৈয়দ মফচ্ছিল আলী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর ছোট ভাই আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ নওশের আলী খোকন, জেলা যুবলীগ সভাপতি মো. ফজলুর রহমান, সাংস্কৃতিক ও সংগঠক ভিপি আবদুল মতিন, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ আহমদ, যুক্তরাষ্ট প্রবাসী কমিউনিটি নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন, সাংবাদিক বখশী ইকবাল আহমদ, বর্তমান প্যানেল মেয়র মনবীর রায় মনজু, সাংবাদিক অ্যাডভোকেট নরুল ইসলাম শেফুল, সাবেক ছাত্রদল নেতা আবদুল মোতালেব রাজা। জেলার সদর পৌরসভা ছাড়াও জেলার ৭টি উপজেলার ৫টি পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে চলছে আগাম প্রচারণা। কুলাউড়া, বড়লেখা, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল পৌরসভার প্রার্থীরা আগাম প্রচারণায় সরব রয়েছেন। জেলার ৫টি পৌরসভায় এ পর্যন্ত মোট ৪২ জন সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। আর কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন প্রায় ৪ শতাধিক।
কুলাউড়া: কুলাউড়ায় সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে এ পর্যন্ত যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, বর্তমান মেয়র ও কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির (একাংশের) সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমদ জুনেদ, কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, কাদিপুর ইউনিয়নের ৩ বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও আইডিয়াল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম শফি আহমদ সলমান, জেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, কুলাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও কুলাউড়ার সংলাপ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক প্রভাষক সিপার উদ্দিন আহমদ, কুলাউড়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাংবাদিক ও ক্রীড়া সংগঠক যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী কয়ছর রশীদ, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন কুলাউড়া উপজেলা শাখার সভাপতি ও কুলাউড়া পৌরবালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক এনামুল ইসলাম এনাম, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শফিউল আলম ইউনুছ, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য শফি আলম শফি, প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মামুন রেনু। বড়লেখা: জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা বড়লেখা পৌরসভায় মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে এ পর্যন্ত যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন বর্তমান মেয়র ও উপজেলা যুবদলের সভাপতি মো. ফখরুল ইসলাম, গত নির্বাচনে ২য় স্থানে থাকা খিজির আহমদ, জেলা যুবলীগের সহসভাপতি কামরান চৌধুরী, বর্তমান প্যানেল মেয়র আলী আহমদ, কাউন্সিলর মো. তাজউদ্দিন, প্রয়াত মেয়র আবদুল মালিকের ছোট ভাই মো. নরুদ্দিন, কাউন্সিলর শামীম আহমদ। কমলগঞ্জ: কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে এ পর্যন্ত যাদের নাম শোনা যাচ্ছে- পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান মেয়র আবু ইব্রাহীম, সাবেক পৌর মেয়র ও সাবেক উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাসিন আফরোজ চৌধুরী, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও প্যানেল মেয়র আনোয়ার হোসেন, পৌর যুবলীগের সভাপতি ও সাপ্তাহিক কমলগঞ্জের কাগজের সম্পাদক ও প্রকাশক জুয়েল আহমদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসলাম ইকবাল মিলান, প্রভাষক নজরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা জাকারিয়া হাবিব বিপ্লব, মো. মাসুক আলী। শ্রীমঙ্গল: শ্রীমঙ্গল পৌরসভায় মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে এ পর্যন্ত যাদের নাম শোনা যাচ্ছে- বর্তমান মেয়র ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মহসীন মিয়া মধু, জেলা বিএনপির নেতা মো. আহাদ মিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক এম এ রহিম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. আছকির মিয়া, সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ভানুলাল রায়, আওয়ামী লীগ নেতা আফজল হক, বিএনপি নেতা মবিন তফাদার। এদিকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে জানা যায় আসন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে এসব নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আগাম প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। এ ক্ষেত্রে নভেম্বর বা ডিসেম্বরে এসব নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। এদিকে ২৬১ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। জানা গেছে, চলতি বছরের নভেম্বরেই মেয়াদ শেষ হচ্ছে এসব পৌরসভার। তাই আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে সারা দেশের ২৬১ পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
নভেম্বরে নির্বাচন উপযোগী: চলতি বছরের নভেম্বর থেকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে সারা দেশে ২৬১ পৌরসভায় নির্বাচন করতে হবে ইসিকে। সারা দেশে ৩১৭টির মধ্যে নভেম্বর থেকে ২৬১ পৌরসভা নির্বাচন করার উপযোগী হবে বলে জানিয়েছে ইসি। ১২ই জানুয়ারি ২০১১ থেকে ১৮ই জানুয়ারি ২০১১ পর্যন্ত এসব পৌরসভায় নির্বাচন হয়েছিল। এসব পৌরসভায় প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে। সে হিসাব অনুযায়ী পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান রয়েছে। তথা আগামী নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসব পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ক্ষেত্রে কমিশন আগামী বছরের শুরুতেই এসব নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রাথমিক পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানা গেছে।