সিলেট থেকে ফরহাদ কুরাইশিঃ ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, দিনাজপুরে আহমদিয়া মসজিদ ও ইস্কন মন্দিরে বোমা হামলার পর এবার সিলেটেও বড় ধরণের হামলার তথ্য রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। মসজিদ, মন্দির ও মাজারে এই হামলা হতে পারে বলে গোয়েন্দা সংস্থার পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ কথা বলেছেন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো. মিজানুর রহমান। গতকাল শনিবার সিলেট জেলা পুলিশ আয়োজিত জেলার আলেম ও মাশায়েখদের সাথে ‘জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী মতবিনিময় সভায়’ তিনি এই আশঙ্কার কথা জানান। ডিআইজি মিজানুর রহমান বলেন- সিলেটে জঙ্গিদের হামলার পরিকল্পনার নানা তথ্য পুলিশের কাছে রয়েছে। জঙ্গিদের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন মাজার সংলগ্ন মসজিদ, শিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদ, ওয়াজ মাহফিল ও শুক্রবার জুমার নামাজের জামাত চলাকালে হামলা করা হতে পারে। হামলায় জঙ্গিরা ল্যাপটপসহ বিভিন্ন ধরণের তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারে। তিনি বলেন- গোয়েন্দারা তথ্য পেয়েছেন, ল্যাপটপে করে এক্সক্লোসিভ ডিভাইসের মাধ্যমে মসজিদে হামলা করতে পারে। গত কয়েকদিনে সন্দেহভাজন জঙ্গিরা সারাদেশ থেকে পুরনো ল্যাপটপ সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে। জঙ্গিদের মোকাবেলায় পুলিশ সতর্ক রয়েছে জানিয়ে মিজানুর রহমান বলেন- এসব তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের ইন্টিলিজেন্স এজেন্সির মাধ্যমে সভা করে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। পুলিশের একার পক্ষে জঙ্গি কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ পুরোপুরি সম্ভব নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন- এজন্য জনগণকে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। মসজিদ, মন্দির ও মাজারে ব্যাগ, ল্যাপটপ নিয়ে অপরিচিত কাউকে ঢুকতে না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন ডিআইজি। ডিআইজি বলেন- জঙ্গি হামলার আশঙ্কার সাথে জঙ্গি অর্থায়নের বিষয়টিও উঠে এসেছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। এজন্য নজরদারিতে রয়েছে বিভিন্ন এনজিওসহ দেশি-বিদেশি সংস্থাও। জঙ্গি হামলার আশঙ্কা থেকেই এ অঞ্চলের আলেম ও ইমামদের সাথে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে জানিয়ে সিলেট রেঞ্জের অঞ্চলের পুলিশ প্রধান বলেন- জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় আলেম উলামাদের সম্পৃক্ত করা ও জঙ্গি তৎপরতা সম্পর্কে তাদের বাড়তি সতর্ক করতেই তাদের সাথে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় মসজিদ, মাজার ও মাদ্রাসাগুলোতে আলেম ও মাশায়েখদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন- ২০০৪ সালের ২১ মে হযরত শাহজালালের মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর বোমা হামলা হয়। সে বছরের ৭ অগাস্ট তালতলায় গুলশান সেন্টারে বোমা হামলায় নিহত হন আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিম আলী। এরপর ২৪ ডিসেম্বর তাঁতীপাড়ায় আওয়ামী লীগ নেত্রী সাবেক সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা হকের বাসায় মহিলা আওয়ামী লীগের সভায় বোমা হামলা চালানো হয়। নগরীর টিলাগড়ে সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। ২০০৫ সালের ১৭ অগাস্ট দেশের অন্যান্য জেলার পাশাপাশি সিলেটের ২৯টি স্থানে একযোগে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ গত বছরের ১২ মে সুবিদ বাজারে বিজ্ঞানমনষ্ক লেখক অনন্ত বিজয় দাশকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এসব ঘটনায় করা মামলায় জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পান তদন্তকারী কর্মকর্তারা। এছাড়া ২০০৬ সালে ২ মার্চ নগরীর শাপলাবাগে অভিযানে গ্রেপ্তার হন তৎকালীন জেএমবি নেতা শায়খ আব্দুর রহমান। পরে তার ফাঁসি হয়। এসময় অন্যান্যের বক্তাদের দেওয়া বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ডিআইজি বলেন- জঙ্গিগোষ্ঠীরা আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বা তথ্য-প্রযুক্তিতে মেধাবী শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে ইসলামের দোহাই দিয়ে তাদের বিভ্রান্ত করছে। এ বিষয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের সচেতনতার জন্য শীঘ্রই তাদের নিয়ে আমরা কাউন্সিলিং করব। এছাড়াও মাদ্রাসা প্রধানদের সাথেও কাউন্সিলিং করা হবে। এর আগে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- সিলেটের পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ফরিদ উদ্দিন আহমদ। উভয়ই সিলেট অঞ্চলে হামলার আশঙ্কা করেন। পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা বলেন- সিলেট অঞ্চলে প্রায় ১৯ হাজার মসজিদ ও পাঁচ শতাধিক মাজার রয়েছে। এছাড়া প্রায় ৩০ হাজার মাদ্রাসা রয়েছে। এসব স্থাপনায় কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। পুলিশি নিরাপত্তার পাশাপাশি নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন তিনি। তিনি বলেন- সিলেটের বিশেষ করে কানাইঘাট, বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ সম্পর্কে আমাদের ধারণা আছে। এই এলাকার মানুষ ইসলাম প্রিয়। তাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে জঙ্গিরা এই এলাকায় অবস্থান নিয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন- দেশের বিভিন্ন জঙ্গি হামলাও খুনের সাথে কানাইঘাটের মানুষ জড়িত আছে। কাজেই সিলেটবাসীকে জঙ্গিদের সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। পুলিশকে জঙ্গি মোকাবেলায় সহযোগিতা করতে হবে। সন্দেহ জনক কোনো কিছু বা কাউকে দেখলে সাথে সাথে পুলিশকে জানাতে হবে। যদি তথ্যদাতার ক্ষতির সম্ভবনা থাকে তাহলে পুলিশ তথ্য গোপন রাখবে। সিলেট ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেন- সিলেট অঞ্চলে প্রায় ১৯ হাজার মসজিদ ও পাঁচ শতাধিক মাজার রয়েছে। এছাড়া প্রায় ৩০ হাজার মাদ্রাসা রয়েছে। এসব স্থাপনায় কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। পুলিশি নিরাপত্তার পাশাপাশি নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন তিনি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশের সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মিজানুর রহমান উত্তরপূর্বকে বলেন-জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় পুলিশ সতর্ক আছে। আমাদের ইন্টিলিজেন্স এজেন্সির মাধ্যমে সভা করে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। তবে পুলিশের একার পক্ষে জঙ্গি কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এজন্য জনগণকে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন- এখন থেকে মসজিদ-মাদ্রাসায় চেক পোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করে লোক ডুকাতে হবে। আলেম ও মাশায়েখদের সভায় প্রত্যেক মসজিদে সিসি টিভি লাগানোর অনুরোধ করেছি। ইমাম সাহেবদের সাধারণ জনগণকে সচেতন করতে অনুরোধ করেছি।