Menu |||

সাভারের বেদে সমস্যার মূলে গিয়ে সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছে পুলিশ সুপার -হাবিবুর রহমান

জাকির সিকদার,সাভার থেকে: : সাভারের বেদে সমাজের সমস্যার মূলে গিয়ে তা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছে পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান .এখন আর মানুষের আতংক নয়, তারা শক্তি প্রয়োগ ছাড়াই সাভারের বেদে সমাজের সমস্যার মূলে গিয়ে তা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছে। যা ইতিমধ্যেই পুলিশের উচ্চমহলে প্রশংসা অর্জন করেছে। বেদে পাড়ার আত্মীয় ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান। হাবিবের মতো সাভার মডেল থানার সিনিয়র এএসপি রাসেল শেখ নিত্য আত্মীয় হয়ে কাজ করছেন বেদে সমাজের সমস্যা সমাধানকল্পে। বেদে আত্মীয় এএসপি রাসেল শেখ কে সহযোগিতা করছেন সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম কামরুজ্জামান। হাবিবুর রহমান শুধু পুলিশের কর্মকর্তাই নন এখন তিনি বেদে আত্মীয়। হাবিব মাদক সমস্যাসহ জনসাধারণের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানকল্পে মাদক আস্তানা বেদে পাড়াকে বিশুদ্ধ করতেই সমাজ সংস্কারের আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।সাংবাদিক মিঠুন সরকার জানিয়েছেন, হাবিবের নেতৃত্বে মাদক সমস্যা সমাধানের জন্য সাভার থানা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। আদিকাল থেকে বেদে নারীরা চুড়ি-ফিতা-খেলনা বিক্রি, শিঙ্গা লাগানো, দাঁতের পোকা তোলা, তাবিজ-কবজ বিক্রি, সাপেকাটা রোগীর চিকিৎসা, সাপের খেলা দেখানো, সাপের ব্যবসা করা, আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য সেবাদান, ভেষজ ওষুধ বিক্রি, মৃত পশুর শরীরের অংশ এবং গাছ-গাছড়ার ওষুধ তৈরি করে বিক্রি, বানরখেলা, জাদু দেখানো, মাছ ধরা, পাখি শিকার ইত্যাদি হরেক উপায়ে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করতেন। এব্যাপারে সাভার সার্কেল এর এএসপি নাজমুল হাসান ফিরোজ জানান, জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতি, হাবিবুর রহমান স্যারের সমাজ সংস্কারের আন্দোলনে সাড়া দিয়ে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পেশা থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছেন বেদে সম্প্রদায়ের নারীরা। স্থানীয় বাজারে দোকান করা, হাঁস-মুরগি বা কবুতর পালন, মাছ চাষ ও কাঁথা-কাপড় সেলাইয়ের মতো কাজ। সেলাইয়ের কাজে বেদে নারীদের সহায়তা করছেন নাজনিন আক্তার। নাজনিন আক্তার কে সহযোগিতা করছেন পোড়াবাড়ী সমাজকল্যান সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রমজান আহাম্মেদ। নাজনিন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমানের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে বেদে নারী ও শিশুদের কল্যানে কাজ করে যাচ্ছেন। নারী শিক্ষা আন্দোলনে পাকিস্থানের মালালার কথা সকলের জানা। ঠিক তেমনি বেদে পাড়ার নারী অধিকার রক্ষায় মালালার মতো কঠোর সংগ্রামে যোগ দিয়েছেন নাজনিন আক্তার। পোশাক তৈরির প্রতিষ্ঠানের মালিক নাজনিন। বেদে সম্প্রদায়ের শতাধিক মেয়েকে সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন, সেলাই মেশিন কিনে দেন তিনি। বেদেপল্লির কাছেই স্থাপন করেন তাঁর তৈরি পোশাকশিল্প কারখানার একটি স্থায়ী শাখা। সুপারভাইজার মোসাম্মাত তসলিমা জানান, দামি পোশাক তৈরিতে আয় বেশি। এখন তাঁদের দিনে সব মিলিয়ে প্রত্যেকের তিন থেকে চার শ টাকা থাকছে। সাভারের পোড়াবাড়ি রাস্তার পাশে চায়ের দোকান দিয়ে বসা বেদেকন্যা ফাতেমা আক্তার বলেন, �এহন আর মানুষ তাবিজ-কবজ কিনতে চায় না�। তাই আমরা এহন সেলাই মেশিনে কাজ করি। হাবিরের উদ্যোগে সাড়া দিয়ে বেদে সম্প্রদায়ের লোকজন মাদক গ্রহণ ও মাদক ব্যবসা থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা জেলা পুলিশ তাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে। ইতিমধ্যেই তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে তাদের এলাকার রাস্তা-ঘাট উন্নয়ন, সেলাই প্রশিক্ষণ, শিক্ষা ও চাকরিসহ কয়েকটি বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সময়ের প্রয়োজনে তাই পাল্টে যাচ্ছে জীবিকার ধরন, এমনকি জীবনবোধও। বেদে বলতেই পৃথিবীর রহস্যময় একদল মানুষের চেহারা আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। যাদের বড় বড় চুল, অস্বাভাবিক লম্বা গোঁফ, কাঁধে গেরুয়া কাপড়ের ঝোলা, হাতে বীণ, মাথায় সাপের ঝাঁপি। যাদের বেঁচে থাকার জন্য রয়েছে বিচিত্রসব পেশা। তন্ত্র-মন্ত্র, যাদু-টোনা ও বশিকরণ বিদ্যায় যাদের আজন্ম লালিত বিশ্বাস। কিন্তু সমাজ জীবনের মৌলিক পরিবর্তনের ধারায় আলাদা বৈচিত্রের ধারক-বাহক বেদে সমাজের বিশ্বাস ও সংস্কারে ফাটল ধরেছে। তন্ত্র-মন্ত্র, জাদু-টোনা, শোক-সঙ্গীত উচ্চারণ ও অদ্ভুত পোশাক থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছেন আদি নৃ-গোষ্ঠীর এই মানুষগুলো। নারীদের তুলনায় বেদে পুরুষরা কিছুটা অলস হয়। বেদেপল্লীর সরদার মো. ইউসুফ হোসেন বলেন, আজ থেকে ৫০/৬০ বছর আগে আমাদের আদি বসবাস ছিল মুন্সীগঞ্জের লৌহজং এলাকায়। সেখান থেকে অনেকে যখন সাভারে এখানে বসবাস করার জন্য বাড়ি-ঘর তুলছিলেন, তখন মাটির নিচ থেকে পোড়া হাড়ি, বালতি ও কলসের ভাঙ্গা অংশ পাওয়া যায়। তখন থেকেই এর নাম প্রচলন হয়ে আসছে পুড়াবাড়ি। তিনি জানান, ডেরা, ভাসমান বহর বা স্থায়ী পল্লীতে পুরুষরাই সরদার হন। কেউ কোনো অপরাধ করলে সর্দার তার বিচার করেন। ঢাকা জেলার সাভারে বেদেপল্লির গোড়াপত্তন কবে, তা ইতিহাসবেত্তার ভাবনার বিষয় হতে পারে। সাভারের বিভিন্ন এলাকায় এই পল্লি থেকেই মাদক সরবরাহ হতে শুরু করে। স্বাভাবিকভাবেই শুরু হয় পুলিশের তৎপরতা। কিন্তু নানা কারণে এই পল্লির ভেতরে গিয়ে বেদেদের ধরে শাস্তি দেওয়ার সুযোগ হয়নি তাদের। এ সময়ে সাভারে আসেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) হাবিবুর রহমান। তিনি সমস্যার কথা বুঝতে পেরে বেছে নেন ভিন্ন পথ। কাউকে শাস্তি না দিয়ে বরং সরদারসহ বেদেদের আমন্ত্রণ জানান এক আলোচনা সভায়। বেদেরা আসে, আলোচনায় অংশ নেয়। স্বীকার করে নেয় নিজেদের দোষ। সমাজে মিশে সহজ-স্বাভাবিক পেশা বেছে নিতে পারছে না বলেও অকপটে স্বীকার করেন বেদে সরদার। তাঁদের এই স্বীকারোক্তি হাবিবুর রহমানের যেমন ভালো লাগে, তেমনই বেদেদের সমস্যাও তাঁকে বেশ ভাবিয়ে তোলে। বেদেরা জানান, স্বাভাবিক পেশা, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারলে মাদক ব্যবসা তাঁরা ছেড়ে দেবেন। হাবিবুর রহমান তাঁর অধস্তন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে লেগে পড়েন এই বেদেদের স্বাভাবিক পেশায় নিয়ে যেতে। শুরু হয় তাঁর বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ। এগিয়ে আসে ব্র্যাক ও সাভার প্রেসক্লাব। এসপি হাবিবের সহায়তায় তারা বেদে সম্প্রদায়কে ভিন্ন পেশার প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করে। বংশী নদীর পারে পোড়াবাড়ি, আমলপুর ও কাঞ্চনপুর এই তিনটি গ্রাম নিয়ে সাভারের বেদেপল্লি। হাজার বিশেক মানুষের বাস। শিক্ষার নিম্নহার এই অঞ্চলের মানুষের পিছিয়ে পড়ার সবচেয়ে বড় কারণ বলে মনে করেন কিছু তরুণ। সমাজকল্যাণ সংঘের রমজান আহাম্মেদ এর নেতৃত্বে স্থানীয় তরুণেরাই ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন পোড়াবাড়ি সমাজকল্যাণ সংঘ। সাভার মডেল থানার সঙ্গে কাজ করছেন এই সমাজকল্যাণ সংঘের তরুণেরা। শুরুটা শিক্ষার হার বাড়ানো দিয়ে। সাভারে বসবাসরত ৩৫ জন বেদে যুবাকে ড্রাইভিং পেশায় যুক্ত করতে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর বিনা খরচে এ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ব্র্যাক ড্রাইভিং স্কুল। পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক ও ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ডা. মুহাম্মাদ মুসা ঢাকার পুলিশ সুপারের কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সময়ের প্রয়োজনে সমাজে সম্মানের সঙ্গে জীবিকা নির্বাহের জন্যই বেদেরা বিকল্প পেশায় যেতে চাইছে। আমরা তাদের সুযোগ করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য এলাকার বেদে সমাজেও এ রকম পরিবর্তনে ভূমিকা রাখার ইচ্ছা রয়েছে।’ ঢাকা জেলা পুলিশের উদ্যোগে সাভারের পোড়াবাড়ী, অমরপুর ও কাঞ্চনপুর এলাকায় বেদে সম্প্রদায়ের উন্নয়নে বহুমুখী কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাল্যবিয়ে রোধ, মাদক ব্যবসা রোধ, শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা, নতুন রাস্তা নির্মাণ ও মেয়েদের সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া। ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার ( এসপি ) হাবিবুর রহমান নতুন প্রকল্প হাতে নিয়ে এর মধ্যে ভাসমান মানুষের জন্য গুচ্ছগ্রাম তৈরীর সকল প্রক্রিয়া সম্পাদন করেছেন।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» কুয়েতে মুরাদুল হক চৌধুরীকে সম্মাননা

» তাপপ্রবাহ: প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা

» মালয়েশিয়ায় ই-পাসপোর্ট সেবা উদ্বোধন

» কুয়েতে সংবর্ধিত হলেন মুরাদুল হক চৌধুরী

» সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঝড়বৃষ্টিতে মৃত বেড়ে ৪

» তাপদাহ: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধের নির্দেশ

» কুয়েতে প্রবাসী নারীদের সংগঠন উদযাপন করেছে পহেলা বৈশাখ

» কুয়েত বাংলাদেশ কমিউনিটির ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত

» কুয়েতে বাংলাদেশ ভবনে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে প্রবাসীদের শুভেচ্ছা বিনিময়

» মালয়েশিয়ার মিনি ঢাকায় ‘রেস্টুরেন্ট মনির ভাই’ উদ্বোধন

Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
,

সাভারের বেদে সমস্যার মূলে গিয়ে সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছে পুলিশ সুপার -হাবিবুর রহমান

জাকির সিকদার,সাভার থেকে: : সাভারের বেদে সমাজের সমস্যার মূলে গিয়ে তা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছে পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান .এখন আর মানুষের আতংক নয়, তারা শক্তি প্রয়োগ ছাড়াই সাভারের বেদে সমাজের সমস্যার মূলে গিয়ে তা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছে। যা ইতিমধ্যেই পুলিশের উচ্চমহলে প্রশংসা অর্জন করেছে। বেদে পাড়ার আত্মীয় ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান। হাবিবের মতো সাভার মডেল থানার সিনিয়র এএসপি রাসেল শেখ নিত্য আত্মীয় হয়ে কাজ করছেন বেদে সমাজের সমস্যা সমাধানকল্পে। বেদে আত্মীয় এএসপি রাসেল শেখ কে সহযোগিতা করছেন সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম কামরুজ্জামান। হাবিবুর রহমান শুধু পুলিশের কর্মকর্তাই নন এখন তিনি বেদে আত্মীয়। হাবিব মাদক সমস্যাসহ জনসাধারণের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানকল্পে মাদক আস্তানা বেদে পাড়াকে বিশুদ্ধ করতেই সমাজ সংস্কারের আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।সাংবাদিক মিঠুন সরকার জানিয়েছেন, হাবিবের নেতৃত্বে মাদক সমস্যা সমাধানের জন্য সাভার থানা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। আদিকাল থেকে বেদে নারীরা চুড়ি-ফিতা-খেলনা বিক্রি, শিঙ্গা লাগানো, দাঁতের পোকা তোলা, তাবিজ-কবজ বিক্রি, সাপেকাটা রোগীর চিকিৎসা, সাপের খেলা দেখানো, সাপের ব্যবসা করা, আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য সেবাদান, ভেষজ ওষুধ বিক্রি, মৃত পশুর শরীরের অংশ এবং গাছ-গাছড়ার ওষুধ তৈরি করে বিক্রি, বানরখেলা, জাদু দেখানো, মাছ ধরা, পাখি শিকার ইত্যাদি হরেক উপায়ে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করতেন। এব্যাপারে সাভার সার্কেল এর এএসপি নাজমুল হাসান ফিরোজ জানান, জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতি, হাবিবুর রহমান স্যারের সমাজ সংস্কারের আন্দোলনে সাড়া দিয়ে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পেশা থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছেন বেদে সম্প্রদায়ের নারীরা। স্থানীয় বাজারে দোকান করা, হাঁস-মুরগি বা কবুতর পালন, মাছ চাষ ও কাঁথা-কাপড় সেলাইয়ের মতো কাজ। সেলাইয়ের কাজে বেদে নারীদের সহায়তা করছেন নাজনিন আক্তার। নাজনিন আক্তার কে সহযোগিতা করছেন পোড়াবাড়ী সমাজকল্যান সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রমজান আহাম্মেদ। নাজনিন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমানের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে বেদে নারী ও শিশুদের কল্যানে কাজ করে যাচ্ছেন। নারী শিক্ষা আন্দোলনে পাকিস্থানের মালালার কথা সকলের জানা। ঠিক তেমনি বেদে পাড়ার নারী অধিকার রক্ষায় মালালার মতো কঠোর সংগ্রামে যোগ দিয়েছেন নাজনিন আক্তার। পোশাক তৈরির প্রতিষ্ঠানের মালিক নাজনিন। বেদে সম্প্রদায়ের শতাধিক মেয়েকে সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন, সেলাই মেশিন কিনে দেন তিনি। বেদেপল্লির কাছেই স্থাপন করেন তাঁর তৈরি পোশাকশিল্প কারখানার একটি স্থায়ী শাখা। সুপারভাইজার মোসাম্মাত তসলিমা জানান, দামি পোশাক তৈরিতে আয় বেশি। এখন তাঁদের দিনে সব মিলিয়ে প্রত্যেকের তিন থেকে চার শ টাকা থাকছে। সাভারের পোড়াবাড়ি রাস্তার পাশে চায়ের দোকান দিয়ে বসা বেদেকন্যা ফাতেমা আক্তার বলেন, �এহন আর মানুষ তাবিজ-কবজ কিনতে চায় না�। তাই আমরা এহন সেলাই মেশিনে কাজ করি। হাবিরের উদ্যোগে সাড়া দিয়ে বেদে সম্প্রদায়ের লোকজন মাদক গ্রহণ ও মাদক ব্যবসা থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা জেলা পুলিশ তাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে। ইতিমধ্যেই তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে তাদের এলাকার রাস্তা-ঘাট উন্নয়ন, সেলাই প্রশিক্ষণ, শিক্ষা ও চাকরিসহ কয়েকটি বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সময়ের প্রয়োজনে তাই পাল্টে যাচ্ছে জীবিকার ধরন, এমনকি জীবনবোধও। বেদে বলতেই পৃথিবীর রহস্যময় একদল মানুষের চেহারা আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। যাদের বড় বড় চুল, অস্বাভাবিক লম্বা গোঁফ, কাঁধে গেরুয়া কাপড়ের ঝোলা, হাতে বীণ, মাথায় সাপের ঝাঁপি। যাদের বেঁচে থাকার জন্য রয়েছে বিচিত্রসব পেশা। তন্ত্র-মন্ত্র, যাদু-টোনা ও বশিকরণ বিদ্যায় যাদের আজন্ম লালিত বিশ্বাস। কিন্তু সমাজ জীবনের মৌলিক পরিবর্তনের ধারায় আলাদা বৈচিত্রের ধারক-বাহক বেদে সমাজের বিশ্বাস ও সংস্কারে ফাটল ধরেছে। তন্ত্র-মন্ত্র, জাদু-টোনা, শোক-সঙ্গীত উচ্চারণ ও অদ্ভুত পোশাক থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছেন আদি নৃ-গোষ্ঠীর এই মানুষগুলো। নারীদের তুলনায় বেদে পুরুষরা কিছুটা অলস হয়। বেদেপল্লীর সরদার মো. ইউসুফ হোসেন বলেন, আজ থেকে ৫০/৬০ বছর আগে আমাদের আদি বসবাস ছিল মুন্সীগঞ্জের লৌহজং এলাকায়। সেখান থেকে অনেকে যখন সাভারে এখানে বসবাস করার জন্য বাড়ি-ঘর তুলছিলেন, তখন মাটির নিচ থেকে পোড়া হাড়ি, বালতি ও কলসের ভাঙ্গা অংশ পাওয়া যায়। তখন থেকেই এর নাম প্রচলন হয়ে আসছে পুড়াবাড়ি। তিনি জানান, ডেরা, ভাসমান বহর বা স্থায়ী পল্লীতে পুরুষরাই সরদার হন। কেউ কোনো অপরাধ করলে সর্দার তার বিচার করেন। ঢাকা জেলার সাভারে বেদেপল্লির গোড়াপত্তন কবে, তা ইতিহাসবেত্তার ভাবনার বিষয় হতে পারে। সাভারের বিভিন্ন এলাকায় এই পল্লি থেকেই মাদক সরবরাহ হতে শুরু করে। স্বাভাবিকভাবেই শুরু হয় পুলিশের তৎপরতা। কিন্তু নানা কারণে এই পল্লির ভেতরে গিয়ে বেদেদের ধরে শাস্তি দেওয়ার সুযোগ হয়নি তাদের। এ সময়ে সাভারে আসেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) হাবিবুর রহমান। তিনি সমস্যার কথা বুঝতে পেরে বেছে নেন ভিন্ন পথ। কাউকে শাস্তি না দিয়ে বরং সরদারসহ বেদেদের আমন্ত্রণ জানান এক আলোচনা সভায়। বেদেরা আসে, আলোচনায় অংশ নেয়। স্বীকার করে নেয় নিজেদের দোষ। সমাজে মিশে সহজ-স্বাভাবিক পেশা বেছে নিতে পারছে না বলেও অকপটে স্বীকার করেন বেদে সরদার। তাঁদের এই স্বীকারোক্তি হাবিবুর রহমানের যেমন ভালো লাগে, তেমনই বেদেদের সমস্যাও তাঁকে বেশ ভাবিয়ে তোলে। বেদেরা জানান, স্বাভাবিক পেশা, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারলে মাদক ব্যবসা তাঁরা ছেড়ে দেবেন। হাবিবুর রহমান তাঁর অধস্তন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে লেগে পড়েন এই বেদেদের স্বাভাবিক পেশায় নিয়ে যেতে। শুরু হয় তাঁর বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ। এগিয়ে আসে ব্র্যাক ও সাভার প্রেসক্লাব। এসপি হাবিবের সহায়তায় তারা বেদে সম্প্রদায়কে ভিন্ন পেশার প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করে। বংশী নদীর পারে পোড়াবাড়ি, আমলপুর ও কাঞ্চনপুর এই তিনটি গ্রাম নিয়ে সাভারের বেদেপল্লি। হাজার বিশেক মানুষের বাস। শিক্ষার নিম্নহার এই অঞ্চলের মানুষের পিছিয়ে পড়ার সবচেয়ে বড় কারণ বলে মনে করেন কিছু তরুণ। সমাজকল্যাণ সংঘের রমজান আহাম্মেদ এর নেতৃত্বে স্থানীয় তরুণেরাই ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন পোড়াবাড়ি সমাজকল্যাণ সংঘ। সাভার মডেল থানার সঙ্গে কাজ করছেন এই সমাজকল্যাণ সংঘের তরুণেরা। শুরুটা শিক্ষার হার বাড়ানো দিয়ে। সাভারে বসবাসরত ৩৫ জন বেদে যুবাকে ড্রাইভিং পেশায় যুক্ত করতে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর বিনা খরচে এ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ব্র্যাক ড্রাইভিং স্কুল। পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক ও ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ডা. মুহাম্মাদ মুসা ঢাকার পুলিশ সুপারের কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সময়ের প্রয়োজনে সমাজে সম্মানের সঙ্গে জীবিকা নির্বাহের জন্যই বেদেরা বিকল্প পেশায় যেতে চাইছে। আমরা তাদের সুযোগ করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য এলাকার বেদে সমাজেও এ রকম পরিবর্তনে ভূমিকা রাখার ইচ্ছা রয়েছে।’ ঢাকা জেলা পুলিশের উদ্যোগে সাভারের পোড়াবাড়ী, অমরপুর ও কাঞ্চনপুর এলাকায় বেদে সম্প্রদায়ের উন্নয়নে বহুমুখী কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাল্যবিয়ে রোধ, মাদক ব্যবসা রোধ, শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা, নতুন রাস্তা নির্মাণ ও মেয়েদের সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া। ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার ( এসপি ) হাবিবুর রহমান নতুন প্রকল্প হাতে নিয়ে এর মধ্যে ভাসমান মানুষের জন্য গুচ্ছগ্রাম তৈরীর সকল প্রক্রিয়া সম্পাদন করেছেন।

Facebook Comments Box


এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



আজকের দিন-তারিখ

  • বৃহস্পতিবার (দুপুর ২:২৩)
  • ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)

Exchange Rate

Exchange Rate EUR: বৃহঃ, ২৫ এপ্রি.

সর্বশেষ খবর



Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Bangladesh Office

Director. Rumi Begum
Adviser. Advocate Koyes Ahmed
Desk Editor (Dhaka) Saiyedul Islam
44, Probal Housing (4th floor), Ring Road, Mohammadpur,
Dhaka-1207. Bangladesh
Contact: +8801733966556 / +8801920733632

Email Address

agrodristi@gmail.com, agrodristitv@gmail.com

Licence No.

MC- 00158/07      MC- 00032/13

Design & Devaloped BY Popular-IT.Com
error: দুঃখিত! অনুলিপি অনুমোদিত নয়।