বিশেষ প্রতিবেধকঃ- পৌরসভা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের আচরণবিধি লঙ্ঘনে অনেকটা বিব্রত নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এবার তাদের চিঠি দিয়ে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। কমিশন বৈঠকে রোববার এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বৈঠকের পর নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী বলেন, মন্ত্রী-এমপিরা যাতে আচরণবিধি মেনে চলেন সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। এ বিষয়ে ইসি কর্মকর্তারা জানান, মন্ত্রী-এমপিসহ সংশ্লিষ্টদের আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়টি ভালোভাবে স্মরণ করিয়ে দিতে স্পিকার ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে এ চিঠি পাঠানো হবে।
জানা গেছে, সম্প্রতি মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় সংসদ সদস্যরা প্রার্থীর সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে গেলেও কোনো অ্যাকশন নেয়নি ইসি। আওয়ামী লীগের এমপিরা অনেক এলাকায় নিজ নিজ মেয়রপ্রার্থীর পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় সঙ্গে ছিলেন। এমনকি একজন এমপি হেলিকপ্টারে করে এলাকায় গিয়েছিলেন মনোনয়নপত্র নিয়ে। এ ধরনের ঘটনায় উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে বিভিন্ন পৌরসভায়। এ কারণে ভোটের আগেই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। একই সঙ্গে বাধার কারণে পৌরসভা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি অনেক মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী।
গত ৩ ডিসেম্বর বরগুনা-২ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমন বেতাগী পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র নিয়ে হেলিকপ্টারে করে বেতাগী গিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার নিয়ে এমপি বেতাগী হাইস্কুল মাঠে অবতরণ করেন। সেখান থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে শোডাউনসহ উপজেলা চত্বরে এমপির অফিসে গিয়ে মেয়রপ্রার্থী এবিএম গোলাম কবিরের হাতে মনোনয়নপত্র তুলে দেন। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দৃশ্যমান আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে অনেকটাই অসন্তুষ্ট নির্বাচন কমিশন। এ কারণেই সতর্ক করে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের কথা হচ্ছে- অনুগ্রহ করে আইন ভাঙবেন না। সে যেই হোক, বিধি ভঙ্গ করলে ব্যবস্থা নিতে হবে- যা সুখকর হবে না।”
তিনি সরকারি সুবিধাভোগীদের নির্বাচনের প্রচারে না যেতে অনুরোধ করেন এবং যারা সুবিধাভোগী নন, তাদেরও বিধি অনুসরণ করার আহ্বান জানান।
সরকারি সুবিধাভোগী হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ ও সিটি মেয়রদের পৌর নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নেয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে আইনে। তবে দলীয় প্রধানদের প্রচারে বাধা নেই।
শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হয়েও প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকায় এবার পৌর ভোটের প্রচারে যেতে পারছেন না। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদে থাকা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য।
তবে সংসদের বাইরে থাকায় সরকারি কোনো সুবিধা নিচ্ছেন না বলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভোটের প্রচারে বাধা নেই। বিএনপি নেত্রীর বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শাহনেওয়াজ বলেন, ‘পথসভা করতে বাধা নেই। কিন্তু পথসভা যেন শোভাযাত্রা বা জনসভায় পরিণত না হয়।’ ইসিকে যেন ‘বিব্রতকর বা অস্বস্তিকর’ সিদ্ধান্ত নিতে না হয়, সে বিষয়ে সজাগ থাকার আহ্বান জানাই।
নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, পৌর ভোটের প্রচারে পথসভা বা ঘরোয়া সভা করতে হলে অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। বিধি ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা ছয় মাসের দ- বা উভয় দ- হতে পারে। আর দল বিধি ভঙ্গ করলেও সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে নির্বাচনী আইনে।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২৩৪ পৌরসভায় ভোট হবে। ইতোমধ্যে ১৩ হাজারেরও বেশি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে প্রার্থীরা। ১৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হবে। এরপরই প্রতীক নিয়ে প্রচারে নামবেন প্রার্থীরা। শাহনেওয়াজ বলেন, ইতোমধ্যে অনেক সাংসদ প্রচারে নামার চেষ্টা করছেন বলে ইসি খবর পাচ্ছে। তবে দলীয়ভাবে এখনো কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসেনি।
তিনি বলেন, ‘আপনারা আইন প্রণেতা, আপনারা আইন ভাঙবেন না। এমন কিছু করবেন না যাতে আমরা অপ্রস্তুত ও বিব্রতকর অবস্থায় পড়ি।’
তিনি বলেন, বিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া আছে। এরপরও ইসিতে কোনো অভিযোগ এলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কোনো কর্মকর্তা বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ইসির নির্দেশনা না মানলে বা মাঠ পর্যায়ে কাজে অবহেলা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান শাহনেওয়াজ।
এক প্রশ্নের জবাবে শাহনেওয়াজ বলেন, ‘কেউ ইচ্ছে করে ভোট থেকে সরে দাঁড়ালে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা সুন্দর নির্বাচন করতে চাই। কেউ যাতে সরে যেতে বাধ্য না হয় সে বিষয়ে সজাগ রয়েছি; সে ব্যবস্থাও নেব। কিন্তু ইচ্ছে করে সরে গেলে করার কিছু থাকবে না।’
পৌর ভোটে কেউ যেন হস্তক্ষেপ না করে সে বিষয়েও সবাইকে সতর্ক করেন এ নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, কেউ যেন ভোটে হস্তক্ষেপ না করেন। স্বপ্রণোদিত হয়ে পুলিশ বা প্রশাসনের কেউ যেন বাড়াবাড়ি বা নাক না গলায়। গত সিটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে অন্য কেউ যেন হস্তক্ষেপ না করে সে ব্যবস্থা নিয়েছি।