Menu |||

বাকযন্ত্রের পরিমিত ব্যবহার ও আমাদের অসতর্কতা

ইসলামে মালিক-শ্রমিকের পারস্পরিক অধিকারও কর্তব্য :একটি পর্যালোচনা

ধর্মীয় দর্শন ডেস্ক: যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাসী, তার উচিত উত্তম কথা বলা অথবা নীরব থাকা। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৯৯৪)। বিশিষ্ট সাহাবী হযরত মুআজ ইবনে জাবাল রা. একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বললেন, আমাকে এমন একটি আমলের (পুণ্যকর্ম) কথা বলুন, যা আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আমি রক্ষা পেতে পারব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি বাস্তবিক পক্ষেই একটি গভীর বিষয়ে জানতে চেয়েছো। কিন্তু এটা তার পক্ষে সহজ, আল্লাহ পাক যার জন্য সহজ করে দেন। আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে কোনো অংশিস্থাপন করো না। নিয়মিত সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর, রমযানের রোযা রাখ এবং হজ্ব পালন কর।তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন আমি কি তোমাকে পুণ্যের দরজাসমূহের কথা বলব না? রোযা হল ঢাল বা বর্ম (পাপ ও দোযখের আগুন প্রতিহত করার ক্ষেত্রে), দান-সদকা পাপকে নিভিয়ে দেয়, যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয় এবং গভীর রাত্রির নামায (নফল তাহাজ্জুদের নামায)।

তারপর তিনি এই আয়াত পাঠ করলেন – তারা নিঃশব্দে বিছানা ত্যাগ করে, তারা (নিশুতি রাতে আযাবের) ভয়ে এবং (জান্নাতের) আশায় তাদের মালিককে ডাকে এবং আমি তাদেরকে যা কিছু দান করেছি তা থেকে তারা (আমারই পথে) ব্যয় করে । (সূরা আস সাজদাহ ৩২ : ১৬)। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি কি তোমাকে মূল বিষয়, সে বিষয়ের ভিত্তি এবং এর শীর্ষচূড়া সম্পর্কে কিছু বলব না? মূল বিষয় হল, ইসলাম গ্রহণ, প্রধান ভিত্তি হল সালাত এবং সর্বোচ্চ শীর্ষদেশ হল জিহাদ। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি কি বলব, এই সব কিছু কোন্ বস্তুর ওপর নির্ভরশীল? তারপর তিনি জিহ্বার দিকে নির্দেশ করে বললেন, জিহ্বাকে সংযত রাখো। হযরত মুআয ইবনে জাবাল জানতে চাইলেন, আমাদের কথাবার্তার কারণেও কি আমদেরকে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে? এই কথার উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অধিকাংশ মানুষকে তার মুখ নিম্নমুখী করে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে তাদের মুখনিঃসৃত পাপের কারনে। (জামে তিরমিযী, হাদীস ২৫৪১)।

কথা বলা এবং নিজেকে প্রকাশ করার ক্ষমতাই মানুষকে পশুদের থেকে আলাদা করেছে। এই নিয়ামতের সঠিক ব্যবহার অথবা তার ব্যতিক্রমের উপরই নির্ভর করে, কে উত্তম ও সফল আর কে নিকৃষ্ট ও ব্যর্থকাম। হযরত মুআয রা.-এর প্রশ্ন ছিল অনন্তকালীন আখেরাতের সাফল্য সম্পর্কে। জবাবস্বরূপ, হাদীসে মানুষের সামগ্রিক জীবনের ফরয ও নফল (অপরিহার্য ও অতিরিক্ত) আমলসমূহের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু সেই সঙ্গে আমাদেরকে একথাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, যা ফলাফল তা সবই নির্ভর করে আমাদের জিহবাকে সংযত রাখার উপর। অন্যভাবে বলা যায়, অসতর্ক কথাবার্তা আমাদের সমস্ত নেক আমলকে বরবাদ করে দিতে পারে। এই একই বিষয় অপর একটি হাদীসে একটু অন্যভাবে বর্ণিত হয়েছে। প্রত্যেক দিন ভোরে আদমসন্তান যখন জাগ্রত হয়, শরীরের সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তার জিহ্বাকে বলতে থাকে, আমাদের খাতিরে আল্লাহকে ভয় কর, কারণ আমাদের নিয়তি তোমার সঙ্গে বাঁধা। তুমি যদি সোজাভাবে চল, আমরাও চলব, আর তুমি যদি ধ্বংস হয়ে যাও, আমাদেরও একই পরিণতি হবে। (জামে তিরমিযী, হাদীস ২৩৩১)।

এরপরও অন্য একটি হাদীস আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, আমাদের কথা ও ভাষা-ব্যবহারের পরিণতি কত বহুদূরগামী হতে পারে। কোনো সময় কোনো একজন ব্যক্তির কথা সুমহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় হল, কিন্তু সে উপলব্ধি করতে পারে না যে, তার কথা কত দূরে গিয়ে পৌঁছবে। (না বুঝুক) তথাপিও এই কথা তার জন্য বিচার দিবস পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ হবে। অপর দিকে কোনো ব্যক্তি কোনো সময় এমন কথা বলল, যা মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয়, যদিও সে বোঝে না, তার কথা কত দূর গিয়ে পৌঁছবে। (না বুঝুক) তথাপিও তার কথা বিচার দিবস পর্যন্ত আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ হয়েই বিরাজ করবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১৫২৯১)।

ইসলামপূর্ব আরবসমাজ ছিল খুবই বাকনিপুণ সমাজ। যদিও লিখতে পড়তে জানে এমন লোকের সংখ্যা ছিল নগণ্য, কিন্তু মানুষ তাদের গদ্য ও পদ্যের ভাষা ও শব্দ নিয়ে খুবই গর্ব অনুভব করত। কোনো ব্যক্তি শুধু তার শব্দ-ব্যবহারের দক্ষতার কারণেই সামাজিক সম্মান ও প্রতিপত্তি লাভ করত। শুধু শব্দ ও ভাষা ব্যবহারের শক্তি ও পারঙ্গমতার জন্যই একজন ব্যক্তি প্রভূত খ্যাতি অর্জন করতে পারত, যুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারত এবং জীবনকে এমন দৃঢ়ভাবে বেঁধে ফেলতে পারত। যা বর্তমান সময়ে অনেকখানি বড় প্রেক্ষাপটে আধুনিক প্রচারমাধ্যম যেমন পারে। কিন্তু বর্তমানে যেমন তখনো সেই শক্তি ছিল নিতান্তই অপরিপক্ব স্থলশক্তি, যা অনেকটা বন্যজন্তুর বাহ্যিক শক্তির সঙ্গে তুলনীয়।

ইসলাম এই বন্যশক্তিকে পোষ মানিয়ে নিল। স্মরণ রাখা আবশ্যক যে, আমাদের প্রতিটি কথাবার্তা ফেরেশতাদের দ্বারা রেকর্ড বা বাণীবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে এবং একদিন এই রেকর্ডকৃত কথাবার্তা নিয়ে জবাবদিহিতার জন্য অবশ্যই দণ্ডায়মান হতে হবে। অতএব আমাদের এ বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করা প্রয়োজন যে, কোনো মানুষের মহত্ত্ব বাকশক্তি ও ভাষা ব্যবহারের উপর নির্ভর করে না। এটা নির্ভর করে কোনো ব্যক্তি ভাষা ব্যবহারে কতটা সাবধান ও সতর্ক, তারই উপর এবং আমাদের এটাও মনে রাখা সমীচীন যে, খারাপ কিছু বলা অপেক্ষা নীরব থাকা উত্তম আর একেবারে নিশ্চুপ থাকার পরিবর্তে ভালো কিছু বলা উত্তম।

বস্তুতই, ইসলামের স্পর্শে যে নতুন এক সমাজ বিপ্লবের উদ্ভব ঘটল, তা ছিল অভাবনীয়। এমন সব মানুষ তৈরী হল, যারা কথার কী মূল্য সেটা যথার্থভাবে বুঝতে শিখল এবং এই মূল্যবোধের কারণে তারা হয়ে উঠল যুগপৎ ধর্মপরায়ণ, নির্ভীক ও ক্ষমতাধর। তাদের নীরবতা হয়ে উঠল নীরবতার এক শান্ত নিঃশব্দ হৃদয়স্পর্শী প্রতিফলন এবং তারা তখনই কথা বলত, যখন নীরবতার মূল্যমানকে বাড়িয়ে তোলা সম্ভব। এজন্যই এর মধ্যে বিস্ময়ের কিছু নেই যে, নীরবতা ভঙ্গ করে তারা যখন কোনোরকম প্রস্তুতি ছাড়াই কোনো কথা বলতেন, সেই কথা হয়ে উঠত জ্ঞান ও প্রজ্ঞার এক একটি মুক্তা-মাণিক্য।

অতএব,বাকযন্ত্রের সঠিক ও যথাযথ প্রয়োগে আমাদের খুব খুব সতর্ক ও সচেতন হওয়া জরুরী।আল্লাহ পাকের দেয়া এই অমূল্য নেয়ামত আমাদের জাহান্নমে যাবার কারণ হয়ে যেন না দাড়ায়। রাব্বে কারীম আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন। আমীন!!!

লেখকঃ
মোস্তফা কবীর সিদ্দিকী
সিনিয়র লেকচারার , ইসলামিক স্টাডিজ ডিপার্টমেন্ট,
সাউথইস্ট ইউনির্ভাসিটি।
ইমেইলঃ mostafakabir_seu@yahoo.com

অগ্রদৃষ্টি.কম // এমএসআই

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» কুয়েতে মুরাদুল হক চৌধুরীকে সম্মাননা

» তাপপ্রবাহ: প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা

» মালয়েশিয়ায় ই-পাসপোর্ট সেবা উদ্বোধন

» কুয়েতে সংবর্ধিত হলেন মুরাদুল হক চৌধুরী

» সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঝড়বৃষ্টিতে মৃত বেড়ে ৪

» তাপদাহ: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধের নির্দেশ

» কুয়েতে প্রবাসী নারীদের সংগঠন উদযাপন করেছে পহেলা বৈশাখ

» কুয়েত বাংলাদেশ কমিউনিটির ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত

» কুয়েতে বাংলাদেশ ভবনে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে প্রবাসীদের শুভেচ্ছা বিনিময়

» মালয়েশিয়ার মিনি ঢাকায় ‘রেস্টুরেন্ট মনির ভাই’ উদ্বোধন

Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
,

বাকযন্ত্রের পরিমিত ব্যবহার ও আমাদের অসতর্কতা

ইসলামে মালিক-শ্রমিকের পারস্পরিক অধিকারও কর্তব্য :একটি পর্যালোচনা

ধর্মীয় দর্শন ডেস্ক: যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাসী, তার উচিত উত্তম কথা বলা অথবা নীরব থাকা। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৯৯৪)। বিশিষ্ট সাহাবী হযরত মুআজ ইবনে জাবাল রা. একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বললেন, আমাকে এমন একটি আমলের (পুণ্যকর্ম) কথা বলুন, যা আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আমি রক্ষা পেতে পারব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি বাস্তবিক পক্ষেই একটি গভীর বিষয়ে জানতে চেয়েছো। কিন্তু এটা তার পক্ষে সহজ, আল্লাহ পাক যার জন্য সহজ করে দেন। আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে কোনো অংশিস্থাপন করো না। নিয়মিত সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর, রমযানের রোযা রাখ এবং হজ্ব পালন কর।তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন আমি কি তোমাকে পুণ্যের দরজাসমূহের কথা বলব না? রোযা হল ঢাল বা বর্ম (পাপ ও দোযখের আগুন প্রতিহত করার ক্ষেত্রে), দান-সদকা পাপকে নিভিয়ে দেয়, যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয় এবং গভীর রাত্রির নামায (নফল তাহাজ্জুদের নামায)।

তারপর তিনি এই আয়াত পাঠ করলেন – তারা নিঃশব্দে বিছানা ত্যাগ করে, তারা (নিশুতি রাতে আযাবের) ভয়ে এবং (জান্নাতের) আশায় তাদের মালিককে ডাকে এবং আমি তাদেরকে যা কিছু দান করেছি তা থেকে তারা (আমারই পথে) ব্যয় করে । (সূরা আস সাজদাহ ৩২ : ১৬)। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি কি তোমাকে মূল বিষয়, সে বিষয়ের ভিত্তি এবং এর শীর্ষচূড়া সম্পর্কে কিছু বলব না? মূল বিষয় হল, ইসলাম গ্রহণ, প্রধান ভিত্তি হল সালাত এবং সর্বোচ্চ শীর্ষদেশ হল জিহাদ। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি কি বলব, এই সব কিছু কোন্ বস্তুর ওপর নির্ভরশীল? তারপর তিনি জিহ্বার দিকে নির্দেশ করে বললেন, জিহ্বাকে সংযত রাখো। হযরত মুআয ইবনে জাবাল জানতে চাইলেন, আমাদের কথাবার্তার কারণেও কি আমদেরকে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে? এই কথার উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অধিকাংশ মানুষকে তার মুখ নিম্নমুখী করে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে তাদের মুখনিঃসৃত পাপের কারনে। (জামে তিরমিযী, হাদীস ২৫৪১)।

কথা বলা এবং নিজেকে প্রকাশ করার ক্ষমতাই মানুষকে পশুদের থেকে আলাদা করেছে। এই নিয়ামতের সঠিক ব্যবহার অথবা তার ব্যতিক্রমের উপরই নির্ভর করে, কে উত্তম ও সফল আর কে নিকৃষ্ট ও ব্যর্থকাম। হযরত মুআয রা.-এর প্রশ্ন ছিল অনন্তকালীন আখেরাতের সাফল্য সম্পর্কে। জবাবস্বরূপ, হাদীসে মানুষের সামগ্রিক জীবনের ফরয ও নফল (অপরিহার্য ও অতিরিক্ত) আমলসমূহের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু সেই সঙ্গে আমাদেরকে একথাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, যা ফলাফল তা সবই নির্ভর করে আমাদের জিহবাকে সংযত রাখার উপর। অন্যভাবে বলা যায়, অসতর্ক কথাবার্তা আমাদের সমস্ত নেক আমলকে বরবাদ করে দিতে পারে। এই একই বিষয় অপর একটি হাদীসে একটু অন্যভাবে বর্ণিত হয়েছে। প্রত্যেক দিন ভোরে আদমসন্তান যখন জাগ্রত হয়, শরীরের সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তার জিহ্বাকে বলতে থাকে, আমাদের খাতিরে আল্লাহকে ভয় কর, কারণ আমাদের নিয়তি তোমার সঙ্গে বাঁধা। তুমি যদি সোজাভাবে চল, আমরাও চলব, আর তুমি যদি ধ্বংস হয়ে যাও, আমাদেরও একই পরিণতি হবে। (জামে তিরমিযী, হাদীস ২৩৩১)।

এরপরও অন্য একটি হাদীস আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, আমাদের কথা ও ভাষা-ব্যবহারের পরিণতি কত বহুদূরগামী হতে পারে। কোনো সময় কোনো একজন ব্যক্তির কথা সুমহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় হল, কিন্তু সে উপলব্ধি করতে পারে না যে, তার কথা কত দূরে গিয়ে পৌঁছবে। (না বুঝুক) তথাপিও এই কথা তার জন্য বিচার দিবস পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ হবে। অপর দিকে কোনো ব্যক্তি কোনো সময় এমন কথা বলল, যা মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয়, যদিও সে বোঝে না, তার কথা কত দূর গিয়ে পৌঁছবে। (না বুঝুক) তথাপিও তার কথা বিচার দিবস পর্যন্ত আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ হয়েই বিরাজ করবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১৫২৯১)।

ইসলামপূর্ব আরবসমাজ ছিল খুবই বাকনিপুণ সমাজ। যদিও লিখতে পড়তে জানে এমন লোকের সংখ্যা ছিল নগণ্য, কিন্তু মানুষ তাদের গদ্য ও পদ্যের ভাষা ও শব্দ নিয়ে খুবই গর্ব অনুভব করত। কোনো ব্যক্তি শুধু তার শব্দ-ব্যবহারের দক্ষতার কারণেই সামাজিক সম্মান ও প্রতিপত্তি লাভ করত। শুধু শব্দ ও ভাষা ব্যবহারের শক্তি ও পারঙ্গমতার জন্যই একজন ব্যক্তি প্রভূত খ্যাতি অর্জন করতে পারত, যুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারত এবং জীবনকে এমন দৃঢ়ভাবে বেঁধে ফেলতে পারত। যা বর্তমান সময়ে অনেকখানি বড় প্রেক্ষাপটে আধুনিক প্রচারমাধ্যম যেমন পারে। কিন্তু বর্তমানে যেমন তখনো সেই শক্তি ছিল নিতান্তই অপরিপক্ব স্থলশক্তি, যা অনেকটা বন্যজন্তুর বাহ্যিক শক্তির সঙ্গে তুলনীয়।

ইসলাম এই বন্যশক্তিকে পোষ মানিয়ে নিল। স্মরণ রাখা আবশ্যক যে, আমাদের প্রতিটি কথাবার্তা ফেরেশতাদের দ্বারা রেকর্ড বা বাণীবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে এবং একদিন এই রেকর্ডকৃত কথাবার্তা নিয়ে জবাবদিহিতার জন্য অবশ্যই দণ্ডায়মান হতে হবে। অতএব আমাদের এ বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করা প্রয়োজন যে, কোনো মানুষের মহত্ত্ব বাকশক্তি ও ভাষা ব্যবহারের উপর নির্ভর করে না। এটা নির্ভর করে কোনো ব্যক্তি ভাষা ব্যবহারে কতটা সাবধান ও সতর্ক, তারই উপর এবং আমাদের এটাও মনে রাখা সমীচীন যে, খারাপ কিছু বলা অপেক্ষা নীরব থাকা উত্তম আর একেবারে নিশ্চুপ থাকার পরিবর্তে ভালো কিছু বলা উত্তম।

বস্তুতই, ইসলামের স্পর্শে যে নতুন এক সমাজ বিপ্লবের উদ্ভব ঘটল, তা ছিল অভাবনীয়। এমন সব মানুষ তৈরী হল, যারা কথার কী মূল্য সেটা যথার্থভাবে বুঝতে শিখল এবং এই মূল্যবোধের কারণে তারা হয়ে উঠল যুগপৎ ধর্মপরায়ণ, নির্ভীক ও ক্ষমতাধর। তাদের নীরবতা হয়ে উঠল নীরবতার এক শান্ত নিঃশব্দ হৃদয়স্পর্শী প্রতিফলন এবং তারা তখনই কথা বলত, যখন নীরবতার মূল্যমানকে বাড়িয়ে তোলা সম্ভব। এজন্যই এর মধ্যে বিস্ময়ের কিছু নেই যে, নীরবতা ভঙ্গ করে তারা যখন কোনোরকম প্রস্তুতি ছাড়াই কোনো কথা বলতেন, সেই কথা হয়ে উঠত জ্ঞান ও প্রজ্ঞার এক একটি মুক্তা-মাণিক্য।

অতএব,বাকযন্ত্রের সঠিক ও যথাযথ প্রয়োগে আমাদের খুব খুব সতর্ক ও সচেতন হওয়া জরুরী।আল্লাহ পাকের দেয়া এই অমূল্য নেয়ামত আমাদের জাহান্নমে যাবার কারণ হয়ে যেন না দাড়ায়। রাব্বে কারীম আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন। আমীন!!!

লেখকঃ
মোস্তফা কবীর সিদ্দিকী
সিনিয়র লেকচারার , ইসলামিক স্টাডিজ ডিপার্টমেন্ট,
সাউথইস্ট ইউনির্ভাসিটি।
ইমেইলঃ mostafakabir_seu@yahoo.com

অগ্রদৃষ্টি.কম // এমএসআই

Facebook Comments Box


এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



আজকের দিন-তারিখ

  • বৃহস্পতিবার (সকাল ৬:৪৫)
  • ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)

Exchange Rate

Exchange Rate EUR: বৃহঃ, ২৫ এপ্রি.

সর্বশেষ খবর



Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Bangladesh Office

Director. Rumi Begum
Adviser. Advocate Koyes Ahmed
Desk Editor (Dhaka) Saiyedul Islam
44, Probal Housing (4th floor), Ring Road, Mohammadpur,
Dhaka-1207. Bangladesh
Contact: +8801733966556 / +8801920733632

Email Address

agrodristi@gmail.com, agrodristitv@gmail.com

Licence No.

MC- 00158/07      MC- 00032/13

Design & Devaloped BY Popular-IT.Com
error: দুঃখিত! অনুলিপি অনুমোদিত নয়।