Menu |||

গুরুত্বপূর্ণ কিছু সহজ আমল এবং আমাদের সীমাহীন গাফলতী

ইসলামে মালিক-শ্রমিকের পারস্পরিক অধিকারও কর্তব্য :একটি পর্যালোচনা

ধর্মীয় দর্শন ডেস্কঃ কিছু কিছু আমল এমন আছে, যা আদায় করা খুব সহজ, কিন্তু খেয়াল না করার কারণে ঐসব আমলের ফযীলত থেকে আমরা বঞ্চিত হই। যেমন আযানের উত্তর দেওয়া। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। হাদীস শরীফে এর অনেক বড় ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। অথচ আমরা যখন একসাথে বসে গল্প-গুজব শুরু করি তখন হাসাহাসির মাঝে কখন যে আযান হয়ে যায় সেদিকে খেয়ালও থাকে না। অথচ দেখুন হাদীস শরীফে কতবড় ফযীলত বর্ণিত হয়েছে।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইরশাদ করতে শুনেছেন, যখন মুয়াজ্জিনের আওয়াজ শোন তখন মুয়াজ্জিন যেরূপ বলে তোমরাও সেরূপ বল, অতপর আমার প্রতি দুরূদ পড়। যে আমার প্রতি একবার দুরূদ পড়ে আল্লাহ তাআলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করেন। এরপর আমার জন্য আল্লাহর নিকট ‘উসীলা’র দোআ কর। ‘উসীলা’ জান্নাতের একটি বিশেষ মর্যাদা, যা আল্লাহর বান্দাদের মাঝে শুধু একজনকেই দেওয়া হবে। আমি আশা করি, সেই বান্দা আমিই হব। যে ব্যক্তি আমার জন্য ‘উসীলা’র দোআ করবে সে আমার শাফায়াতের হকদার হবে।(সহীহ মুসলিম)

অন্য হাদীসে আছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেন, এক ব্যক্তি আরয করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! মুয়াজ্জিনগণতো আজর ও সওয়াবের হিসেবে আমাদের চেয়ে অগ্রগামী হয়েছেন (এমন কোন আমল আছে কি যার দ্বারা আমরাও মুয়াজ্জিনের মতো ফযীলত হাসিল করতে পারি?) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, তোমরাও ঐ বাক্যগুলো বল যেগুলো মুয়াজ্জিন বলে, এরপর আযানের জওয়াব শেষ করে দুআ কর। তোমার দুআ কবুল করা হবে। (আবু দাউদ)

দ্বিতীয় আরেকটি আমল মিসওয়াক করা। আমাদের আশেপাশে কিছু পরিবার আছে যারা এই সুন্নতের উপর আমল করেন। মিসওয়াক সম্পর্কে অনেক হাদীস আছে এবং এতে দুনিয়া ও আখেরাতের অনেক ফায়দা আছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর হবে এই আশঙ্কা না হলে আমি তাদেরকে প্রত্যেক নামাযের সময় মিসওয়াক করার আদেশ দিতাম (অর্থাৎ মিসওয়াক করা অপরিহার্য করে দিতাম)। (সহীহ মুসলিম) হযরত আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, জিবরাঈল আ. যখনই আমার নিকট আসতেন,আমাকে মিসওয়াকের তাকীদ করতেন। এমনকি আমার আশঙ্কা হতে লাগল যে, অত্যধিক মিসওয়াকের কারণে আমি নিজের মাড়ি না ছিলে ফেলি। (মুসনাদে আহমাদ)

আরেক হাদীসে আছে, বান্দা যখন মিসওয়াক করে নামাযের জন্য দাঁড়ায় তখন ফেরেশতা তার পিছনে দাঁড়িয়ে যান এবং মনোযোগের সাথে তার তিলাওয়াত শুনতে থাকেন। এরপর তার অত্যন্ত নিকটবর্তী হন এমনকি তার মুখের উপর নিজের মুখ রাখেন। ফলে কুরআনে পাকের শব্দ নামাজীর ভিতর থেকে বের হয়ে সোজা ফেরেশতার পেটের ভিতর চলে যায় এবং এইভাবে সে ফেরেশতাদের নিকট প্রিয় হয়ে যায়। অতএব কুরআনে কারীমের তিলাওয়াতের জন্য নিজেদের মুখ পরিষ্কার রাখ, অর্থাৎ মিসওয়াকের ইহতেমাম কর। (বাযযার-মাজমাউয যাওয়াইদ)

হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মিসওয়াক করে দুই রাকাত মিসওয়াক ব্যতীত সত্তর রাকাত হতে উত্তম। (বাযযার, মাজমা) আরো বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। নমূনা স্বরূপ কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করলাম। চিন্তাশীলদের জন্য একটি হাদীসই যথেষ্ট। এ রকম আরেকটি সহজ আমল কুরআনে কারীমের তিলাওয়াত। আমাদের অনেকেরই নিয়মিত তিলাওয়াত হয় না। এক্ষেত্রে সাংসারিক ঝামেলার কথা বলা হয়ে থাকে। কিন্তু এই ব্যস্ততার মাঝেও যদি আমরা নিয়মিত তিলাওয়াত করে যেতে পারি তাহলে আমাদের সওয়াবও হবে বহুগুণ বেশী।

হযরত আবু মুসা আশআরী রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে মুমিন কুরআন শরীফ পাঠ করে তার উদাহরণ যেন কমলা লেবু, যা খুশবুদার এবং সুস্বাদু। আর যে মুমিন কুরআন পাঠ করে না তার উদাহরণ যেন খেজুর, যার খুশবু নেই তবে স্বাদ মিষ্টি। আর যে মুনাফিক কুরআন পাঠ করে তার উদাহরণ যেন সুগন্ধি ফুল যাতে সুঘ্রাণ আছে তবে স্বাদ তিক্ত। আর যে মুনাফিক কুরআন পাঠ করে না তার উদাহরণ যেন মাকাল ফল, যাতে ঘ্রাণও নেই স্বাদও তিক্ত। (সহীহ মুসলিম)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে সে একটি নেকী পাবে, আর একটি নেকীর বিনিময়ে দশটি নেকী দান করা হবে। আমি বলি না যে, ‘আলিফ-লাম-মীম এক হরফ, বরং আলিফ এক হরফ, লাম এক হরফ এবং মীম এক হরফ। (জামে তিরমিযী)

কুরআনে কারীমের তিলাওয়াতের ব্যাপারে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে, যার ফযীলত এবং আজর অন্য সব আমল থেকে অনেক বেশি। কুরআন তো আমাদের মাহবুবের কালাম, রাববুল আলামীনের কথা। মানুষ তার প্রিয়জনের চিঠি কত মনোযোগ সহকারে পড়ে। প্রতিটি অক্ষরে কী গভীর স্বাদই না অনুভব করে। তাহলে মহামান্য রাববুল আলামীনের কালাম কতই না আগ্রহ ও ভালোবাসার সাথে পাঠ করা উচিত। বুজুর্গানে দ্বীনের ঘটনাবলী পাঠ করলে জানা যায়, তারা কত বেশি তিলাওয়াত করতেন। কিন্তু আমরা দুনিয়া নিয়ে এতই ব্যস্ত হয়ে গেছি যে, প্রতিদিন অল্প অল্প তিলাওয়াত করতেও ভুলে যাই।

আরেকটি ভুল আমরা করি, যা সত্যিই পরিতাপের সাথে বলতে হয়, তা হচ্ছে নামাযে গাফলতি। পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ি ঠিক, কিন্তু আউয়াল ওয়াক্তের দিকে খেয়াল করি না। অনেক পরিবারে দেখা যায়, দুপুরের রান্নাবান্না শুরু হয় যোহরের আযানের সময়। রান্না শেষ হতে প্রায় তিনটা বেজে যায়। অনেক সময় তো আসরের ওয়াক্তের কাছাকাছি হয়ে যায়। কাজের সময় পরিবর্তনের মাধ্যমে এই উদাসীনতা দূর করা সম্ভব।

নামাযের খুশু-খুযুর প্রতিও খেয়াল রাখা চাই। হযরত আবু কাতাদাহ রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নিকৃষ্ট চোর ঐ ব্যক্তি, যে নামাযের মধ্য হতে চুরি করে। সাহাবা রা. আরয করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! নামাযে কীভাবে চুরি করে? ইরশাদ করলেন, রুকু সেজদা উত্তমরূপে আদায় করে না। তো এভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে, প্রতিদিন আমাদের কত আমলের সুযোগ আছে, কিন্তু অবহেলা করে ছেড়ে দিচ্ছি। যেগুলো আদায় করছি, চিন্তা করা উচিত, কতটুকু যত্নের সাথে আদায় করছি।

আল্লাহ পাক আমাদেরকে সঠিকভাবে ও ইখলাসের সাথে আমল করার তাওফীক দান করুন।

লেখকঃ
মোস্তফা কবীর সিদ্দিকী
সিনিয়র লেকচারার , ইসলামিক স্টাডিজ ডিপার্টমেন্ট,
সাউথইস্ট ইউনির্ভাসিটি।
ইমেইলঃ mostafakabir_seu@yahoo.com

অগ্রদৃষ্টি.কম // এমএসআই

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» কুয়েত বিএনপির আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

» কুয়েত প্রবাসী কমিউনিটি নেতা মো: আজাদুর রহমান আর নেই

» মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে অর্থ ও পরিকল্পনা উপ-কমিটির শ্রদ্ধা জ্ঞাপন

» কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসে গণহত্যা দিবস পালিত

» জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন কুয়েতের ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

» বাংলাদেশ ফুটবল এসোসিয়েশন কুয়েতের নতুন কমিটি, সভাপতি মোরশেদ-সাধারণ সম্পাদক কোরবান

» প্রবাসী স্বজন ফাউন্ডেশনের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

» মৌলভীবাজারে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ

» মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২৭ জনে

» পান খাওয়া মানুষদের দেশে দেয়ালের রঙ লাগেনা

Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
,

গুরুত্বপূর্ণ কিছু সহজ আমল এবং আমাদের সীমাহীন গাফলতী

ইসলামে মালিক-শ্রমিকের পারস্পরিক অধিকারও কর্তব্য :একটি পর্যালোচনা

ধর্মীয় দর্শন ডেস্কঃ কিছু কিছু আমল এমন আছে, যা আদায় করা খুব সহজ, কিন্তু খেয়াল না করার কারণে ঐসব আমলের ফযীলত থেকে আমরা বঞ্চিত হই। যেমন আযানের উত্তর দেওয়া। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। হাদীস শরীফে এর অনেক বড় ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। অথচ আমরা যখন একসাথে বসে গল্প-গুজব শুরু করি তখন হাসাহাসির মাঝে কখন যে আযান হয়ে যায় সেদিকে খেয়ালও থাকে না। অথচ দেখুন হাদীস শরীফে কতবড় ফযীলত বর্ণিত হয়েছে।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইরশাদ করতে শুনেছেন, যখন মুয়াজ্জিনের আওয়াজ শোন তখন মুয়াজ্জিন যেরূপ বলে তোমরাও সেরূপ বল, অতপর আমার প্রতি দুরূদ পড়। যে আমার প্রতি একবার দুরূদ পড়ে আল্লাহ তাআলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করেন। এরপর আমার জন্য আল্লাহর নিকট ‘উসীলা’র দোআ কর। ‘উসীলা’ জান্নাতের একটি বিশেষ মর্যাদা, যা আল্লাহর বান্দাদের মাঝে শুধু একজনকেই দেওয়া হবে। আমি আশা করি, সেই বান্দা আমিই হব। যে ব্যক্তি আমার জন্য ‘উসীলা’র দোআ করবে সে আমার শাফায়াতের হকদার হবে।(সহীহ মুসলিম)

অন্য হাদীসে আছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেন, এক ব্যক্তি আরয করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! মুয়াজ্জিনগণতো আজর ও সওয়াবের হিসেবে আমাদের চেয়ে অগ্রগামী হয়েছেন (এমন কোন আমল আছে কি যার দ্বারা আমরাও মুয়াজ্জিনের মতো ফযীলত হাসিল করতে পারি?) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, তোমরাও ঐ বাক্যগুলো বল যেগুলো মুয়াজ্জিন বলে, এরপর আযানের জওয়াব শেষ করে দুআ কর। তোমার দুআ কবুল করা হবে। (আবু দাউদ)

দ্বিতীয় আরেকটি আমল মিসওয়াক করা। আমাদের আশেপাশে কিছু পরিবার আছে যারা এই সুন্নতের উপর আমল করেন। মিসওয়াক সম্পর্কে অনেক হাদীস আছে এবং এতে দুনিয়া ও আখেরাতের অনেক ফায়দা আছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর হবে এই আশঙ্কা না হলে আমি তাদেরকে প্রত্যেক নামাযের সময় মিসওয়াক করার আদেশ দিতাম (অর্থাৎ মিসওয়াক করা অপরিহার্য করে দিতাম)। (সহীহ মুসলিম) হযরত আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, জিবরাঈল আ. যখনই আমার নিকট আসতেন,আমাকে মিসওয়াকের তাকীদ করতেন। এমনকি আমার আশঙ্কা হতে লাগল যে, অত্যধিক মিসওয়াকের কারণে আমি নিজের মাড়ি না ছিলে ফেলি। (মুসনাদে আহমাদ)

আরেক হাদীসে আছে, বান্দা যখন মিসওয়াক করে নামাযের জন্য দাঁড়ায় তখন ফেরেশতা তার পিছনে দাঁড়িয়ে যান এবং মনোযোগের সাথে তার তিলাওয়াত শুনতে থাকেন। এরপর তার অত্যন্ত নিকটবর্তী হন এমনকি তার মুখের উপর নিজের মুখ রাখেন। ফলে কুরআনে পাকের শব্দ নামাজীর ভিতর থেকে বের হয়ে সোজা ফেরেশতার পেটের ভিতর চলে যায় এবং এইভাবে সে ফেরেশতাদের নিকট প্রিয় হয়ে যায়। অতএব কুরআনে কারীমের তিলাওয়াতের জন্য নিজেদের মুখ পরিষ্কার রাখ, অর্থাৎ মিসওয়াকের ইহতেমাম কর। (বাযযার-মাজমাউয যাওয়াইদ)

হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মিসওয়াক করে দুই রাকাত মিসওয়াক ব্যতীত সত্তর রাকাত হতে উত্তম। (বাযযার, মাজমা) আরো বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। নমূনা স্বরূপ কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করলাম। চিন্তাশীলদের জন্য একটি হাদীসই যথেষ্ট। এ রকম আরেকটি সহজ আমল কুরআনে কারীমের তিলাওয়াত। আমাদের অনেকেরই নিয়মিত তিলাওয়াত হয় না। এক্ষেত্রে সাংসারিক ঝামেলার কথা বলা হয়ে থাকে। কিন্তু এই ব্যস্ততার মাঝেও যদি আমরা নিয়মিত তিলাওয়াত করে যেতে পারি তাহলে আমাদের সওয়াবও হবে বহুগুণ বেশী।

হযরত আবু মুসা আশআরী রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে মুমিন কুরআন শরীফ পাঠ করে তার উদাহরণ যেন কমলা লেবু, যা খুশবুদার এবং সুস্বাদু। আর যে মুমিন কুরআন পাঠ করে না তার উদাহরণ যেন খেজুর, যার খুশবু নেই তবে স্বাদ মিষ্টি। আর যে মুনাফিক কুরআন পাঠ করে তার উদাহরণ যেন সুগন্ধি ফুল যাতে সুঘ্রাণ আছে তবে স্বাদ তিক্ত। আর যে মুনাফিক কুরআন পাঠ করে না তার উদাহরণ যেন মাকাল ফল, যাতে ঘ্রাণও নেই স্বাদও তিক্ত। (সহীহ মুসলিম)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে সে একটি নেকী পাবে, আর একটি নেকীর বিনিময়ে দশটি নেকী দান করা হবে। আমি বলি না যে, ‘আলিফ-লাম-মীম এক হরফ, বরং আলিফ এক হরফ, লাম এক হরফ এবং মীম এক হরফ। (জামে তিরমিযী)

কুরআনে কারীমের তিলাওয়াতের ব্যাপারে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে, যার ফযীলত এবং আজর অন্য সব আমল থেকে অনেক বেশি। কুরআন তো আমাদের মাহবুবের কালাম, রাববুল আলামীনের কথা। মানুষ তার প্রিয়জনের চিঠি কত মনোযোগ সহকারে পড়ে। প্রতিটি অক্ষরে কী গভীর স্বাদই না অনুভব করে। তাহলে মহামান্য রাববুল আলামীনের কালাম কতই না আগ্রহ ও ভালোবাসার সাথে পাঠ করা উচিত। বুজুর্গানে দ্বীনের ঘটনাবলী পাঠ করলে জানা যায়, তারা কত বেশি তিলাওয়াত করতেন। কিন্তু আমরা দুনিয়া নিয়ে এতই ব্যস্ত হয়ে গেছি যে, প্রতিদিন অল্প অল্প তিলাওয়াত করতেও ভুলে যাই।

আরেকটি ভুল আমরা করি, যা সত্যিই পরিতাপের সাথে বলতে হয়, তা হচ্ছে নামাযে গাফলতি। পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ি ঠিক, কিন্তু আউয়াল ওয়াক্তের দিকে খেয়াল করি না। অনেক পরিবারে দেখা যায়, দুপুরের রান্নাবান্না শুরু হয় যোহরের আযানের সময়। রান্না শেষ হতে প্রায় তিনটা বেজে যায়। অনেক সময় তো আসরের ওয়াক্তের কাছাকাছি হয়ে যায়। কাজের সময় পরিবর্তনের মাধ্যমে এই উদাসীনতা দূর করা সম্ভব।

নামাযের খুশু-খুযুর প্রতিও খেয়াল রাখা চাই। হযরত আবু কাতাদাহ রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নিকৃষ্ট চোর ঐ ব্যক্তি, যে নামাযের মধ্য হতে চুরি করে। সাহাবা রা. আরয করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! নামাযে কীভাবে চুরি করে? ইরশাদ করলেন, রুকু সেজদা উত্তমরূপে আদায় করে না। তো এভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে, প্রতিদিন আমাদের কত আমলের সুযোগ আছে, কিন্তু অবহেলা করে ছেড়ে দিচ্ছি। যেগুলো আদায় করছি, চিন্তা করা উচিত, কতটুকু যত্নের সাথে আদায় করছি।

আল্লাহ পাক আমাদেরকে সঠিকভাবে ও ইখলাসের সাথে আমল করার তাওফীক দান করুন।

লেখকঃ
মোস্তফা কবীর সিদ্দিকী
সিনিয়র লেকচারার , ইসলামিক স্টাডিজ ডিপার্টমেন্ট,
সাউথইস্ট ইউনির্ভাসিটি।
ইমেইলঃ mostafakabir_seu@yahoo.com

অগ্রদৃষ্টি.কম // এমএসআই

Facebook Comments Box


এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



আজকের দিন-তারিখ

  • বৃহস্পতিবার (সন্ধ্যা ৬:০৭)
  • ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ (বসন্তকাল)

Exchange Rate

Exchange Rate EUR: বৃহঃ, ২৮ মার্চ.

সর্বশেষ খবর



Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Bangladesh Office

Director. Rumi Begum
Adviser. Advocate Koyes Ahmed
Desk Editor (Dhaka) Saiyedul Islam
44, Probal Housing (4th floor), Ring Road, Mohammadpur,
Dhaka-1207. Bangladesh
Contact: +8801733966556 / +8801920733632

Email Address

agrodristi@gmail.com, agrodristitv@gmail.com

Licence No.

MC- 00158/07      MC- 00032/13

Design & Devaloped BY Popular-IT.Com
error: দুঃখিত! অনুলিপি অনুমোদিত নয়।