বিশেষ প্রতিবেদকঃ কুয়েত প্রবাসী মোহাম্মদ আনহার আহমেদ দীর্ঘ এগারো বছরের পারিশ্রমিক নেননি যার জন্য, দূর প্রবাসী হয়েছেন যার জন্য, পবিত্র ওমরা পালন করেছেন যার জন্য সর্বোপরি অনেক টাকা-পয়সা খরচ করেছেন যাকে ঘিরে, আজ সেই ভালোবাসার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটি সংসার করছে অন্যের ঘরে।
এগারো বছরের ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে আন্হার পেয়েছেন অবর্ণনীয় কষ্ট, যার কিছুটা বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।
কুয়েত প্রবাসী মোহাম্মদ আন্হার আহমেদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মোতাবেক জানা গেছে, কুয়েত প্রবাসী মোহাম্মদ আন্হার আহমেদ বাংলাদেশে থাকা কালীন ওয়েল্ডিং এর কাজ করতেন।
কুয়েত আসার আগ পর্যন্ত একটানা প্রায় এগারো বছর সিলেট জেলার মগলা বাজার উপজেলার উত্তর বীর মঙ্গল গ্রামের হাজী বাবুল মিয়ার একটি ওয়েল্ডিং দোকানে আন্হার কাজ করেছিলেন।
কাজের পারিশ্রমিক আন্হার না নিয়ে অনেকটা নিজের দোকান হিসেবেই বাবুল মিয়ার ওয়েল্ডিং দোকান পরিচালনা করেছেন আন্হার।
তবে স্বার্থ ছাড়া পৃথিবীর কেউই কিছু করেনা একথা যেমন সত্য, ঠিক তেমনি আন্হারও কিন্ত একটি স্বার্থে বাবুল মিয়ার কাছ থেকে পারিশ্রমিক নেননি।
আন্হার জানান, বাবুল মিয়ার ওয়েল্ডিং দোকানে কাজ করা কালীন একটা সময় বাবুল মিয়ার মেয়ের সাথে তার ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
এবং সময় গড়ানোর সাথে সাথে বাবুল মিয়ার মেয়ে ও আন্হারের মধ্যকার ভালোবাসার সম্পর্ক দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হতে থাকে।
এদিকে ২০১৬ সালের নভেম্বরে আন্হার কুয়েতে পাড়ি জমান। অবশ্য কুয়েত আসার আগে আন্হার ও বাবুল মিয়ার মেয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন যে, বছর দুই তিনেক পর আন্হার কুয়েত থেকে ফেরার পর তারা বিয়ে করবেন।
আন্হার কুয়েত আসার পর বাবুল মিয়ার মেয়ে জেনি বেগমের সাথে আন্হারের নিয়মিত টেলিফোনে কথোপকথন হতো।
এবার আন্হার যখন ভেবেছেন দেশে ছুটিতে যাবেন, ঠিক তার আগ মুহূর্তে আন্হার তার মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান বাবুল মিয়ার বাড়িতে।
বাবুল মিয়া প্রস্তাবে বেশ আনন্দিত হয়েই বলেন যে, মেয়ের বিয়ের বয়স এখনো হয়নি এছাড়া মেয়েকে আরো লেখাপড়া করাতে ইচ্ছুক তারা।
তবে ভবিষ্যতে আন্হারের কাছেই মেয়েকে বিয়ে দিবেন বলেই আশ্বস্ত করেন বাবুল মিয়া।
এমতাবস্থায় ২০১৯ সালের ১৮ই জানুয়ারি আন্হার বা তার পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়ে বাবুল মিয়া তার ভগ্নীপুত্রের সাথে মেয়ে জেনি বেগমকে বিয়ে দেন।
এদিকে আন্হার তার প্রেমিকার বিয়ে অন্যের সাথে হয়েছে শুনে মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙ্গে পড়েন।
ফলে সেই দুঃখ আর কষ্টের ছিটেফোঁটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও লেগেছিল আন্হারের বিভিন্ন স্ট্যাটাসে।
আন্হার বলেন, আমার প্রেমিকা জেনিকে পাওয়ার আশায় আমি তার বাবার দোকান পরিচালনা করেছি কিন্ত কোনো ধরনের পারিশ্রমিক নেইনি, উন্নত একটি জীবনের জন্য দূর প্রবাসে এসেছি, অনেক টাকা-পয়সা খরচ করেছি এমনকি গত কয়েক মাস আগে জেনির পরামর্শেই আমি পবিত্র ওমরাহ্ হজ্ব করেছি।
তাহলে কেন জেনির বাবা তাকে অন্যের কাছে বিয়ে দিবেন?
আনহার বলেন, মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর অনুতপ্ত বাবুল মিয়া একাধিকবার ফোনে আন্হারের সঙ্গে আলাপ করে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করেছেন এবং নিজের অপারগতার কথা উল্লেখ করে অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে আন্হার তার প্রেমিকা জেনিকে অন্য ছেলের কাছে বিয়ে দেয়াতে বাবুল মিয়া ও তার নিকটাত্মীয়দের কাছে অভিযোগ করায় বাবুল মিয়া ও তার পরিবার আন্হারকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছেন।
এমতাবস্থায় আন্হার বলেছেন যে, আজকের পর থেকে যদি তার জানমালের কোনো ক্ষতি হয়ে থাকে, তাহলে এর দায়ভার বাবুল মিয়া ও তার পরিবারকে নিতে হবে।