জাকির সিকদার সাভার : শিল্প পুলিশ কনেস্টবল মুকুল হত্যা ও অপর কনেস্টবল নুরে আলমকে কুপিয়ে জখম করার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটককৃত দুই মহিলা সুফিয়া (৪৫), লিপি (৩৯)সহ উদ্ধার কর্মী পরিবহণ শ্রমিক ফারুক হোসেন ও হোটেল মালিক মিন্টু এবং সৈকতকে ১১ দিন পর গতকাল শনিবার ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। আদালত গতকাল শনিবার দুপুরে ৫ জনেরই জামিন মঞ্জুর করে। জানা যায়, গত ৪ নভেম্বর বুধবার সকালে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাড়ইপাড়া এলাকায় পুলিশের চেকপোস্টে হামলা চালায় দুইজন সন্ত্রাসী। এসময় তারা শিল্প পুলিশের কনেস্টবল মুকুল হাসান ও নূরে আলমকে কুপিয়ে রক্তাত্ত জখম করে। আহত অবস্থায় মুকুল দৌঁড়ে পাশের শুভেচ্ছা হোটেলের ভেতরে প্রবেশ করলেও সন্ত্রাসীরা সেখানে গিয়েও তাকে আবারো ছুরিকাঘাত করে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। গুলির শব্দ পাওয়ার পরই মহাসড়কের বিপরীত পাশে থাকা বিআরটিসির চালক কনক দাসসহ আরো কয়েকজন দৌঁড়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। এসময় পুলিশের সদস্য মুকুলকে হোটেলের ভেতর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে কনক দাস, লালন, সাভার পরিবহনের সুপারভাইজার ফারুক ও হোটেলের মালিক সৈকত তাদের শরীরের ক্ষত স্থানে গামছা পেঁচিয়ে একটি ভ্যানে করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে হাসপাতালে নেওয়ার পর শিল্প পুলিশের সদস্য মুকুল হাসান মারা গেলেও আহত অপর সদস্য নূরে আলম বেঁচে যায়। এদিকে এ ঘটনার পর বুধবার দুপুরেই আশুলিয়ার বাড়ইপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে শুভেচ্ছা হোটেলের মালিক সৈকত, বৃহস্পতিবার রাতে সাভার পরিবহনের সুপারভাইজার
ফারুক ও শুক্রবার দুপুরে ময়মনসিংহ এলাকা থেকে সৈকতের ভাই মিন্টুকে আটক করা হয়। এরপর থেকেই তাদেরকে আশুলিয়া থানা হাজতে আটকে রাখা হয়। টানা কয়েকদিন থানা হাজতে আটক রাখার বিষয়ে, সে সময়ে জানতে চাইলে আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দীপক সাহা বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে তাদেরকে থানায় রাখা হয়েছে। তাদেরকে আসামী হিসেবে গ্রেফতার করা হয়নি। এছাড়াও জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
আশুলিয়া থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ঘটনার পর পরই আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে সাতজনকে আটকের পর চার জনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও সৈকত, মিন্টু ও ফারুককে থানা হাজতে রাখা হয়। সৈকতকে টানা ১১দিন, ফারুককে টানা ১০ দিন ও মিন্টুকে টানা ৯ দিন থানা হাজতে আটকে রাখার পর গতকাল শনিবার সকাল দশটার দিকে ৫৪ ধারায় তাদেরকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
শুভেচ্ছা হোটেলের মালিক সৈকতের স্ত্রী হাফিজা বেগম বলেন, তার স্বামী আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। যাদের জীবন বাচানোর জন্য তার স্বামী এগিয়ে গেলেন অথচ সেই থানা পুলিশের সদস্যরা বিনা অপরাধে টানা ১১দিন থানা হাজতে তাদেরকে আটক করে রাখার পর শনিবার সকালে আদালতে পাঠায়। তিনি আক্ষেপের সাথে জানতে চেয়ে বলেন, পুলিশের জীবন বাঁচাতে হাত বারিয়ে দেওয়াটাই কি ছিল তাদের অপরাধ ?
অন্যদিকে সৈকতের ভাইয়ের মেয়ে সোনিয়া বলেন, তার দাদীর অসুস্থতার খবর শুনে ঘটনার ১১দিন আগেই মিন্টু গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ এলাকা চলে যায়। ঘটনার সময় তিনি গ্রামের বাড়িতেই ছিলেন। অথচ পুলিশ বিনা অপরাধে সেখান থেকেও তাকে আটক করে নিয়ে এসে টানা ৯দিন তাকে আশুলিয়া থানা হাজতে আটক রাখে।
একই কথা বলে আক্ষেপ করলেন সাভার পরিবহন বাসের সুপারভাইজার ফারুকের মা জাহানার বেগম। তিনি বলেন, পুলিশ সদস্য নূরে আলমের শরীর থেকে যখন অঝোড়ে রক্ত ঝরছিলো তখন তার ছেলে ক্ষত স্থানে গামছা পেচিয়ে রক্ত থামানোর চেষ্টা করে। পুলিশকে বাঁচানোর চেষ্টা করাটাই কি ছিল তার ছেলের অপরাধ ?
এদিকে ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী আব্দুল আওয়াল ও ফেরদৌস আহম্মেদসহ একাধিক আইনজীবী বলেন, কোন ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ কাউকে আটকের পর থানা হাজতে ২৪ ঘন্টারও বেশি সময় রাখার আইনে কোন বিধান নেই। আর সেখানে টানা ১১দিন রাখারতো প্রশ্নই আসে না। এটা মানবধিকার লঙ্গণ বলে তারা জানান।
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিন কদিরের যাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে কোন কথা বলে রাজি হয়নি।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, পুলিশ হত্যার ঘটনায় কয়েকজনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছিল। পরে গতকাল শনিবার সকালে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদেরকে আদালতে পাঠানো হয়। তবে টানা ১১দিন থানা হাজতে আটক রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে আর কোন কথা বলতে রাজি হননি।