এম এস ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধিঃ অসাম্প্রদায়িক জেলা হিসেবে নরসিংদীকে বুকে লালন করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জেলা প্রশাসক আবু হেনা মোরশেদ জামান। নরসিংদীতে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান তিনি এ মন্তব্য করেন।
বুধবার সকালে নরসিংদী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলাতে পরিচালিত মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম ৪র্থ পর্যায় শীর্ষক প্রকল্পের ২০১৫ শিক্ষাবর্ষের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
নরসিংদী জেলা মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের সহকারী পরিচালক শ্যামল কুমার চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নরসিংদীর জেলা প্রশাসক আবু হেনা মোরশেদ জামান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন নরসিংদী জেলা মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের সহকারী পরিচালক শ্যামল কুমার চক্রবর্তী।
নরসিংদীতে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের আওতায় ৫৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর মধ্যে ৫৩টি প্রাথমিক ও ৩টি গণশিক্ষা পরিচালিত হয়ে আসছে। মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমে এর আগেও আলাদা তিনটি ধাপ শেষ হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ১২০ কোটি টাকা। প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পের মূল্যায়ন প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে মোট ২৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০০৭ সালের জুলাই থেকে ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত মোট ৩২টি জেলায় মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম দ্বিতীয় পর্যায় শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। পরে সারা দেশে এ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করে ৭৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম তৃতীয় পর্যায় শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। ৩য় প্রকল্পটির কার্যক্রম ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে শেষ হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবং সমগ্র বাংলাদেশে এই প্রকল্পের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ৯৯ কোটি ৩১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের চতুর্থ পর্যায় শীর্ষক প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আবু হেনা মোরশেদ জামান বলেন, মন্দিরভিত্তিক শিক্ষার বিস্তারের মাধ্যমে তৃণমূলের শিক্ষার প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে সরকার। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৯ কোটি ৩১ লাখ ৬ হাজার টাকা। আগামী ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট।
তিনি আরো বলেন, কবি নজরুল যে চেতনায় বিদ্রোহী কবিতা রচনা করেছিলেন, তার পরিপূর্ণ রূপ দিয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু। নজরুলের চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়াই আমাদের লক্ষ্য। আপাদমস্তক অসাম্প্রদায়িক এই কবির লেখায় হিন্দু-মুসলমানের পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। সে চেতনা নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে নিজ নিজ অবস্থান থেকেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে।
তাছাড়া তিনি জোর দিয়ে বলেন, অসাম্প্রদায়িক জেলা হিসেবে নরসিংদীকে বুকে লালন করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। কেননা বাংলা কোরআনের অনুবাদক ভাই গিরীশ চন্দ্র সেনের জন্মও এ জেলাতেই, তিনি একজন হিন্দু হয়েও অত্যন্ত সুন্দর ভাবে বাংলা ভাষায় কোরআনারে অনুবাদ করেছেন। তাই নরসিংদীতে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের মাধ্যমে শিশুদের সুশিক্ষায় গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি নরসিংদী জেলা প্রশাসন তথা নরসিংদী জেলা পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জেলা কমিটি মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমকে গুরুত্ব দিয়েই নরসিংদীতে একসাথে কাজ করে যাবে। নরসিংদীতে মন্দিরভিত্তিক শিশু শিক্ষা কার্যক্রম জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মনিটরিং করবে। তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সকলকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে শুভেচ্ছা জানান ও সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
পরে প্রধান অতিথি মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের ২০১৫ শিক্ষাবর্ষের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ৫ জন এবং শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী ১০ জনের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।
পুরস্কার বিতরণের প্রথমার্ধে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীরা হলেন, সদর উপজেলার শ্রী শ্রী দূর্গাবাড়ি মন্দিরের দিশা দাস, শ্রী শ্রী গোপাল জিউর আশ্রমের অপূর্ব রায়, মনোহরদী উপজেলার রামকানাই জিউরসংঘের স্বপ্নীল চক্রবর্তী আদর, পলাশ উপজেলার শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দিরের তিফা সাহা, শ্রী শ্রী গোপিনাথ জিউর আখড়ার আঁচল সাহা, রায়পুরা উপজেলার রহিমাবাদের সার্বজনীন দূর্গা মন্দিরের পরশি বর্মণ, মরজালের শ্রী শ্রী রক্ষাকালী মন্দিরের পড়শী রাণী সূত্রধর, শ্রী শ্রী কানাই লাল জিউড় মন্দিরের কেয়া পাল, নরসিংদী মদন মোহন বিগ্রহ মন্দিরের ত্রয়ী দত্ত ও নরসিংদীর শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র আশ্রমের পিয়াস ভৌমিককে সনদপত্র ও নগদ অর্থ প্রদান করা হয়।
শ্রেষ্ঠ ৫ জন শিক্ষকদের মধ্যে যারা পুরস্কৃত হয়েছেন তারা হলেন, শ্রী শ্রী গোপীনাথ জিউড় আখড়া ধমির ঝরনা চক্রবর্তী, রাবান রাধাকৃষ্ণ মন্দিরের মমতা রানী দত্ত, মরজাল শ্রী শ্রী রক্ষাকালী মন্দিরের দীপ্তী রানী, জয়নগর শ্রী শ্রী দূর্গা মন্দিরের শিপ্রা দাস এবং খিদিরপুর রামকানাই জিউড় সংঘের সবিতা রানী চক্রবর্তী প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি ও সভাপতির নিকট হতে পুরস্কার গ্রহণ করেন।
অনুষ্টানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নরসিংদী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ছিদ্দিকুর রহমান (উপ-সচিব), নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জসীম উদ্দীন হায়দার, নরসিংদী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নার্গিস সাজেদা সুলতানা, আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ড. মশিউর রহমান মৃধা, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নরসিংদী জেলা কমিটির সভাপতি রঞ্জিত কুমার সরকার ও সাধারণ সম্পাদক দীপক সাহা।
অগ্রদৃষ্টি.কম // এমএসআই