“মূল পরিকল্পনাকারীকে গ্রেপ্তার করলেই কেবল হত্যার মোটিভ জানা যাবে,” বলেন ডিএমপি কমিশনার।
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যায় জড়িতদের শনাক্ত করার পাশাপাশি চারজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও তাকে খুনের মূল রহস্য এখনো জানতে পারেনি পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডের ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আখতারুজ্জামান শাহীনকে গ্রেপ্তার করা গেলে আসল কারণ জানা যাবে বলে মনে করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান।
ডিএমপি সদর দপ্তরে বুধবার এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে, অর্থাৎ এই হত্যার মোটিভ কী, তা বাংলাদেশের পুলিশ বা ভারতের পুলিশ কেউই উদঘাটন করতে পারেনি।
কারণ এর যে মূল পরিকল্পনাকারী (আখতারুজ্জামান শাহীন) তিনি এখন দেশের বাইরে রয়েছেন, তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তাকে গ্রেপ্তার করলেই কেবল এই হত্যার মোটিভ জানা সম্ভব হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দিবিনিময় চুক্তি নেই। সেক্ষেত্রে পলাতক আসামিকে ফেরত আনতে পুলিশের উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান বলেন, এক্ষেত্রে যে ধরনের প্রচেষ্টা করা দরকার সেটির সর্বোত্তম চেষ্টা করা হবে পুলিশের পক্ষ থেকে।
“যেহেতু তিনি (আনার) আমাদের সংসদ সদস্য ছিলেন, সুতরাং তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। যদিও তাদের সঙ্গে (আমেরিকা) আমাদের সেই ধরনের চুক্তি নেই। অন্য যে কোনো মাধ্যম বা কূটনৈতিক চ্যানেলে সর্বোচ্চ চেষ্টা এ বিষয়ে করা হবে।”
ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন।
এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। তদন্ত শুরু হয় দুই দেশে। ২২ মে সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউ টাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার।
এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতীয় পুলিশের দেওয়া তথ্যে বাংলাদেশে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডেও নেওয়া হয়।
ওই তিনজন হলেন- আমানুল্লা সাঈদ ওরফে শিমুল ভুঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভুঁইয়া (৫৬), তানভীর ভুঁইয়া (৩০) ও সেলেস্টি রহমান (২২)।
এছাড়া মঙ্গলবার যশোর থেকে সাইফুল আলম মোল্লা মেম্বার নামে আরেকজনকে আটক করে ডিবি। তিনি পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা খুলনার শিমুল ভুঁইয়ার সহযোগী বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ বলছে, এমপি আনার হত্যার ‘হোতা’ তার বাল্যবন্ধু ও ঝিনাইদহের যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আখতারুজ্জামান ওরফে শাহিন মিয়া। আর হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়ন করেছেন চরমপন্থি নেতা আমানুল্লা ওরফে শিমুল। আনার কলকাতায় যাওয়ার পরদিন বৈঠক করার জন্য নিউ টাউনে আখতারুজ্জামান শাহীনের ভাড়া বাসায় যান। সেখানেই আসামিরা তাকে হত্যা করে।
তদন্তের এক পর্যায়ে জিহাদ হাওলাদার নামের এক কসাইকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তাকে নিয়ে কয়েকটি খাল, জঙ্গলে ব্যপক তল্লাশি চালিয়েও আনারের লাশের হদিস মেলাতে পারেনি কলকাতা পুলিশ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ২৪ বছর বয়সী জিহাদ হাওলাদার বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা। অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিলেন তিনি। আনারকে ‘খুনে’র প্রায় দুই মাস আগে অভিযুক্তরা জিহাদকে মুম্বাই থেকে কলকাতায় নিয়ে আসেন।
জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডিকে জিহাদ বলেছেন, আখতারুজ্জামানের নির্দেশেই তিনি ‘সব কাজ’ করেছেন। আরও চার জন বাংলাদেশি এই কাজে সাহায্য করেছেন।
ভারতীয় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল বাংলাদেশে এসে ২৪ মে ঢাকায় গ্রেপ্তার তিনজনকের জিজ্ঞাসাবাদ করে যান। এরপর ২৫ মে কলকাতায় যান বাংলাদেশের ডিবির তিন কর্মকর্তা। তারাও কসাই জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং তাকে নিয়ে সেই বাড়ি ঘুরে দেখেন, যেখানে আনারকে হত্যার কথা বলা হচ্ছে।
সঞ্জিভা গার্ডেনস নামের বিলাসবহুল ওই অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের সেপটিক ট্যাংক থেকে মঙ্গলবার বেশ কিছু মাংসের টুকরো উদ্ধার করার কথা জানায় পুলিশ। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পরে তা ভারতের কেন্দ্রীয় ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়।
ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, “যারা হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন। মৃতদেহ উদ্ধার করা একটি বড় বিষয় ছিল।
“আমাদের একটি টিম কলকাতায় গিয়েছে, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল মৃতদেহের সন্ধান ও লাশ শনাক্ত করা। যে বাড়িতে হত্যা হয়েছিল বলে ভারতের পুলিশের কাছ থেকে জেনেছি, মঙ্গলবার সেই বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে কিছু মাংস উদ্ধার করা হয়েছে। সেটি আসলেই আমাদের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের কিনা, তা ডিএনএ টেস্ট করলে কেবল বোঝা যাবে।”
মামলাটির বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের আইনে বিচার হতে পারে, ভারতে ঘটনা ঘটেছে সেখানেও হতে পারে। পারস্পরিক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি নির্ধারিত হবে।”
ডিএমপির সদরদপ্তরে ‘ডেটাবেজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস অব রোড ক্র্যাশ’ (ডিএআরসি) সফটওয়্যার প্রশিক্ষণের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ডিএমপি কমিশনার।