অগ্রদৃষ্টি ডেস্কঃ ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পেছনে সৌদি আরবের সম্ভাব্য ভূমিকা থাকা নিয়ে দেশটির বিরুদ্ধে হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা মামলা করতে পারবেন। এমন বিষয় অনুমোদন দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে একটি বিল পাস হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র সৌদি আরবের হুঁশিয়ারি এবং ওবামা প্রশাসনের আপত্তি নাকচ করে দিয়ে রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ সিনেটে গত মঙ্গলবার এই বিল পাস হয়।
এ বিলের কারণে দেশ দুটির মধ্যে চরম কূটনৈতিক উত্তেজনার সৃষ্টি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কণ্ঠভোটে পাস হওয়া বিলটি যদি আইনে পরিণত হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রে লগ্নি করা কোটি কোটি ডলারের বিনিয়োগ তুলে নেওয়া হবে বলে সৌদি আরব আগেই হুমকি দিয়েছে।
মার্কিন সিনেটররা সর্বসম্মতভাবে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের বিরুদ্ধে বিচার-সংক্রান্ত এ বিল অনুমোদন করেন। বিলটি এখন প্রতিনিধি পরিষদে পাঠানো হবে। যদিও হোয়াইট হাউস থেকে বারবার বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ওই বিলের বিরোধিতা করছেন। কেননা এটি সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচের ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিষয়টি ঘিরে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করায় তা প্রশমনের জন্য ওবামা গত এপ্রিলে সৌদি আরব সফর করেন।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জোশ আর্নেস্ট বলেন, এই বিল সার্বভৌম অনাক্রম্যতা-সংক্রান্ত দীর্ঘকাল স্থায়ী আন্তর্জাতিক আইনকে পরিবর্তন করবে। পাশাপাশি এই বিল বিশ্বব্যাপী অন্য বিচারব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে দুর্বল করবে বলে ওবামা উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন। প্রেসিডেন্ট ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, বিশেষ করে শান্তিরক্ষা ও মানবিক কর্মকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা সবচেয়ে বেশি। সার্বভৌম অনাক্রম্যতা নীতি দুর্বল করা হলে বিদেশে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা ঝুঁকির মুখে পড়বেন।
এই বিল ৯/১১ হামলায় হতাহত ব্যক্তিদের পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় আদালতে বিদেশি সরকার, বিশেষত সৌদি আরবের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে এবং হামলার জন্য দায়ী প্রমাণিত হলে ক্ষতিপূরণের দাবি করতে পারবে।
৯/১১-এর হামলায় ব্যবহৃত বিমানের ১৯ জন ছিনতাইকারীর মধ্যে ১৫ জনই সৌদি আরবের নাগরিক। তবে আল-কায়েদার ওই হামলার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সৌদি আরবের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি প্রমাণিত নয়।
গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে কারাবন্দী জাকারিয়া মুসাভি মার্কিন আইনজীবীদের বলেন, নব্বইয়ের দশকে সৌদি রাজপরিবার আল-কায়েদাকে লাখ লাখ ডলার অর্থ সহায়তা দেয়। ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত মুসাভিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত সৌদি দূতাবাস মুসাভির ওই দাবিকে অস্বীকার করে।
গত মাসে নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের আদালত সম্পদ জব্দ করার আগেই সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ৭৫০ বিলিয়ন ডলারের ট্রেজারি সিকিউরিটিজ ও অন্যান্য সম্পদ বিক্রি করে দিতে বাধ্য হবে।
মঙ্গলবার হাউসের রিপাবলিকান স্পিকার ভোটাভুটির জন্য বিলটি তুলতে ইতস্তত ভাব প্রকাশ করেন। তিনি গত এপ্রিলে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা আমাদের মিত্রদের ব্যাপারে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি না—এটা নিশ্চিত করতে বিষয়টি আমাদের পুনর্বিবেচনা করা উচিত।’
ডেমোক্রেটিক দলের দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স এই বিলের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।