আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারে নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল ২৩ জানুয়ারির মধ্যেই। তবে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ বলছেন সেটি আগামীকাল শুরু হচ্ছে না।
বাংলাদেশের শরণার্থী প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমকে বলছেন, তারা প্রক্রিয়া শুরু করেছেন, তবে প্রকৃত প্রত্যাবাসন শুরু হতে আরও সময় লাগবে।
তিনি বলেছেন, “আমরা তালিকা তৈরির কাজ করছি। এটি হবে পরিবার ও গ্রামভিত্তিক। আমরা এখনো মিয়ানমারকে কোনো তালিকা দেইনি। যেভাবে দিতে হবে সেভাবে তালিকা তৈরির কাজ চলছে।”
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ২৩ জানুয়ারির মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়া উচিত। কিন্তু সম্ভব নয়। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে না হলেও ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই প্রত্যাবাসন শুরু হবে। কারণ আমরা স্বেচ্ছায়, নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে চাই। খুব শিগগিরই রোহিঙ্গাদের তালিকা দেয়া হবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
গত ২৩ নভেম্বর দুই দেশের মধ্যে এ দ্বিপক্ষীয় ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী দুই মাস অর্থাৎ মঙ্গলবারের মধ্যে এসব রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হওয়ার কথা। এই চুক্তি বাস্তবায়নে ১৬ জানুয়ারি আরেকটি ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চূড়ান্ত করে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সম্মত হওয়ার সময় থেকে দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে দেড় হাজার রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নিতে রাজিও হয়েছে মিয়ানমার।
তবে, বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই বিক্ষোভ শুরু করেছে কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গা। দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির চুক্তির বাইরে নতুন করে ছয়টি শর্ত দিয়ে কয়েক দিন ধরেই কক্সবাজারের বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা শিবিরে বিক্ষোভ করছে তারা।
তাছাড়া জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠী মিয়ানমারে পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত তড়িঘড়ি প্রত্যাবসনের ব্যাপরে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এ প্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী গতকাল কূটনীতিকদের ব্রিফিং করে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের জোর করে ফেরত পাঠানো হবে না।
এ প্রসঙ্গে রোহিঙ্গা সংগঠক জমির উদ্দিন রেডিও তেহরানকে জানান, আগামীকাল রোহিঙ্গা প্রত্যাবসনের কোনো আলামত দেখা যাচ্ছ না। তাছাড়া কেউই এখনো স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে রাজী নয়।
ওদিকে, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়ে মিয়ানমার সরকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা ধোঁকাবাজি বলে মন্তব্য করেছে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)।
রোববার এক বিবৃতিতে আরসা বলেছে, বাংলাদেশ থেকে ফিরে যাওয়ার পর রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আরো বেশি বিপদে পড়বে। তাদেরকে নিরাপত্তা দেবে না মিয়ানমার সরকার। এর মাধ্যমে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদেরকে দেশে নিয়ে নিজেদের শরণার্থী শিবিরগুলোতে বন্দী করে ফেলতে চাচ্ছে ।
আরসা আরো বলেছে, রাখাইনের কেন্দ্রীয় শহর সিত্তে’র শরণার্থী শিবিরগুলোতে হাজার হাজার মুসলমানকে রাখা হয়েছে। ২০১২ সাল থেকে রোহিঙ্গারা সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকার তাদের সমস্যার সমাধান করে নি। (পার্সটুডে)