Menu |||

নৈতিক মূল্যবোধ অবক্ষয়ের কারণ ও তার প্রতিকার

 

ধর্ম ও দর্শন ডেস্ক : ধর্মবোধের প্রকৃত ভিত্তিই হল নৈতিকতা। এ জন্য ইসলামে নৈতিকতার গুরুত্ব ও প্রাধান্য সবচেয়ে বেশী। নৈতিকতা কোন ব্যক্তির মধ্যে এমন আচরণ, যা অপরের প্রতি ক্ষমা ও মার্জনা, উদারতা ও দানশীলতা, ধৈর্য, বিনয় ও নম্রতা ইত্যাদি গুণে গুণান্বিত হওয়াকে বুঝায়। এক কথায় পূণ্যাবলী সঠিক বিকাশ ও উৎকর্ষতা সাধনই নৈতিকতা। আর এটিই সামাজিক শান্তি ও নিরাপত্তার রক্ষাকবচ। যে সমাজের মানুষের মাঝে নৈতিকতাবোধ যতটা বেশী হবে সে সমাজের মানুষ ততটাই শান্তি ও নিরাপত্তা উপভোগ করবে। সমাজ জীবনে বসবাসরত প্রত্যেক মানুষের মাঝে দেখা দেয় প্রেম-প্রীতি, ভালবাসা, সহমর্মিতা, সহানুভূতি আর স্নেহমমতা। এ সবের উন্মেষ ঘটে তখনই যখন মানুষের মাঝে নৈতিকতাবোধ থাকে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজ আমাদের মাঝে নৈতিকতা লোপ পেয়েছে। বিলুপ্ত হয়েছে ন্যায়পরয়ণতার সিংহদ্বার। আর নৈতিকতা বর্জিত সমাজে দেখা দেয় ব্যক্তিগত, দলগত বা জাতীয় জীবনে সংঘাত, হিংসা-বিদ্বেষ, হানা-হানি, গীবত ও পরশ্রীকাতরতা। সৃষ্টি হয় একে অপরকে পর্যুদস্ত করার বাসনা। ফলে সৃষ্টি হয় নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। নিম্নে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কতিপয় মৌলিক কারণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে আলোকপাত করব ইনশাআল্লাহ।

শিক্ষার অভাব : শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। মেরুদন্ডহীন প্রাণী যেমন সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না তেমনি শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। যে জাতি যতবেশী শিক্ষিত সে জাতি ততবেশী উন্নত। এই জন্য মহান আল্লাহ বিশ্ব মানবতার জন্য প্রথম যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা হল ‘শিক্ষা’। তিনি বলেন, ‘পড়! তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন’ (আলাক্ব ৯৬/১)। এ মর্মে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের উপর জ্ঞান অর্জন করা ফরয’ (ইবনু মাজাহ হা/২২৪; মিশকাত হা/২১৮, সনদ ছহীহ)। অতএব শিক্ষাই শক্তি, যার মাধ্যমে মানুষ সবকিছু জানতে পারে, বুঝতে পারে। প্রকৃতার্থে জ্ঞান অর্জনের দ্বারাই মানুষ সত্য-মিথ্যার, ন্যায়-অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য করতে পারে। পক্ষান্তরে যারা লিখতে, পড়তে জানে না তারা অন্যের উপর নির্ভরশীল হয় এবং সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য করতে পারে না। ফলে অপরাধ জগতের সাথে মিশে যায় এবং তাদের মাধ্যমে নৈতিক অবক্ষয় বৃদ্ধি পায়।

 

ইসলামী শিক্ষার অভাব : ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। সকল কালের সকল মানবের জন্য যুগোপযোগী একটি জীবন বিধান। কর্মহীন শিক্ষা যেমন অবাস্তব, ধর্মহীন শিক্ষাও তেমনই ফলদায়ক নয়। কেবলমাত্র ধর্মীয় শিক্ষার মধ্যেই ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির পথনির্দেশনা রয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষাকে সংকোচন করে কখনো নৈতিক শিক্ষা আশা করা যায় না। সঠিক সময়ে সমাজের সকলকে ধর্মীয় শিক্ষা না দেয়া গেলে তাদের মধ্যে ধর্মীয় অনুভূতি এবং নৈতিকতা ও নীতিবোধ জাগ্রত হতে পারে না। তাই ধর্মীয় শিক্ষার অভাবকে নৈতিক অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ বলা হয়।

 

মাদকের ছড়াছড়ি : বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাবলীর মধ্যে মাদক অন্যতম। সংবাদপত্রের জরিপ রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যায়, নেশাগ্রস্থ ও অবৈধ চোরাচালান ব্যবসার সাথে জড়িত শতকরা নববই জন তরুণ-তরুণী, রাস্তাবাসী ও কর্মসংস্থানহীন। শহরের বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যাপীঠে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে যুবক ৬০% এবং যুবতী ৫০%-এর বেশি নেশাগ্রস্থ। শুধু তাই নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মত সর্বোচ্চ জ্ঞান কেন্দ্রের ছাত্রীরাও জড়িয়ে পড়েছে নেশার জগতে। উক্ত নেশার টাকা জোগাড় করার জন্য কেউ কেউ পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছে গণিকাবৃত্তিকে। যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের জন্য এরচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা আর কী হতে পারে? ধনী পরিবারের ছেলে-মেয়েরা অভিভাবকের কাছ থেকে পড়াশুনার খরচ বাবদ টাকা নিয়ে তা ব্যয় করছে নেশার দ্রব্য কিনতে। টাকা না পাওয়ার কারণে সুশিক্ষিত কন্যার হাতে বাবা-মায়ের হত্যার ঘটনাও ঘটেছে রাজধানীতে। ব্যাংক কর্মকর্তার হাতে প্রাণ হারিছে স্ত্রী ও পুত্রসন্তান, স্ত্রী তার বন্ধুদের নিয়ে হত্যা করেছে ব্যবসায়ী স্বামীকে, চট্টগ্রামের রাউজানে স্ত্রী তার স্বামীকে খুন করে ঘরের মধ্যে লাশ পুঁতে রেখে নির্দয়তার প্রমাণ রেখেছে এবং নেশাগ্রস্থ কন্যা ঐশী ধারালো ব্লেডের আঘাতে হত্যা করেছে নিজের পিতা-মাতাকে। মাদকতার এ রকম ভয়াবহ পরিণতি নৈতিকতাকে সত্যিই আজ হুমকির সম্মুখীন করেছে।

 

পাশ্চাত্যের অপসংস্কৃতির অনুকরণ : দেশের আপামর জনসাধারণ অপসংস্কৃতির অক্টোপাশে জড়িয়ে নিজেদের অস্তিত্ব হারিয়ে এখন সত্যের অমোঘ বাণী হাতড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি হল ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ বা ভালবাসা দিবস। পাশ্চাত্য সংস্কৃতি, যা উদ্দম নৃত্য, সীমাহীন আনন্দ-উলস্নাস, তরুণ-তরুণীদের উষ্ণ আলীঙ্গন আর জমকালো নানা ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অতি উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে পালিত হয়। বস্ত্রহীন দেহ, অসুস্থ মানসিকতা আর যৌন উত্তেজনার চূড়ান্ত পর্যায়ের দৃশ্যবলী বহিঃপ্রকাশ পরের দিন দেশের দৈনিক পত্রিকাগুলোতে প্রথম পৃষ্ঠায় ঘটা করে প্রকাশ করা হয়। যেন বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে এটাই দেশীয় সংস্কৃতি। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন দিবসীয় সংস্কৃতি। মনে হয় যেন দিবসীয় সংস্কৃতির ভারে ছোট্ট-দ্বীপটি ভারাক্রান্ত। আছে ফ্যাশন ও বিজ্ঞাপন সংস্কৃতি, যা দেখে যুবচরিত্র ধ্বংস হচ্ছে, জড়িয়ে পড়ছে নানা অশ্লীলতায়। ফলে নৈতিকতার অবক্ষয় আরো প্রকট আকার ধারণ করছে।

 

প্রতিকার :
১. ধর্মীয় শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দান। ২. অভিভাবকদের দায়িত্ব ও সচেতনতা বৃদ্ধিসহ ছেলে-মেয়েদের ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা। ৩. নারী-পুরুষের সহশিক্ষা বন্ধ করা। প্রয়োজনে শিফটিং পদ্ধতি চালু করা। ৪. মসজিদ ও পঞ্চায়েতগুলোতে ধর্মীয় উপদেশ ও সামাজিক শাসন বৃদ্ধি করা। ৫. ধর্ম ও সমাজ বিরোধী মেলা ও অনুষ্ঠান বন্ধ করা। ৬. বিদেশী সংস্কৃতি বর্জন করা ও বিদেশী মন্দ চ্যানেলগুলো বন্ধ করা। ৭. ইন্টারনেট ও মোবাইলের মন্দ ব্যবহারের সুযোগগুলো বন্ধ করা। ৮. সেই সাথে এমন শক্তিশালী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা, যা এ মন্দ স্রোতকে বাধা দিবে এবং তার স্থলে সুস্থ স্রোত প্রবাহিত করবে।

 

যতদ্রুত মুরুব্বী, যুবক, সোনামণি ও মহিলাদের মধ্যে পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসভিত্তিক বিশুদ্ধ আক্বীদা ও আমলের প্রচার ও প্রসার এবং মন্দ প্রতিরোধকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে গ্রহণ করা হবে, ততদ্রুত স্ব স্ব পরিবারে, সমাজে, ও রাষ্ট্রে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে ইনশাআল্লাহ। তাই আসুন! আমরা এ সমাজ ও দেশকে ভালবাসি। সকলেই মিলে নিজেদের ও ভবিষ্যত প্রজম্মের স্বার্থে একটি সুন্দর, সুখী, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধশালী সমাজ ও দেশ গঠনে সম্মিলিত ভাবে আত্মনিয়োগ করি। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন। আমীন!!!

 

লেখক :
ড. মোস্তফা কবীর সিদ্দিকী
সহকারী অধ্যাপক,
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ,
উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়।
ই-মেইল: mostafakabir_seu@ Yahoo.com

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» কুয়েতে মুরাদুল হক চৌধুরীকে সম্মাননা

» তাপপ্রবাহ: প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা

» মালয়েশিয়ায় ই-পাসপোর্ট সেবা উদ্বোধন

» কুয়েতে সংবর্ধিত হলেন মুরাদুল হক চৌধুরী

» সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঝড়বৃষ্টিতে মৃত বেড়ে ৪

» তাপদাহ: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধের নির্দেশ

» কুয়েতে প্রবাসী নারীদের সংগঠন উদযাপন করেছে পহেলা বৈশাখ

» কুয়েত বাংলাদেশ কমিউনিটির ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত

» কুয়েতে বাংলাদেশ ভবনে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে প্রবাসীদের শুভেচ্ছা বিনিময়

» মালয়েশিয়ার মিনি ঢাকায় ‘রেস্টুরেন্ট মনির ভাই’ উদ্বোধন

Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
,

নৈতিক মূল্যবোধ অবক্ষয়ের কারণ ও তার প্রতিকার

 

ধর্ম ও দর্শন ডেস্ক : ধর্মবোধের প্রকৃত ভিত্তিই হল নৈতিকতা। এ জন্য ইসলামে নৈতিকতার গুরুত্ব ও প্রাধান্য সবচেয়ে বেশী। নৈতিকতা কোন ব্যক্তির মধ্যে এমন আচরণ, যা অপরের প্রতি ক্ষমা ও মার্জনা, উদারতা ও দানশীলতা, ধৈর্য, বিনয় ও নম্রতা ইত্যাদি গুণে গুণান্বিত হওয়াকে বুঝায়। এক কথায় পূণ্যাবলী সঠিক বিকাশ ও উৎকর্ষতা সাধনই নৈতিকতা। আর এটিই সামাজিক শান্তি ও নিরাপত্তার রক্ষাকবচ। যে সমাজের মানুষের মাঝে নৈতিকতাবোধ যতটা বেশী হবে সে সমাজের মানুষ ততটাই শান্তি ও নিরাপত্তা উপভোগ করবে। সমাজ জীবনে বসবাসরত প্রত্যেক মানুষের মাঝে দেখা দেয় প্রেম-প্রীতি, ভালবাসা, সহমর্মিতা, সহানুভূতি আর স্নেহমমতা। এ সবের উন্মেষ ঘটে তখনই যখন মানুষের মাঝে নৈতিকতাবোধ থাকে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজ আমাদের মাঝে নৈতিকতা লোপ পেয়েছে। বিলুপ্ত হয়েছে ন্যায়পরয়ণতার সিংহদ্বার। আর নৈতিকতা বর্জিত সমাজে দেখা দেয় ব্যক্তিগত, দলগত বা জাতীয় জীবনে সংঘাত, হিংসা-বিদ্বেষ, হানা-হানি, গীবত ও পরশ্রীকাতরতা। সৃষ্টি হয় একে অপরকে পর্যুদস্ত করার বাসনা। ফলে সৃষ্টি হয় নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। নিম্নে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কতিপয় মৌলিক কারণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে আলোকপাত করব ইনশাআল্লাহ।

শিক্ষার অভাব : শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। মেরুদন্ডহীন প্রাণী যেমন সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না তেমনি শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। যে জাতি যতবেশী শিক্ষিত সে জাতি ততবেশী উন্নত। এই জন্য মহান আল্লাহ বিশ্ব মানবতার জন্য প্রথম যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা হল ‘শিক্ষা’। তিনি বলেন, ‘পড়! তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন’ (আলাক্ব ৯৬/১)। এ মর্মে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের উপর জ্ঞান অর্জন করা ফরয’ (ইবনু মাজাহ হা/২২৪; মিশকাত হা/২১৮, সনদ ছহীহ)। অতএব শিক্ষাই শক্তি, যার মাধ্যমে মানুষ সবকিছু জানতে পারে, বুঝতে পারে। প্রকৃতার্থে জ্ঞান অর্জনের দ্বারাই মানুষ সত্য-মিথ্যার, ন্যায়-অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য করতে পারে। পক্ষান্তরে যারা লিখতে, পড়তে জানে না তারা অন্যের উপর নির্ভরশীল হয় এবং সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য করতে পারে না। ফলে অপরাধ জগতের সাথে মিশে যায় এবং তাদের মাধ্যমে নৈতিক অবক্ষয় বৃদ্ধি পায়।

 

ইসলামী শিক্ষার অভাব : ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। সকল কালের সকল মানবের জন্য যুগোপযোগী একটি জীবন বিধান। কর্মহীন শিক্ষা যেমন অবাস্তব, ধর্মহীন শিক্ষাও তেমনই ফলদায়ক নয়। কেবলমাত্র ধর্মীয় শিক্ষার মধ্যেই ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির পথনির্দেশনা রয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষাকে সংকোচন করে কখনো নৈতিক শিক্ষা আশা করা যায় না। সঠিক সময়ে সমাজের সকলকে ধর্মীয় শিক্ষা না দেয়া গেলে তাদের মধ্যে ধর্মীয় অনুভূতি এবং নৈতিকতা ও নীতিবোধ জাগ্রত হতে পারে না। তাই ধর্মীয় শিক্ষার অভাবকে নৈতিক অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ বলা হয়।

 

মাদকের ছড়াছড়ি : বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাবলীর মধ্যে মাদক অন্যতম। সংবাদপত্রের জরিপ রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যায়, নেশাগ্রস্থ ও অবৈধ চোরাচালান ব্যবসার সাথে জড়িত শতকরা নববই জন তরুণ-তরুণী, রাস্তাবাসী ও কর্মসংস্থানহীন। শহরের বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যাপীঠে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে যুবক ৬০% এবং যুবতী ৫০%-এর বেশি নেশাগ্রস্থ। শুধু তাই নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মত সর্বোচ্চ জ্ঞান কেন্দ্রের ছাত্রীরাও জড়িয়ে পড়েছে নেশার জগতে। উক্ত নেশার টাকা জোগাড় করার জন্য কেউ কেউ পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছে গণিকাবৃত্তিকে। যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের জন্য এরচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা আর কী হতে পারে? ধনী পরিবারের ছেলে-মেয়েরা অভিভাবকের কাছ থেকে পড়াশুনার খরচ বাবদ টাকা নিয়ে তা ব্যয় করছে নেশার দ্রব্য কিনতে। টাকা না পাওয়ার কারণে সুশিক্ষিত কন্যার হাতে বাবা-মায়ের হত্যার ঘটনাও ঘটেছে রাজধানীতে। ব্যাংক কর্মকর্তার হাতে প্রাণ হারিছে স্ত্রী ও পুত্রসন্তান, স্ত্রী তার বন্ধুদের নিয়ে হত্যা করেছে ব্যবসায়ী স্বামীকে, চট্টগ্রামের রাউজানে স্ত্রী তার স্বামীকে খুন করে ঘরের মধ্যে লাশ পুঁতে রেখে নির্দয়তার প্রমাণ রেখেছে এবং নেশাগ্রস্থ কন্যা ঐশী ধারালো ব্লেডের আঘাতে হত্যা করেছে নিজের পিতা-মাতাকে। মাদকতার এ রকম ভয়াবহ পরিণতি নৈতিকতাকে সত্যিই আজ হুমকির সম্মুখীন করেছে।

 

পাশ্চাত্যের অপসংস্কৃতির অনুকরণ : দেশের আপামর জনসাধারণ অপসংস্কৃতির অক্টোপাশে জড়িয়ে নিজেদের অস্তিত্ব হারিয়ে এখন সত্যের অমোঘ বাণী হাতড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি হল ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ বা ভালবাসা দিবস। পাশ্চাত্য সংস্কৃতি, যা উদ্দম নৃত্য, সীমাহীন আনন্দ-উলস্নাস, তরুণ-তরুণীদের উষ্ণ আলীঙ্গন আর জমকালো নানা ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অতি উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে পালিত হয়। বস্ত্রহীন দেহ, অসুস্থ মানসিকতা আর যৌন উত্তেজনার চূড়ান্ত পর্যায়ের দৃশ্যবলী বহিঃপ্রকাশ পরের দিন দেশের দৈনিক পত্রিকাগুলোতে প্রথম পৃষ্ঠায় ঘটা করে প্রকাশ করা হয়। যেন বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে এটাই দেশীয় সংস্কৃতি। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন দিবসীয় সংস্কৃতি। মনে হয় যেন দিবসীয় সংস্কৃতির ভারে ছোট্ট-দ্বীপটি ভারাক্রান্ত। আছে ফ্যাশন ও বিজ্ঞাপন সংস্কৃতি, যা দেখে যুবচরিত্র ধ্বংস হচ্ছে, জড়িয়ে পড়ছে নানা অশ্লীলতায়। ফলে নৈতিকতার অবক্ষয় আরো প্রকট আকার ধারণ করছে।

 

প্রতিকার :
১. ধর্মীয় শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দান। ২. অভিভাবকদের দায়িত্ব ও সচেতনতা বৃদ্ধিসহ ছেলে-মেয়েদের ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা। ৩. নারী-পুরুষের সহশিক্ষা বন্ধ করা। প্রয়োজনে শিফটিং পদ্ধতি চালু করা। ৪. মসজিদ ও পঞ্চায়েতগুলোতে ধর্মীয় উপদেশ ও সামাজিক শাসন বৃদ্ধি করা। ৫. ধর্ম ও সমাজ বিরোধী মেলা ও অনুষ্ঠান বন্ধ করা। ৬. বিদেশী সংস্কৃতি বর্জন করা ও বিদেশী মন্দ চ্যানেলগুলো বন্ধ করা। ৭. ইন্টারনেট ও মোবাইলের মন্দ ব্যবহারের সুযোগগুলো বন্ধ করা। ৮. সেই সাথে এমন শক্তিশালী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা, যা এ মন্দ স্রোতকে বাধা দিবে এবং তার স্থলে সুস্থ স্রোত প্রবাহিত করবে।

 

যতদ্রুত মুরুব্বী, যুবক, সোনামণি ও মহিলাদের মধ্যে পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসভিত্তিক বিশুদ্ধ আক্বীদা ও আমলের প্রচার ও প্রসার এবং মন্দ প্রতিরোধকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে গ্রহণ করা হবে, ততদ্রুত স্ব স্ব পরিবারে, সমাজে, ও রাষ্ট্রে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে ইনশাআল্লাহ। তাই আসুন! আমরা এ সমাজ ও দেশকে ভালবাসি। সকলেই মিলে নিজেদের ও ভবিষ্যত প্রজম্মের স্বার্থে একটি সুন্দর, সুখী, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধশালী সমাজ ও দেশ গঠনে সম্মিলিত ভাবে আত্মনিয়োগ করি। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন। আমীন!!!

 

লেখক :
ড. মোস্তফা কবীর সিদ্দিকী
সহকারী অধ্যাপক,
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ,
উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়।
ই-মেইল: mostafakabir_seu@ Yahoo.com

Facebook Comments Box


এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



আজকের দিন-তারিখ

  • বৃহস্পতিবার (রাত ২:১৩)
  • ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)

Exchange Rate

Exchange Rate EUR: বৃহঃ, ২৫ এপ্রি.

সর্বশেষ খবর



Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Bangladesh Office

Director. Rumi Begum
Adviser. Advocate Koyes Ahmed
Desk Editor (Dhaka) Saiyedul Islam
44, Probal Housing (4th floor), Ring Road, Mohammadpur,
Dhaka-1207. Bangladesh
Contact: +8801733966556 / +8801920733632

Email Address

agrodristi@gmail.com, agrodristitv@gmail.com

Licence No.

MC- 00158/07      MC- 00032/13

Design & Devaloped BY Popular-IT.Com
error: দুঃখিত! অনুলিপি অনুমোদিত নয়।