ডেস্ক নিউজ : ‘১৯৭৫ এর পর দীর্ঘ সময়ের ব্যাবধানে অবিশ্বাসের বাতাবরন কাটিয়ে বর্তমান সরকারের আমলে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে । যেকোনো সম্পর্ক পর্যায়ক্রমে বিস্তার লাভ করে। এই সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল একাত্তরে। বন্ধুত্বতা পরিচয়ের একটা সময় আসে-সেই সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু হলো ভারত।’
সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সম্মানে বুধবার সন্ধ্যায় কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপহাইকমিশন প্রাঙ্গণে এক সুধী সমাবেশ ও নৈশভোজের আয়োজন করে বাংলাদেশ উপদূতাবাস । সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে এসব কথা বলেন মন্ত্রী ।
মন্ত্রীর মন্ত্রী বলেন, দুই দেশের মধ্যে অনেক দিনের সংশয় ছিলো, অবিশ্বাস ছিলো, সেটা মোদি সরকারের আমলে ভেঙে গেছে। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আছে বলেই আন্তর্জাতিক আদালতে সমুদ্র সমস্যা মিটেছে, ৬৮ বছরের ছিটমহল চুক্তির সমাধান হয়েছে এবং এক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদির যথেষ্ট অবদান ছিলো। ভারতের ইউপিএ সরকারের আমলেও ছিটমহলের বাস্তবায়ন নিয়ে একটা প্রক্রিয়া চালু ছিলো, কিন্তু নরেন্দ্র মোদির সরকার এসে তাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এটা আমাদের কাছে একটা বড় পাওনা। যদিও ভারতে যে সরকারই আসবে তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক থাকবে বলেও এদিন জানান মন্ত্রী। সন্ত্রাসবাদ, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বাংলাদেশও ভারত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করবে বলে জানান তিনি।
তিস্তার পানি বন্টন নিয়েও এদিন মুখ খোলেন মন্ত্রী। তিনি বলেন ‘এ ব্যাপারে আলাপ আলোচনা চলছে। মোদি সরকারের ঢাকা সফরেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিস্তার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছিলেন, আমরাও সেদিকে আশা করে আছি। আমরা অতিরিক্ত কিছু চাইনা।আমরা চাই এব্যাপারে গ্রহণযোগ্য যুক্তিসম্মত, বাস্তবসম্মত একটা সমাধান’।
গত এপ্রিলে শেখ হাসিনার দিল্লি সফরকালে মমতা ব্যানার্জি তিস্তার পানির বদলে তো অন্য কয়েকটি নদীর পানি বন্টনের বিষয়ে যে প্রস্তাব বাংলাদেশকে দিয়েছিলেন সে প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন ‘এটা তাঁর (মমতা) অভিমত, এটা তাঁর সরকারের বক্তব্য। আমরা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে আলোচনা করছি। চুক্তি হবে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে। এই বিষয়টি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারই সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের সঙ্গে বুঝবে।
রোহিঙ্গাদের উগ্রবাদী শক্তির সঙ্গে পাকিস্তানের আইএসআই’ এর সম্পৃক্ততার বিষয়টিও এদিন তুলে ধরে তিনি বলেন বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এছাড়াও এদিন ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ জুড়ে পদ্মাসেতু , মেট্রোরেল সহ নানান উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের কথা তুলে ধরেন। বলেন বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার পরেও আমরা পদ্মাসেতুর কাজ নিজ অর্থায়নে করছি। সঠিক সময়ে এর কাজ শেষ হবে। উন্নয়নের মহাসড়কে আমরা জোর কদমে এগিয়ে চলেছি। আমাদের সাহস আছে, কমিটমেন্ট আছে, আদর্শ আছে।
ভারতের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভন দেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আবেগের সম্পর্ক জড়িয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হতোনা। তাই বাঙালি হিসাবে আমার মধ্যে একটা অহঙ্কারবোধ রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ যেভাবে আজ সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, এটাই সারাবিশ্বের ধর্ম হওয়া উচিত।
এদিন জমকালো এই রিশেপসন পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম বঙ্গের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভন দেব চট্টোপাধ্যায়, দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার সৈযদ মোয়াজ্জেম আলি, কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসান, অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, শমি কায়সার, চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ, শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারসহ সমাজের বিশিষ্টজনেরা।