জাপানে সত্তর বছরের বেশি বয়স্ক অনেক নারী কৃষক আছেন যারা মূলত শখের বশে ও সময় কাটানোর জন্য কৃষিকাজ করেন। তারা নিজেদের প্রয়োজনে শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদন করে থাকেন।
এ বুড়ি কৃষকরা তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য নিজেদের আবাসিক এলাকার একটি নির্দিষ্ট স্থানে বিক্রির জন্য রাখেন। এটা কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয়, নিছক সময় কাটানো ও গল্প করার জন্য তারা এ ধরনের বাজার জমিয়ে থাকেন। জাপানের ইয়ামাগুচি তেমনই একটি এলাকা।
ইয়ামাগুচি একটি অনুন্নত এলাকা। এখানকার নাগরিক সুবিধা তুলনামূলক কম। তবে এখানে যা আছে জাপানের অন্যান্য অঞ্চলে তা নেই বললেই চলে। যেমন- ফারমার্স মার্কেট ও বুড়িদের মার্কেট। এ ব্যতিক্রমধর্মী ফারমার্স মার্কেটে স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সাধারণ বাজারদরের তুলনায় প্রায় ৫০ ভাগ কম দামে বেচেন।
এ মার্কেটে চাল, শাকসবজি ও ফলমূল জাতীয় পণ্য পাওয়া যায় যা সবই স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত। সকাল আটটায় শুরু হয়ে এগারটার মধ্যেই এর সব পণ্য বেচাকেনা শেষ হয়ে যায়। কম দাম থাকায় এর চাহিদাও বেশি।বিশেষ করে আমাদের মতো স্বল্প আয়ের বিদেশিরা যারা এ শহরে বসবাস করি তারা সারা সপ্তাহ এর অপেক্ষায় থাকি।
সপ্তাহে তিনদিন এ বাজারে বেচাকেনা চলে। সকাল আটটার আগেই সবাই নির্দিষ্ট লাইনে সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় থাকেন, ঠিক আটটায় গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গে সবাই যার যার পছন্দের সবজি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে নেন। কম দামে টাটকা শাকসবজি ও স্থানীয় ফলমূল পাওয়া যাওয়ায় স্বল্প আয়ের বয়স্ক জাপানিদের কাছেও এর অনেক কদর আছে।
শুধু তাই নয়। বুড়ি কৃষকরা কফি, চকলেট, বিস্কিটসহ অন্যান্য হালকা খাবার দিয়ে বিদেশিদের আপ্যায়নও করে থাকেন। বিদেশিরা গেলে তারা অনেক খুশি হন এবং কখনও কখনও বিনামূল্যে কোনো কোনো পণ্য বা নিজেদের তৈরি জিনিস উপহার দিয়ে দেন। বিশেষ করে শিশুদের তারা অত্যন্ত স্নেহ করে বিভিন্ন উপহার দিয়ে থাকেন। স্বল্প জাপানি ভাষা জানেন এমন বিদেশিদের এরা খুব খাতির যত্ন করে থাকেন। কেননা এতে ইংরেজি না জানা জাপানি বয়স্ক নিঃসঙ্গ বুড়িরা কথা বলে সময় কাটানো ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারেন। বুড়িদের এ মার্কেটে মূলত বয়স্ক জাপানিরা ও স্বল্প আয়ের বিদেশিরাই যান, স্বল্পমূল্যে পণ্য কেনা ও বয়স্ক জাপানিদের সঙ্গে গল্প করেন।
এ বাজারের মাধ্যমে বিদেশিদের সঙ্গে জাপানিদের এক ধরনের সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে। জাপানে এ ধরনের ফারমার্স মার্কেট বা বুড়িদের মার্কেট টোকিও, ওসাকা কিংবা কিয়োটোর মতো উন্নত এলাকায় দেখা যায় না। এ ধরনের মার্কেট আমাদের মতো স্বল্প আয়ের বিদেশি ও বয়স্ক জাপানিদের উভয়ের জন্য সত্যিই উইন উইন সিচুয়েশন বলা যায়।
সূত্র, বিডিনিউজ২৪.কম