অগ্রদৃষ্টি ডেস্কঃ আমরা তখন বগালেক থেকে কেওক্রাডং ট্রেইলের সাড়ে ২২শ ফুট উঁচুতে। টানা ২৫০ ফুটের খাড়াই পেরিয়ে শরীরে আদ্যপান্ত ঘর্মাক্ত। উদোম শরীরে তাই প্রশান্তির যাত্রী ছাউনিতে বিশ্রামে। খাচ্ছি পাহাড়ের অর্গ্যানিক কলা, বাতাবি আর কমলা।
এরইমধ্যে দুই পাহাড়ি শিশুর আগমন। একজনের হাতে সুতোয় বাঁধা জ্যান্ত পাখির ওড়াউড়ির বৃথা চেষ্টা নজরে পড়লো। পাখির বন্ধনের জীবন পছন্দ নয় মোটেও। তাই এগিয়ে যাওয়া সঙ্গে সঙ্গে। গিয়ে দেখা গেলো পাখিটি সুইচোরা। লম্বা ঠোঁট, অদ্ভুত সুন্দর চাহনি, একরাশ রং বুক, পিঠ,ডানায়। আর লেজটি লম্বা সুইয়ের মতো। এতো মায়াবি পাখিটির এ কষ্ট সহ্য করা কঠিন।
একজনের নাম মিরি ম্রো। আরেকজন ক্রাসিং খুমি। ক্লাস থ্রিতে পড়ে লুংথং পাড়ার এক স্কুলে। কাঁধে দুজনেরই দুটি কাপড়ের ছোট ঝোলা। মধ্যে কি জিজ্ঞেস করতেই যেটা বের করলো সেটা ছিলো আরও হৃদয় বিদারক। আরও দুটি মৃত পাখি। শরীরের পালক অর্ধেক ছাড়ানো। পাখিটি যে অনেক সুন্দর সেটি বোঝা যাচ্ছিলো তাদের ছিন্নভিন্ন শরীরেও। তাৎক্ষণিক নাম উদ্ধার করতে পারিনি।
দুদিন পরে ছবি দেখেই পশু-পাখিপ্রেমী পরমশ্রদ্ধেয় এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন জানালেন, এটা তো বসন্তবাউরি। অনেক বিষয়ের মতো এ পাখিটির খাদ্যাভাসও বলে দিলেন অনর্গল। পরে পাখিটির ছবি দেখে আফসোস বাড়লো আরও।
শিকার পাহাড়িদের সহজাত প্রবৃত্তি। শিশুকাল থেকেই যে এরা দক্ষ শিকারি হয়ে ওঠে তা বোঝা গেলো শিশু দুটির নিশানা দেখে। হলুদ দাঁত বের করে হেসে অকপটে বলে দিলো। প্রতিদিনিই পাখি মারতে বের হই। কোনোদিন ১০টি পাখিও মেরে ফেলি। সবই খাওয়ার জন্য।
এটা তাদের কাছে নিছক খেলা ছাড়া অন্যকিছু মনে হলো না।
দাম দিয়ে কিনে নিতে চাইলে ১শ টাকা চাইলো। যদিও গাইডের সহায়তায় ৩০ টাকায় রফা করে আমরা সবাই নিলাম মুক্তির আনন্দ।
খেলোচ্ছলেই এসব শিশু প্রতিদিন শিকার করছে পাখি। তাদের সচেতন করার কেউ নেই। আমরা কতক্ষণ বোঝালাম তাদের। পর্যটকরা সচেতন হলেও তাদের এ শিকার অনেক কমবে। কারণ তাদের ওই গহীনে গিয়ে শেখাবে জানাবে কে!
ঝোলা থেকে বের হলো গুলতি ও মাটি পুড়িয়ে বানানো শক্তিশালী গুলি। নিশানা দেখিয়ে দিয়ে ছুড়তে বললে মুহূর্তে ভেদ করে দেখিয়ে দিলো তারা কতটা দক্ষ। পাশে থাকা আরেকদল পর্যটকের মধ্যে থেকে একজন তো বলেই ফেললেন, শিকার না করে এদের দেশের তীরন্দাজ বানানো উচিত।
স্থানীয় ভাষায় সুইচোরাকে তারা বলে কুরং। তাদের শিকার করা পাখিগুলোর মধ্যে বুলবুলি, টুনটুনিসহ আছে অনেক পাখি। পাহাড়ে টিকে থাকার লড়াই, খাদ্যাভাস, খাদ্য সংকট, অসচেতনতাসহ নানান কারণে পাখি করে আদিবাসীরা। এটা তাদের দোষ নয়, দায়ীও করা যাবে না।
তবে অন্তত পর্যটন এলাকাগুলোতে যেহেতু মানুষের পদচারণা আছে, তাই এসব এলাকার মানুষের জীবনযাত্রারও আসছে পরিবর্তন।পর্যটকরাও যদি একটু সচেতন করেন সুযোগ পেলে তাহলে কিছুটা হলেও কমবে শিকার। তারাও একসময় বুঝবে পাখিও আমাদের কত বড় সম্পদ।