জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪ কার্যকর করতে প্রস্তাবিত দু’টি আইন প্রণীত হলে সম্প্রচার কমিশন প্রতিষ্ঠিত হবে। তখন টকশো’র জন্য সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। এতে করে টকশো’গুলোতে বিকৃত ও অসত্য তথ্য উপস্থাপনের সুযোগ থাকবে না। এছাড়া বর্তমানে বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান, টকশো’ ও সংবাদ নিয়মিত মনিটরিং করার জন্য একটি কমিটি রয়েছে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
রোববার (০৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারি ও জাতীয় ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশ টেলিভিশন জাতির কাছে পুরোপুরি দায়বদ্ধ। বাংলাদেশ টেলিভিশনে বিকৃত ও অসত্য তথ্য প্রদান করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার মতো কোনো অনুষ্ঠান কিংবা টকশো’ প্রচারের সুযোগ নেই।
টকশো’ সম্পর্কে মন্ত্রী জানান, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা, ২০১৪ এর তৃতীয় অধ্যায়ের এক অনুচ্ছেদে বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য বা উপাত্ত পরিহারের জন্য বলা হয়েছে। নীতিমালাটি কার্যকর করার জন্য সম্প্রচার আইন, ২০১৫ এবং সম্প্রচার কমিশন আইন, ২০১৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইন দু’টি প্রণীত হলে টকশো’ বিকৃত ও অসত্য তথ্য উপস্থাপনের সুযোগ থাকবে না।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে ভারতের ৩২টি পে-চ্যানেল এবং ৮টি ফ্রি-চ্যানেল সম্প্রচারিত হয়। বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলের বিষয়ে ভারতীয় দর্শকদের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে এবং বাংলাদেশের চ্যানেল সম্প্রচারের ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই। তবে বিদেশি টিভি চ্যানেল প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ডাউনলিংক ফি বেশি হওয়ায় ভারতীয় টিভি কেবল অপারেটররা এ বিষয়ে আগ্রহী হচ্ছেন না। বিষয়টি ভারতীয় সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে উত্থাপন করা হয়েছে।
তিনি জানান, সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকালে দুরদর্শনের একটি চ্যানেল ডিটিএইচ প্রযুক্তির মাধ্যমে বিটিভির অনুষ্ঠান প্রচারের বিষয় তার সম্মতি পাওয়া গিয়েছে। সে অনুযায়ী দুরদর্শন ও বিটিভির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক চুক্তি স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। যেকোনো ভারতীয় দর্শক বা কেবল অপারেটর ডাউনলিংকের মাধ্যমে বিটিভি, বিটিভি ওয়ার্ল্ড ও সংসদ টেলিভিশনের অনুষ্ঠান উপভোগের সুবিধা পাচ্ছেন।
সরকারি দলের সামছুল হক দুদুর প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী জানান, সরকার ২০০৭ সালের ৮ জানুয়ারি থেকে সরকারি বিজ্ঞাপন বিতরণ কার্যক্রম বিকেন্দ্রীকরণ করার পর তথ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশে শুধুমাত্র জাতীয় ও বিশেষ দিবসগুলোতে বিভিন্ন পত্রিকায় চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরের ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হচ্ছে। বর্তমান বিধান অনুযায়ী স্ব স্ব সংস্থা/ প্রতিষ্ঠান সরাসরি মিডিয়াভূক্ত পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকে।
তিনি জানান, কোনো ব্যক্তি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকলে সেটি ফৌজদারি আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি প্রচলিত আইনের আওতায় প্রতিকার চাইতে পারবেন। সেজন্য নতুন আইন/বিধি প্রণয়নের প্রয়োজন নেই। চাকরি প্রার্থীরা স্বপ্রণোদিত হয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে চাকরির বিজ্ঞাপন সম্পর্কে নিশ্চিত হবেন- এটাই সাধারণ প্রত্যাশা। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই সরকার প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এ সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের জবাবে হাসানুল হক ইনু জানান, বেসরকারি মালিকানাধীন টেলিভিশন চ্যানেল বা পত্রিকায় ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার এবং ব্যক্তিগত শত্রুতার বা বিরোধীকে লক্ষ্য করে বিরোধী পক্ষের বিরুদ্ধে নানা ধরনের কল্পকাহিনী বা মিথ্যা বানোয়াট সংবাদ প্রচার করা হলে সেক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নিতে পারবেন।