মুরাদুল হক চৌধুরী, কুয়েতে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে খুবই পরিচিত একটি নাম। কেউ বলেন প্রবাসী বাংলাদেশীদের অকৃত্রিম বন্ধু,কেউ বলেন প্রবাসী জনদরদি নেতা, কেউ বলেন বিশিষ্ট দানবীর আবার কেউ বলেন সমাজসেবক।ব্যক্তি একজন নানান গুণের কারণে তাঁর পরিচয় একেক জনের কাছে একেক রকম।
নানান ইতিবাচক কাজের কারণে যার পরিচয় কুয়েতে বাংলাদেশ কমিউনিটিতে এক অনন্য অবস্থানে,কিন্তু সেই মুরাদুল হক চৌধুরী বরাবরই প্রচারবিমুখ একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা।
কাজ তাঁকে করতেই হবে, তবে সেটি হতে হবে কারো কল্যাণের জন্য। আটচল্লিশ বছরের কাছাকাছি বয়সি মানুষটি নিজে বছরের বেশির ভাগ সময়টাই কাটাতে হয় নানান অসুস্থতায়, কিন্তু অসুস্থ মানুষের চিকিৎসায় আর্থিক সহায়তা করা যেনো অনেকটা নিয়মিত কাজেরই একটি অংশ হিসেবে ধরে নেন মুরাদুল হক চৌধুরী।
কুয়েত প্রবাসীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়াও বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থেও কাজ করছেন। নিজের উপার্জিত অর্থ অনেকেই সঞ্চয় করে থাকেন ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য। কিন্তু আপনি সেটি করছেন না কেন?
এমন একটি প্রশ্ন মুরাদুল হক চৌধুরীকে করা হলে তিনি বলেন, জীবনে যতটুকু প্রয়োজন; সেটির একটি পরিমাণ থাকা অত্যন্ত জরুরী। আমিও সেই প্রয়োজনের বাইরের অর্থ গুলো নানান কল্যাণমুখী কাজে লাগাচ্ছি। তবে অনেক সময় নিজের প্রয়োজনের চেয়ে অন্যের প্রয়োজনকেই বেশি প্রধান্য দিয়ে থাকি।
কুয়েত প্রবাসীদের দেয়া তথ্যমতে, কুয়েতে মারা যাওয়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের মরদেহ দেশে পাঠানোর খরচের একটি অংশ আপনি বা আপনার সংগঠনের মাধ্যমে দিয়ে থাকেন। গত এক বছরে কতটি মরদেহ বাংলাদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন? এই প্রশ্নটি মুরাদুল হক চৌধুরীকে করা হলে তিনি জানান, কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন কারণে প্রতিমাসে গড়ে ১৩ থেকে ১৪ জন কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশী মারা যাচ্ছেন। এসব মরদেহ দেশে পাঠানোর জন্য দূতাবাসে আবেদন করা হলে, সেখান থেকে ৯৯ কুয়েতি দিনার প্রদান করা হয়। বাকি টাকা ২০০ থেকে ২৫০ কুয়েতি দিনার মারা যাওয়া প্রবাসীর আত্বীয়-স্বজন কিংবা আমি ও আমরা দিয়ে থাকি।
তিনি বলেন, গত এক বছরে কম করে হলেও দেড় শতাধিক প্রবাসীর মরদেহ দেশে পাঠানোর খরচের একটি অংশ কখনো ব্যক্তিগতভাবে আবার কখনো সংগঠনের মাধ্যমে প্রদান করেছেন।
বাংলাদেশ বিমান পূর্বে মারা যাওয়া প্রবাসীদের মরদেহ বিনা খরচে দেশে নিয়ে যেত,কিন্তু এখন নিচ্ছেনা। যদিও বার বার প্রবাসীদের লাশ দেশে যাবে বিনা খরচে এ বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়,কিন্তু এর বাস্তবায়ন হয়নি।
এ বিষয়ে মুরাদুল হক চৌধুরী বলেন,প্রবাসীরা বিদেশে মারা গেলে রাষ্ট্রীয় বিমান বিনা খরচে নিচ্ছেনা, অন্যদিকে প্রবাসীরা জীবদ্দশায় উপার্জিত অর্থ সব দেশেই পাঠায়, কিন্তু তাঁরা মারা গেলে মরদেহ দেশে নিয়ে যেতে পরিবার থেকেও কোনো সহায়তা পাচ্ছেনা।
কুয়েত প্রবাসীদের মতে, প্রবাসীদের আকামা সমস্যার সমাধান, মারা যাওয়া প্রবাসীদের মরদেহ দেশে পাঠানো, বাংলাদেশে অসহায় মানুষের গৃহনির্মাণে আর্থিক সহযোগিতা, বাংলাদেশে গরীব পিতার কন্যার বিয়েতে আর্থিক সহযোগিতা,অসুস্থ দেশি-বিদেশি মানুষকে চিকিৎসা সহায়তা, বাংলাদেশে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণে আর্থিক সহায়তা,দেশে-বিদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আর্থিক সহায়তা,বন্যাদুর্গত এলাকায় আর্থিক সহায়তা, শীতবস্ত্র বিতরণসহ নিঃস্বার্থে বিভিন্ন সমাজ কল্যাণমুখী কাজে মুরাদুল হক চৌধুরীর অবদান অনস্বীকার্য।
সিলেট অঞ্চল এর মৌলভীবাজার শহরস্থ পূর্ব গীর্জাপাড়ার কুয়েত প্রবাসী মুরাদুল হক চৌধুরী ৯০ এর দশকে কুয়েতে আসেন জীবন আর জীবিকার তাগিদে। এরপর মুরাদুল হক একটি কোম্পানিতে সাধারণ কর্মী হিসেবে কাজ করেন।
বর্তমানে মুরাদুল হক চৌধুরী স্থানীয় এক নাগরিককে ব্যবসায়িক পার্টনার করে একটি এম.এস কোম্পানির স্বত্বাধিকারী। সেই কোম্পানিতে কয়েক শতাধিক বাংলাদেশিসহ অন্যান্য দেশের কর্মীরা কাজ করছেন।
সাংগঠনিক ভাবে মুরাদুল হক চৌধুরী বাংলাদেশ কমিউনিটি কুয়েতের আহ্বায়ক, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন কুয়েতের সাধারণ সম্পাদক,মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য, প্রবাসী স্বজন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন সংগঠনের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন কুয়েতে বাংলাদেশী কমিউনিটির এ গুণী মানুষটি।
সম্পাদকীয়ঃ
আ.হ.জুবেদ
প্রধান সম্পাদক, অগ্রদৃষ্টি