জাকির সিকদার সাভার থেকে :সাভার হিজড়াদের কারনে এলাকাবাসী অতিষ্ট।সাভারের থানা রোডে অবস্থিত ইস্টার্ন ব্যাংক সাভার শাখায় গতকাল রোববার দুপুরে এক দল হিজড়া জোরপূর্বক ঢুকে এই তান্ডব চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাভারস্থ ইস্টার্ন ব্যাংকের শাখায় রোববার দুপুরে লেনদেনসহ সব কার্যক্রম স্বাভাবিক নিয়মে চলছিল ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো হিজড়াদের চাঁদাবাজি চলছে। রাস্তা ঘাট, বাজার, রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাল, লঞ্চ স্টেশনসহ বিভিন্ন জায়গায় জোরপূর্বকও তারা চাঁদা আদায় করেন। কিন্তু এবার ব্যাংকের ভেতরে ঢুকে হলিউডের সিনামার মতো ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও গ্রাহকদের জিম্মি করে চাঁদার দাবিতে তারা তান্ডব চালিয়েছে। হঠাৎ একদল হিজড়া ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ডদের ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে। এতে ব্যাংকে আগত গ্রাহক, ব্যাংকের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। এরপর তারা ব্যাংকের ঢুকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে গিয়ে হিজড়াদের কেউ কেউ শরীরের স্পর্শকাতর অংশ তুলে ধরে স্পর্শ করে। আবার কেউ তাদেরকে আক্রমণের ভঙ্গিতে তেড়ে যায়। এসময় আগত হিজড়াদের সর্দার উপস্থিত ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও গ্রাহকদের সাফ জানিয়ে দিলেন, টাকা দিলেই তোরা রক্ষা পাবি।
হিজড়াদের তা-বে ব্যাংকার থেকে শুরু করে ব্যাংকে সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের সবাই হতবাক হয়ে পড়েন। অনেকেই এক রকম জিম্মি হয়ে পড়েন। তারা ব্যাংকের ভেতরে কাউকে ঢুকতেও দিচ্ছে না, আবার কাউকে ব্যাংক থেকে বের হতেও দিচ্ছে না। এতে করে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে পড়েন সবাই। হলিউডের সিনেমায় ব্যাংকে ডাকাত পড়লে যেমন দেখা যায়, ঠিক সেই রকম শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন বলে অনেকেই জানিয়েছেন।
ব্যাংকের একজন গ্রাহক বলেন, হিজড়ার দলের সদস্যরা দু’হাতে তালি দিয়ে প্রথমে ব্যাংকটি ঘেরাও করে। এরপর ‘আশা’ নামের একজন হিজড়া (হিজড়াদের নেতা) ব্যাংকের নিরাপত্তা কর্মীদের বাধা উপেক্ষা করে ব্যাংকটির ভেতরে ঢুকে দাবি করে মোটা অংকের অর্থ।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, হিজড়াদের বুঝিয়ে বলা হয়েছে যে, প্রতিটি টাকারই তো কড়ায়-গ-ায় হিসেব দিতে হয়। এ কথা শুনার পর হিজড়ারা একযোগে ব্যাংকে হামলা চালায়। তারপর যা ঘটলো তা বর্ণনা করার ভাষা জানা নেই বলে একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
নিয়মিত একজন গ্রাহক বলেন, তিনি ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন শেষ করেছেন। এরপর ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে যাবেন। আর তখনই অসংখ্য হিজড়া এসে ব্যাংকটির সামনে হাজির হয়। এসময় তারা ব্যাংক থেকে তাকে বের হতে বাধা প্রদান করে।
এক পর্যায়ে হিজড়ারা নানা শ্লোগান দিয়ে তেড়ে যান ব্যাংকের অপারেশন ম্যানেজার খালেদ শামসের দিকে। তার সামনে গিয়ে উলঙ্গ হয়ে শুরু করে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গী।
একপর্যায়ে ব্যাংকের শাখা প্রধান শাহনেওয়াজ কবির শুভ্র নিজ কক্ষ থেকে বেরিয়ে গিয়ে হিজড়াদের বোঝাতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু না কোন কিছুতেই তাদেরকে মানাতে পারলেন না। এসময় হিজড়াদের আরেকটি গ্রুপ চড়াও হলো অ্যাসোসিয়েট সেলস অ্যান্ড সার্ভিস ম্যানেজার সোহরাব হোসেনের দিকে এগিয়ে যান।
এক পর্যায়ে শোরগোল ওঠে-‘ম্যানেজার পুলিশে ফোন দিচ্ছেন। মুহূর্তের মধ্যে পাল্টে যায় পরিস্থিতি। বল্গাহীন হয়ে হঠে হিজড়ারা। ডাক দে তোর বাপরে। দেখি পুলিশ আমাগো কি করে। অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি ও অনেকেই তাদের শরীর থেকে বস্ত্র বিসর্জন করে। তারা বলে, টাকা দে, দিবি না ক্যান-ইত্যাদি। অবশেষে ঘণ্টা খানেকের দেনদরবারে দু’হাজার টাকা দেবার পর রফা হলে ব্যাংক ছাড়ে হিজড়ারা। স্বস্তি নেমে আসে ব্যাংকে।
ব্যাংকটির শাখা প্রধান শাহনেওয়াজ কবির শুভ্র বলেন, সাধারণত শিশু ভূমিষ্ট হবার পর তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ সেখানে গিয়ে উৎপাত করে-এটা শুনেছি। তবে হিজরা ব্যাংকে এসে এভাবে তা-ব চালাবে তা কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি।
হিজড়াদের নেতা আশা হিজড়া বলেন, এতো মানুষের প্যাট চলবো ক্যামনে। আশপাশের সবাই টাকা দিচ্ছে। ব্যাংকে গেলাম। ওরা কয় কোন টাকা দিবো না। ব্যস, চেইতা (ক্ষেপে) গেলো অন্য হিজড়ারা। এরপর ওদের শান্ত করে ফিরিয়ে নিয়ে গেলাম।
এ ব্যাপারে হিজড়াদের একজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হিজড়াতো ব্যাংকে যাওয়ার কথা নয়।