অগ্রদৃষ্টি ডেস্ক:: কিছুদিন আগেও বাড়ির আঙ্গিনায় অন্যান্য ফলের সঙ্গে একটা-দুটা গাছ লাগিয়ে লিচুর চাহিদা পূরণ হতো। কিন্তু গত কয়েক বছরে এই দৃশ্য শুধু পরিবর্তনের আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে। আঙ্গিনার পাশাপাশি মাঠের জমিতে চলে গেছে লিচু’র গাছ।
গ্রীষ্মকাল এলেই দেশের উত্তরাঞ্চলে, বিশেষ করে দিনাজপুর, নাটোর, পাবনা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন এলাকায় লিচু গাছের সবুজ পাতায় ছেয়ে যাওয়ার দৃশ্য এখন সবার চেনা। লাল টুকটুকে আর রসে ভরা লিচু দেখে যে কেউ থমকে যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হর্টিকালচারাল উইং সূত্র জানায়, ২০১২-১৩ অর্থ বছরে সারাদেশে লিচু উৎপাদন হয়েছে এক লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ৯১ হাজার মেট্রিক টনে।
আর গত অর্থ বছরে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টনে। চাষ হয়েছে ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে। এ হিসাবে গত এক বছরের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ লিচু উৎপাদন হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অধীনে ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদন মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প পরিচালক ও ফল গবেষক মো. মাসুদ মেহেদী বাংলানিউজকে বলেন, পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল লিচুর চাষাবাদ ও উৎপাদন শুধু বাড়ছেই। অল্প সময়ে বেশি লাভ হওয়ায় এই ফল উৎপাদনে ঝুঁকছেন চাষিরা।
তিনি বলেন, বেশ কিছু উচ্চফলনশীল জাত কৃষকের হাতে পৌঁছেছে। এছাড়া এর মাধ্যমে অনেকের কর্মসংস্থানও হচ্ছে। এখন গ্রামে কমবেশি সবাই লিচুর আবাদ করছেন। অর্থকরী ফল হিসেবে লিচু এখন বাংলাদেশে পরিচিতিও পেয়ে গেছে।
নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার লিচু চাষি আরিফুল ইসলাম বলেন, নিয়মিত পরিচর্যা আর দেখভালো করলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। এখন তো গ্রামে কেউ সুযোগ পেলেই লিচু আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। তবে চাষিদের যদি ভালো মানের প্রশিক্ষণ দেয়া যায় তাহলে আরও ফলন বৃদ্ধি পাবে।
এই লিচু চাষি জানান, না জানার কারণে লিচু চাষিরা মাঝেমধ্য ভুল পদক্ষেপ নেন। অথবা কোনো একটা রোগ দেখা দিলো সঙ্গে সঙ্গে কী করলে ভালো হবে এই পরামর্শ অনেকেই পান না। ফলে আর্থিক ক্ষতিতেও পড়তে হয়। এছাড়া প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না এলে লিচুর ফলন ভালোই হয়।
তবে লিচুর বাজারব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করার দাবি জানালেন একাধিক লিচু চাষি। কম সময়ে সংরক্ষণ করে রাখা যায় বলে মাঝেমধ্যে ন্যায্য দাম থেকে তারা বঞ্চিত হন।
গত তিনবছরে দ্বিগুণ হারে লিচু চাষের জমি বৃদ্ধি পেয়েছে সাখাওয়াত হোসেনের। তিনি জানান, লিচুর মৌসুম এলে তাদের কদর বেড়ে যায়। লিচুর আবাদে তার কপালও খুলেছে। প্রথম দিকে মিস্ত্রির কাজের পাশাপাশি লিচুর চাষাবাদ শুরু করেন তিনি। এরপর এখন লিচু চাষেই সময় পার করছেন। ভালো আয় হচ্ছে বলেই প্রতিবছরই জমির পরিমাণ বাড়ছে।