গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও দৈনিক সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেছেন, দুর্নীতির অনেক রাজা-মহারাজা রয়েছে যাদেরকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এটা মিথ্যা নয়। কারণ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল।
বুধবার দুপুরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ে আর্ন্তজাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গোলাম সারওয়ার বলেন, আর্ন্তজাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসের মূল স্লোগান হলো ‘ভেঙে ফেল দুর্নীতির শিকল’। কিন্তু বাস্তবে এটা একটি অত্যন্ত দুরূহ কাজ। দুদক সেই দুরূহ কাজটি করছে। এই কাজ করতে গিয়ে দুদককে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। সেটাই স্বাভাবিক। কারণ মিডিয়া হলো ওয়াচডগ। তার কাজই হলো যে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরা।
দুদক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে গোলাম সারওয়ার বলেন, বর্তমান কমিশনের সময় অনেক হাই-প্রোফাইল মন্ত্রী ও আমলাকে দুদক কার্যালয়ে হাজির করা হয়েছে। এটা সত্যি। কিন্তু শুধু হাজির করাই যথেষ্ট নয়। তাদের বিরুদ্ধে কার্যত কী ব্যবস্থা নেওয়া হলো সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, ‘আমরা দুদকের সার্বিক কর্মকাণ্ড বিবেচনা করলে দেখতে পাই, দুদকের অব্যাহতির তালিকায় বিরোধী দলের সংখ্যা খুব কম।’
গোলাম সারওয়ার বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে মিডিয়া খুবই কার্যকর অবদান রাখতে পারে। সবাইকে সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে অত্যন্ত জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। সচেতনতায় গণশুনানি অত্যন্ত ভাল উদ্যোগ। এর সঙ্গে সারা দেশে দুদককে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। সেজন্য দুদককে কঠিন সত্য ভালবাসতে হবে।
আলোচনা সভায় দুদক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, ‘সরকার বা বিরোধী দল সবাই আমাদের কাছে সমান। আমরা ব্যক্তি না দেখে ব্যক্তির অপরাধ দেখি। মুক্তিযুদ্ধের সনদ জালিয়াতিতে আমরা অত্যন্ত হাই-প্রোফাইল ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। ওই অনুসন্ধানের সময় অনেকেই বলেছেন, দুদক কিছুই করতে পারবে না। কিন্তু আমরা তা করে দেখিয়েছি।’
গণমাধ্যমের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম আমাদের ভাল কাজগুলো প্রচার করে না। তারা কেবল আমাদের সমালোচনা করেন। দুদক কাউকে দায়মুক্তি দেয় না। আমরা কেবল তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজ এগিয়ে নেই।’
আলোচনা সভার সভাপতির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান বলেন, ‘দুদকের সমালোচনা হচ্ছে, হবেই। এর মানে দুদক কাজ করছে। আর কাজ করলে সমালোচনা হবে। তবে সকল মিডিয়াকে বলব, আপনারা গঠনমূলক সমালোচনা করুন।’
এর আগে সকালে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে দিবসটি উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয় ও মানববন্ধনেরও আয়োজন করে দুদক। র্যালিতে দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান, কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদসহ কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দুদক বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোটার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশনের (র্যাক) সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। র্যালিটি কাকরাইল, বিজয়নগর, প্রেসক্লাব হয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এসে শেষ হয়।
‘দেশ প্রেমের শপথ নিন, দুর্নীতিকে বিদায় দিন’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে দ্বাদশ আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালন করছে দুদক।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসচেততনা সৃষ্টি এবং প্রথম স্বাক্ষর প্রদানের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যেই প্রতিবছরের ৯ ডিসেম্বর আর্ন্তজাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালন করা হচ্ছে। ২০০৩ সালে ওই দিনকে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘ। ২০০৪ সাল থেকে বিশ্বে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হচ্ছে। আর বাংলাদেশে ২০০৮ সাল থেকে দিবসটি পালন করা হচ্ছে।