ডাঃ ফারহানা মোবিন:: ছোট্ট সোমামনিরা, প্রকৃতিতে এসে গেছে গরমকাল। বাড়তে শুরু করেছে রোদের তাপ। এই এই গরমের মাঝে তোমাদেরকে ক্লাসে খেতে হবে, পড়তে হবে।গরমের জন্য মানুষ ঘেমে যায় অনেক বেশি। পরিনামে সে হয়ে পড়ে দুর্বল। কারণ তার শরীর থেকে লবণ পানি অনেক বেশি পরিমানে বের হয়ে যায়। লবণ পানিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম ক্লোরাইড যা দেহের জন্য ভীষণ উপকারী। এই উপাদানগুলো দেহ থেকে বের হয়ে গেলে মানুষ দুর্বল হয়ে যায়। একটু পরিশ্রমেই ক্লান্ত লাগে। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। তখন যে কোনো অসুখ বেশি হয়।
তাই ছোট্ট বন্ধুরা তোমরা এই গরমে প্রচুর পরিমানে পানি পান করবে, পানি দেহের প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে রক্ত চলাচলে সাহায্য করে। মূত্র ও ঘামের সাহায্যে রোগ জীবাণু দেহের বাইরে বের করে দেয়। ফলে মানুষ হয়ে যায় আরো কর্মক্ষম। তাই তোমরা সবাই প্রচুর পানি পান করবে। প্রতিদিন অন্তত দুই লিটার পানি দেহের জন্য ভীষণ দরকারি।
আর অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়ার পরও বাসাতে এসে তোমরা পানি খেয়ে যাবে। অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়ার পরে ঘাম শুকিয়ে গেলে তোমরা ওরস্যালাইন খাবে। বাসায় রওস্যালাইন না থাকলে বানিয়ে খেও। এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ চিনি ও আধা চা চামচ লবণ মিশিয়ে খেও। এতে দেহ থেকে যে পরিমান লবণ পানি বের হয়ে যাবে, সেই পরিমান লবণ পানি দেহেই থাকবে। আর এই গরমে তোমরা প্রচুর পরিমানে ফল, শরবত খেও। যাদের ওজন বয়সের তুলনায় অনেক বেশি শরবতে চিনি কম খেও। দীর্ঘ বছর যাবত বা ছোট থেকেই যাদের ওজন বেশি থাকে, বড় হয়ে বা বৃদ্ধ বয়সে তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে খুবই বেশি। তাই ওজনের দিকেও খেয়াল রেখো।
তোমাদের বাবা-মা যারা চাকরি করেন বা বাসার বাইরে কাজ করেন, তারা অন্য বাবা-মায়েদের তুলনায় ছেলে-মেয়েদের কম সময় দিতে পারেন। তাই বলে তোমাদের পছন্দ করেন না বা ভালোবাসেন না, এমনটি নয়। তারা (বাবা-মা) তোমাদের জন্যই পরিশ্রম করেন। আর বাবা-মা হলো সবচেয়ে ভালো বন্ধু। বাবা-মা তোমার ক্লাসে না পরলেও তোমাদের ভালো বন্ধু। তোমরা তাদের সঙ্গে আদান-প্রদান করতে পারো সব রকমের ভালো লাগা আর সবকিছু। তারা তোমাদের বকাঝকা করলেও তোমাদের সবচেয়ে বড় শুভাকাক্সক্ষী। তাই তোমাদের জীবনকে সুন্দর করার জন্য তোমরা বাবা-মায়ের কথা শুনবা, সুস্থ সবলভাবে টিকে থাকার জন্য মৌসুম ও আবহাওযা বুঝে খাওয়া-দায়ো করবে। এখন গরমের সময়। তাই অতিরিক্ত ঝাল মশলা বাদ দিবে। ফার্স্টফুড যতোটা বাদ দেওয়া যায়, ততোই ভালো।
তোমরা অনেকেই ভালো ছবি আঁকো, গান গাইতে পারো, লিখতে পারো, অনেকের শখ থাকে ডাকটিকিট সংগ্রহ করা বা বিভিন্ন দেশের মুদ্রা জমানো। তোমরা তোমাদের এই শখগুলোকে সব সময় উজ্জ্বল করে রাখবে, কাজের ভিড়ে কোনোদিন যেন হারিয়ে না যায়।
শখের কাজ মানুষের মন ভালো রাখে। প্রতিযোগিতায় জয়ী হওয়ার জন্য শখের কাজ করাটা ভীষণ জরুরি।
তোমরা হও শক্তিশালী, সুস্থ, সবল। সঠিক সময়ের সঠিক সিদ্ধান্তে তোমাদের জীবন হোক আরো বেশি সুন্দর। তোমাদের সফলতা হোক সূর্যের মতো প্রখর।
ডাঃ ফারহানা মোবিন
এমবিবিএস (ডি.ইউ), এমপিএইচ (ইপিডেমিওলজি-থিসিস পার্ট),
পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ট্রেনিং ইন গাইনী এন্ড অবস্ (স্কয়ার হাসপাতাল),
রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার (গাইনী এন্ড অবস্),
স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা, বাংলাদেশ।