সিরাজী এম আর মোস্তাক: জেলগেট একটি নিরাপদ স্থান। রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী বা বিশেষ ব্যক্তিবর্গের আবাসিক এলাকার ন্যায় জেলগেট প্রতিরক্ষা বাহিনী কর্তৃক নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখা হয়। এখানে প্রশাসন ব্যতিত অন্য কেউ কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর সাহস পায়না। আইনি প্রক্রিয়া শেষে আসামীদের নিরাপদে বাড়ি ফেরার প্রথম ধাপ হচ্ছে জেলগেট। তাই আইনি লড়াইয়ে বিজয়ী ও সদ্যমুক্ত ব্যক্তিকে জেলগেট থেকে বিনা ওয়ারেন্টে আটক করা অত্যন্ত নিকৃষ্টকর্ম। এটি জঙ্গীবাদের সাথে তুলনীয়। আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যারা এহেন কর্ম করে, তারা কুখ্যাত জঙ্গি।
রোববার (২৪ এপ্রিল, ২০১৬) শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি শফিকুল ইসলাম মাসুদ উচ্চ আদালত থেকে ‘নো ্এ্যারেস্ট, নো হ্যারেজ’ সম্বলিত বিশেষ নির্দেশনাসহ জামিন পেয়ে সন্ধ্যায় কারাফটক থেকে বের হবার পরেই একটি নম্বরপ্লেট ছাড়া গাড়ীতে তাকে টেনে ছিঁচড়ে তোলা হয়। এ সময় পরিবারের সদস্যরা জানতে চাইলে ওই লোকগুলো নিজেদের পুলিশ সদস্য বলে পরিচয় দেয়। পরে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা হলে মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মারুফ হোসেন সরদার বলেন, আটকের কোনো খবর তাদের কাছে নেই। (সুত্রঃ দৈনিক নয়া দিগন্ত, ২৬ এপ্রিল, ২০১৬)। আটকের সময় ধারণকৃত উল্লেখিত ছবি পত্রিকায় দেয়া হলেও চারদিন যাবত মাসুদের কোনো খোঁজ নেই। এটি সাধারণ ও নিরপরাধ জনতার নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং তার অনুগত প্রশাসন নানা অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য সরাসরি জঙ্গিদেরকে দায়ী করেছেন। এতে জেলগেট থেকে মাসুদের আটকেও কি জঙ্গীরাই দায়ী? উক্ত জঙ্গীরাই কি পুলিশ পরিচয়ে নামফলকবিহীন গাড়ী ব্যবহার করে? প্রকাশ্য দিবালোকে রাবি শিক্ষক খুন, জুলহাস ও তনয়কে হত্যা এবং কারারক্ষী রুস্তম হত্যায়ও কি তারাই দায়ী? এমন দুর্ধর্ষ হত্যাকান্ড আর কে করতে পারে? এভাবে মাহমুদুর রহমানের মতো বন্দী ব্যক্তিকে বিদেশে সংঘটিত চক্রান্তের সাথে জড়িত করে রিমান্ডে নেবার ঘটনাও একই কিনা, তা খতিয়ে দেখা উচিত।
বর্তমানে প্রকাশ্যে হত্যাকান্ড ও অন্যায়ভাবে অভিযুক্তকরণের ফলে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতার চরম মাত্রায় উপনীত হয়েছে। উচ্চ আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে সম্পুর্ণ অবৈধভাবে নিরীহ মানুষদেরকে হেনস্থা করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে যত বড় দাগি আসামিই হোক, আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্তি লাভের পর তাকে অন্যায়ভাবে জেলগেট থেকে আটক করার নিয়ম নেই। এটি একটি জঙ্গি কর্ম বিশেষ। তা বন্ধ করা উচিত।
এজন্য দরকার আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা। আইনকে ধর্ম-বর্ণ ও দল-মত নির্বিশেষে সবার উপরে রাখা উচিত। আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ করে সবার জন্য সাম্য বিধান করা উচিত। তাই মহামান্য আদালত ও সকল মানবাধিকার সংস্থাসমূহের প্রতি স্বশ্রদ্ধ জিজ্ঞাসা, জেলগেট থেকে বিনা ওয়ারেন্টে আটক করা অবৈধ বা জঙ্গীকর্ম কিনা? এবং মানবাধিকার রক্ষায় এ কর্মকান্ড বন্ধ করা উচিত কিনা?