জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া : রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ভুট্টা চাষে ভাগ্য বদলাচ্ছে কৃষকের। উপজেলায় ধান ও বিভিন্ন সব্জির পাশাপাশি ভুট্টা চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এবছর রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ধান ও বিভিন্ন সবজির পাশাপাশি ভুট্টা চাষ হয়েছে। স্বল্প পুঁজির পাশাপাশি বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষকরা দিন দিন এতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে বলে জানায় কৃষি অফিস। ভুট্টা চাষে কৃষি অফিস বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বীজ ও সার সরবরাহের পাশাপাশি ভুট্টা চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে জানা যায়।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, অল্প সময়ে, স্বল্প পুঁজিতে ভুট্টার ভাল ফলন পাওয়া যায়। এছাড়াও ছোট-বড় সকলের কাছে প্রিয় ও পুষ্টিকর খাবার হওয়ায় দিন দিন উপজেলায় ভুট্টার চাহিদা বেড়েছে। বিগত সময়ের তুলনায় এবছর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ভুট্টার চাষ হয়েছে বলে জানায় কৃষি অফিস। এসময় তারা আরও জানায়, এবছর রবি মৌসুমে উপজেলার ২১’শত কৃষককে ভুট্টা চাষে উৎসাহিত করা হয়েছে। এছাড়াও কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে প্রয়োজনীয় সার ও বীজ। এতে উৎসাহিত হয়ে এবছর উপজেলার সরফভাটা, কোদালা, পদুয়া, বেতাগী, পোমরা, হোসনাবাদ, রানীরহাট, পৌরসভার দাঙ্গার চর, চন্দ্রঘোনাসহ বিভিন্ন এলাকায় ধান ও সবজি চাষের পাশাপাশি ভুট্টার চাষাবাদ হয়েছে।
উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের ষাটোর্ধ কৃষক আব্দুল মালেকের ভুট্টা ক্ষেতে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, তার ২ শতক জমিতে ঢেড়শ, বেগুন ও কাকরল ক্ষেতের পাশাপাশি অর্ধ শতক জায়গায় চাষ হয়েছে ভুট্টার। ২ মাসের ব্যবধানে এক একটি ভুট্টা গাছে ২-৩টি ভুট্টা ধরেছে। কয়েকদিনের মধ্যেই ভুট্টা বাজারজাত করেছেন কৃষক আব্দুল মালেক। প্রতিটি ভুট্টা ১০/১৫ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। এতে তার খরচ বাদ দিয়ে প্রচুর লাভ হয়েছে বলে সে জানায়। স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের কৃষক মোহাম্মদ আনোয়ার জানায়, এবছর উপজেলা কৃষি অফিসের উৎসাহে ও এর লাভের বিষয় জেনে ভুট্টা চাষ করেছি। আর এতে প্রচুর লাভবান হয়েছি। আগামীতেও ভুট্টার চাষ ব্যাপকভাবে করবেন বলে তিনি জানান।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি ও উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা কাজী রমিজ উদ্দীন জানান, সাম্প্রতিক সময়ে কৃষকের মাঝে ভুট্টা চাষের আগ্রহ বেড়েছে। বিশেষ করে গত বছরের আমন চাষাবাদের পর পর একটানা ৪ বার বন্যায় গুমাই বিলসহ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার আমন চাষাবাদ কৃষকরা ঘরে তুলতে পারেনি। বন্যার কবলে পরে কৃষকরা আমন চাষাবাদ তলিয়ে যাওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে মারাত্বক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সে সময়ে চট্টগ্রাম জেলা কৃষি অধিদপ্তর কৃষকদের প্রণোদনা হিসেবে ব্যাপকভাবে ভুট্টার বীজ ও সার সরবরাহ করে। কৃষকরা ধান চাষের পাশাপাশি জমিতে ভুট্টা চাষ করে এবং ভুট্টা চাষে ব্যাপক ফলন হওয়ায় কৃষকরা অন্য চাষাবাদের চেয়ে ভুট্টা চাষে উদ্ধুদ্ধ হয়েছে। আমরাও কৃষকদের ভুট্টা চাষে নানা পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছি। আশা করি আগামী ২/১ বছরে রাঙ্গুনিয়া অধিকাংশ জমিতে ব্যাপক ভুট্টার চাষ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার জানান, প্রতি একরে মাত্র ৮ কেজি বীজ যার মূল্য কেজি প্রতি ১০০ টাকা ও স্বল্প পরিমাণ সার দিয়ে এটি চাষ করা যায়। রবি মৌসুমে মাত্র দেড় মাসে এর ফলন পাওয়া যায়। এটি পানি সহনশীল বলে সহজে ও অতিরিক্ত বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার ৪/৫ দিনেও এটি নষ্ট হয়ে যায় না। স্বাস্থ্যের জন্য সহনশীল ভুট্টা চাষে রাঙ্গুনিয়ায় একসময় বিপ্লবের সৃষ্টি হবে বলেও তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মজুমদার জানান, ভুট্টা বড়-ছোট সকলের কাছে একটি জনপ্রিয় খাবার। এটির ব্যাপক চাষাবাদে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করে থাকে। ইতিমধ্যে কৃষকদের মাঝে ব্যাপক ভাবে ভুট্টা চাষে আগ্রহী করতে বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। আগামীতেও এই ধরনের সহায়তা অব্যহত থাকবে বলে তিনি জানান।