ভারতের পুলিশ সে দেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের একজন কূটনীতিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে। রাজধানী দিল্লির উপকন্ঠে গুরগাঁও শহরের পুলিশ কর্তৃপক্ষ বিবিসিকে এ কথা নিশ্চিত করেছেন।
ওই কূটনীতিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গুরগাঁও-তে তার বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে তিনি দুজন নেপালি মহিলাকে টানা কয়েক মাস ধরে আটকে রেখে লাগাতার ধর্ষণ করে গেছেন, তাদের ওপর বিকৃত যৌন নির্যাতনও চালানো হয়েছে।
সোমবার রাতে স্থানীয় একটি এনজিও-র কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওই ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় এবং আটক দুই নেপালি মহিলাকে উদ্ধার করে।
দিল্লির নেপাল দূতাবাসও গোপন সূত্রে এই নির্যাতনের খবর পেয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছিল।
উদ্ধার হওয়া দুজন নেপালি নাগরিক – যাদের বয়স ৫০ আর ২০ – তারা পুলিশকে জানিয়েছেন ওই ফ্ল্যাটে প্রায় চার মাস ধরে তাদের আটকে রাখা হয়েছিল।
এই সময়ের মধ্যে তাদের ওপর বহু লোক প্রায় রোজ ধর্ষণ করেছেন, তাদের নিয়মিত মারধার করা হয়েছে এবং প্রায় কিছুই খেতে দেওয়া হয়নি। তাদের ফ্ল্যাটের বাইরে পা রাখারও অনুমতি ছিল না।
দুজন নেপালি মহিলাকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও এই ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
গুরগাঁওয়ের পুলিশ ইতিমধ্যে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চেয়েছে, অভিযুক্ত ওই সৌদি কূটনীতিকের কী ধরনের ‘ডিপ্লোম্যাটিক ইমিউনিটি’ বা কূটনৈতিক রক্ষাকবচ আছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও পুলিশের কাছে গোটা ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে, সৌদি দূতাবাসের সঙ্গেও এ ব্যাপারে তাদের যোগাযোগ হয়েছে বলে জানা গেছে।
দিল্লিতে সৌদি দূতাবাস অবশ্য ওই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে। সৌদি রাষ্ট্রদূত ভারতের একটি সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন পুরো ঘটনাটাই ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’।
নেপাল থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার মহিলা গৃহপরিচারিকার কাজের জন্য ভারতে বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পাড়ি দেন।
কিন্তু তাদের অনেককেই অমানবিক পরিবেশে কাজ করতে হয় ও অকথ্য নির্যাতনের শিকার হতে হয় বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে।
এই দুই নেপালি মহিলাও গত এপ্রিলে নেপালে ভূমিকম্পের পর কাজের সন্ধানে মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি দেন বলে জানা গেছে। সৌদির জেড্ডায় দুসপ্তাহ কাটিয়ে মনিবের সঙ্গে তারা এরপর ভারতে চলে আসেন।
ওই দুজন নেপালি নাগরিক ভারতে ম্যাজেস্ট্রেটের কাছে তাদের জবানবন্দী রেকর্ড করার পর তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে জানা গেছে।