জগলুল হুদা রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম : রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বেতাগী ইউনিয়ন ও পৌরসভার সীমান্তবর্তী কাঙ্গালী শাহ্ মাজার সংলগ্ন কাউখালী খালের উপর দীর্ঘদিন আগে একটি স্লুইচ গেইট নির্মাণ করা হয়েছিল। যাতে এলাকার কৃষক ১২ মাস কৃষি ও ধান চাষ করে তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাতে পারে। এটি এখন কৃষকের মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
স্লুইচ গেটটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে সারা বছর এর সুফল পেলেও বর্ষা এলেই এলাকাবাসীর গলার কাটা হয়ে দাঁড়ায়। বর্ষা আসলেই কর্ণফুলী, পাহাড়ী ও আশেপাশের বৃষ্টির পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যা এই স্লুইচ গেইটের ছোট দুই দরজা দিয়ে প্রবাহিত হতে না পেরে আশে পাশের কৃষি জমি, পোল্ট্রি ফার্ম ও বাড়ি ঘরে পানি জমে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সৃষ্টি করে। এছাড়াও এই খালে প্রাকৃতিক ভাবে ডিম ছাড়ে গলদা চিংড়ি সহ বিভিন্ন প্রজাতির মা চিংড়ি মাছ। পানির স্বাভাবিক গতি রোধের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে চিংড়ির প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এই চিংড়ি প্রজনন হওয়া খালটি।
এলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুল মোনাফ জানান, এই একটি স্লুইচ গেইট নিয়ে আমরা মহা সমস্যায় আছি। পানির তুলনায় এই স্লুইচ গেইটের রয়েছে মাত্র দুটি দরজা। দুই দরজা দিয়ে পানি স্বাভাবিকভাবে যেতে পারে না। দরজা বিকল থাকায় বর্ষাকালে খালে অতিরিক্ত পানি জমে দু’পাড়ের ফসলি জমি ও বাড়ি ঘরে উপচে পড়ে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও জলাবদ্ধতায় জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে।
স্থানীয় আব্দুল গফুর বিদেশ থেকে এসে দুইটি পোল্ট্রি ফার্ম ও দোকান দিয়েছেন। তার নিজেস্ব জমিতে কৃষি চাষ করে আসছেন। কিন্তু চলতি বর্ষা মৌসুমে কয়েক দফা তার কৃষি জমি ও পোল্ট্রি ফার্মে পানি প্রবেশ করে কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান।
পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জসিম উদ্দিন ও বেতাগীর ইউপির ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজমুল হক জানান, পৌরসভাধীন ওয়ার্ড ও বেতাগী ইউপির সিমান্তবর্তী খালের উপর নির্মিত স্লুইচ গেইটটি উপকারের বদলে এলাকাবাসীর সর্বনাশ করছে। স্লুইচ গেইটটির কারণে খালের পানি স্বাভাবিকভাবে নামতে না পারায় শুধু তার ওয়ার্ড নয়, আরো কয়েকটি ওয়ার্ড ও খালের সাথে সংযোগ থাকা পার্শ্ববর্তী পোমরা ইউনিয়নেরও বেশ কিছু এলাকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। একটি স্লুইচ গেইট অন্তত ৩০ হাজার মানুষের দুর্ভোগের কারণে পরিণত হয়েছে বলে তিনি জানান।
স্লুইচ গেইটের কারণে চরম দুর্ভোগের স্বীকার হওয়ার কথা জানান এলাকার বাসিন্দা আইয়ুব খান, সামসুল আলম, মো. লাতু ও এম.আর হোসেন।
স্লুইচ গেইট সংলগ্ন এলাকার আব্দুল মজিদ বলেন, বর্ষায় প্রবল স্রোতে পানি জমে দুই পাশের বাড়ি ঘর ও জমিতে ঢুকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। এসময় রান্না-বান্না ও হাঁটা চলা করা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে পড়ে।
গ্রামের কৃষক নূর উদ্দিন বলেন, স্লুইচ গেইটটি দেওয়া হয়েছিলো এলাকাবাসীর উপকারের জন্য। নির্মাণের সময় পরিকল্পনা ছিলো বর্ষায় গেইট খুলে রাখা হবে যাতে পাহাড়ী ঢলের পানি অনায়াসে কর্ণফুলী নদীতে চলে যায়। আর বর্ষার শেষ দিকে গেইট বন্ধ করে পানি আটকে রাখা হবে। যাতে আটকে রাখা পানিতে গ্রামের কৃষকরা চাষাবাদ করতে পারে। জেলেরা যেন খালে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। কিন্তু এখন হয়েছে উল্টোটা। নির্মাণের কয়েক বছরের মধ্যেই স্লুইচ গেইটের ২টি দরজার দিয়ে পর্যাপ্ত পানি অপসারিত হতে পারছে না। ফলে বর্ষায় পানি নিষ্কাশনের জন্য যেমন গেইটটি সম্পূর্ণ খুলে রাখার পরও জলমগ্নতা কমছে না। এখন এই স্লুইচ গেইটটি এখন কৃষকের মরার উপর খাঁড়ার ঘা’য়ের মত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মজুমদার জানান, স্লুইচ গেইট বিকলের বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।