মৌলভীবাজার জেলার অন্তর্গত কমলগঞ্জ উপজেলার রশিদপুর গ্রামের প্রবাসী আব্দুর রাজ্জাক ও তার পরিবারের লোকজনকে মেরে ফেলার অব্যাহত হুমকিতে গৃহবন্দী দশায় দিন কাটাচ্ছেন প্রবাসী আব্দুর রাজ্জাক ও তার পরিবারের সদস্যগণ।
আব্দুর রাজ্জাক জানান, জমিসংক্রান্ত পূর্ব শত্রুতার জেড় ধরে ভুক্তভোগী পরিবারকে প্রাণনাশের অব্যাহত হুমকি দিয়ে আসছেন প্রতিবেশী মোঃ রহমত উল্লা ও তার ছেলেরা তাদের সাথে যোগ হয়েছে একই গ্রামের কিছু বখাটে ভাড়াটে মাস্তান।
তিনি বলেন, তার পরিবারে তিনি ছাড়া অন্য কোনো পুরুষ মানুষ নেই তাছাড়া তিনি প্রবাসী, কয়েক দিন হলো দেশে এসেছেন, তাছাড়া প্রতিপক্ষ মোঃ রহমত উল্লা টাকাওলা ও এলাকায় প্রতাপশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে পেরে উঠা কঠিন, এসব বিষয় নিয়ে সামাজিক ভাবে অনেক বৈঠক হলেও সে কাউকে পাত্তা দেয়না। যে জায়গা নিয়ে রহমত উল্লা জোর জবরদস্তি করছে উক্ত জায়গা আজ প্রায়
দুই’শত বছর ধরে আমার দাদা-বাবারা ভোগ করে আসছেন এবং উক্ত জায়গার সম্পূর্ণ দলিল ও কাগজপত্র আমাদের নামে, এটা আমাদের মৌরসি সম্পদ, রহমত উল্লা কোনো বৈঠকে তার পক্ষে উক্ত ভূমির একটি কাগজও তার বলে উপস্থাপন করতে পারেনি। এমনকি গ্রাম্য সালিশি বৈঠকে হেরে গিয়ে মৌলভীবাজার নিম্ন আদালতে একটি মামলা দায়ের করে, দীর্ঘ পর্যালোচনার পর মহামান্য নিম্ন আদালত রহমত উল্লার মামলাটির কোনো গ্রহণ যোগ্যতা না থাকায় সেটা খারিজ করে দেন। পরবর্তীতে রহমত উল্লা উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে মাননীয় জজ আদালতে আপিল করেন, এই মামলার সাথে বাদীর মামলার কোনো সত্যতা খোঁজে না পেয়ে আদালত সেটা নামঞ্জুর করে দেন।
ভুক্তভোগী পরিবারের নারী সদস্যরা বলেন কোর্টে কোনো সুযোগ করতে না-পেরে রহমত উল্লা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে এবং আমাদের সকল কাগজপত্র সঠিক থাকা ও মালিকানা সঠিক থাকার পর এমনকি আদালতের সকল রায়কে অবজ্ঞা করে আমাদের জায়গার বেড়া তুলে ফেলে,এর প্রায় ১৫/২০ দিন আগে আমাদের খড়ের গাধা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় এবিষয়ে কোর্টে একটি সি/আর মামলা নং -২০/২০২৩ চলমান রয়েছে। প্রবাসী আব্দুর রাজ্জাক এর বড় ভাইয়ের স্ত্রী বলেন, আমাদের বাড়িতে কোনো পুরুষ মানুষ না থাকায় মহিলারা বাঁধা দিতে গেলে রহমত উল্লা ও তার ছেলেরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং একপর্যায়ে তারা হায়নার মতো ঝাপিয়ে পরে এলোপাতাড়ি লাত্থি ঘোষি মারতে থাকে, আমার ৮০ বছর বয়সের শাশুড়িকে রহমত উল্লার ছেলে জাফর আহমদ মেরে হাতে গুরুতর আহত করে,
আমার ঝাঁ ( আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী) কে টেনেহিঁচড়ে শ্লীলতাহানির করে,আমি বাঁধা দিতে গেলে রহমত উল্লার ছেলে শামীম আহমদ আমার নিচ পেটে লাত্থি মেরে অজ্ঞান করে ফেলে তখন আমি আর কিচ্ছু বলতে পারিনা।
আইনের আশ্রয় নিয়ছেন কি না, এমন প্রশ্নে এই প্রতিবেদককে আব্দুর রাজ্জাক অভিযোগ করে বলেন, গত ১৯/০১/২০২৩ তারিখে রহমত উল্লা গং দের বিরুদ্ধে ১০৭ ধারায় একটি সাধারণ ডায়রি করি যাহার নং-৮৮৬ উক্ত ঘটনার জেড় ধরে গত ১৩/০২/২০২৩ ইং তারিখ বিকাল আনুমানিক ০৪ ঘটিকায় আমার অনুপস্থিতিতে আমার পরিবারের মহিলাদের উপর রহমতুল্লা ও তার ছেলেরা জগন্য আক্রমণ করে এবিষয়ে কমলগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করলে থানা কতৃপক্ষ এখনো কুনো ব্যাবস্থা গ্রহণ করেননি। এবিষয়ে আব্দুর রাজ্জাক বৃদ্ধা মা চোখের পানি ছেড়ে বলেন, আমার শ্বশুরের রেখে যাওয়া জায়গা শত-শত বছর ধরে আমরা ভুগ করে আসছি কোনদিন রহমত উল্লা দাবি করেনি আজ কয়েক বছর যাবত সে তার বলে দাবি করছে অথচ এই জমির মৌরসি মালিকানার সকল দলিলপত্র আমাদের কাছে রয়েছে। আমাদের কে আহত করার পর সমশের নগর পুলিশ ফাঁড়ির কয়েকজন পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে এবং পুলিশ ফাঁড়ির এ এস আই এনামুল হক আমাদেরকে বেহায়া,বেপরোয়া বাজে মহিলা বলে নোংরা ভাষায় গালিগালাজ করেন।
এবিষয়ে শমশের নগর পুলিশ ফাঁড়ির এ এস আই এনামুল হকের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান,আব্দুর রাজ্জাক গং এবং মোঃ রহমত উল্লা গং দের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত একটি জমি নিয়ে বিরোধ চলছে তারা উভয়েরি একে-অপরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় থানায় সাধারণ ডায়রি রয়েছে, মোঃ রহমত উল্লারও একটি অভিযোগ রয়েছে যার তদন্ত ভার আমার উপর ছিলো তাই তদন্তের স্বার্থে সকলের সাথেই আমার ভালো সম্পর্ক বিদ্যমান, গালিগালাজের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা,ঐ দিন আমরা তাদের পার্শ্ববর্তী একটি এলাকায় অন্য একটি বিষয়ে তদন্তের কাজে ছিলাম তখন মোঃ রহমত উল্লার ছেলে আমাকে ফোন দিয়ে বলে তারা একটি মামলার হাজিরায় রয়েছেন সে ফাঁকে আব্দুর রাজ্জাকের লোকজন উক্ত জায়গাটি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে সেখানে যেকোনো সময় পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে, সেকথা শুনে আমি আমার সিনিয়র অফিসারকে নিয়ে উপস্থিত হয়ে দেখি পরিস্থিতি থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে উভয় পক্ষের লোকজন মুখোমুখি অবস্থানে, তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা এবং অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য উভয় পক্ষকেই সেখান থেকে সরিয়ে দেই, এখানে কাউকে গালিগালাজ করার কথা সম্পূর্ণ বানোয়াট।
সরেজমিনে গিয়ে ঘটনা সম্পর্কে জানাযায়, প্রত্যক্ষদর্শী সাজ্জাদ মিয়া (৭০), রশিদ মিয়া (৬২), হারুন মিয়া (৫৫), সালিম আহমদ (৩৪), মোঃ সায়েক আহমেদ (সাবেক মেম্বার উক্ত ওয়ার্ড), পল্লী চিকিৎসক মোকিন আহমেদ (৪৫) বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষের আমল থেকে দেখে আসছি এই জায়গা আব্দুর রাজ্জাক গং দের মৌরসি সম্পদ, এখন হটাৎ করে রহমত উল্লার টাকাপয়সা বেড়ে যাওয়ায় তার কুনজর পরছে এই জাগার উপর, বারবার বিচার শালিশ করার সময় এই ভূমি তার বলে প্রমান করতে পারেনি, তার এতই টাকারন অহংকার সে টাকার গরমে কোর্ট এর রায়কে অমান্য করে এসব নিরীহ মানুষের উপর জুলুম করছে। সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ সায়েক আহমেদ বলেন, আব্দুর রাজ্জাক গং দের মৌরসি জায়গায় অবস্থিত একমাত্র চলাচলের রাস্তা রয়েছে যে রাস্তাটি শত-বছর ধরে এই এলাকার প্রায় ৬০/৭০ টি পরিবারের মানুষ ক্ষেতে যাওয়া-আসার রাস্তা হিসেবে ব্যাবহার করে আসছেন, এবং ১০/১২ টি পরিবারের এটাই একমাত্র রাস্তা যেটি ব্যাবহার ছাড়া বাড়ি থেকে বাইরে আসার অন্য কোনো রাস্তা নেই। অথচ রহমত উল্লা এখন তার পেশির জুড়ে গ্রামের মানুষের ব্যাবহৃত এই একটি মাত্র রাস্তা দিয়ে কাউকে আসতে দিচ্ছে না, কেউ যদি এটি ব্যাবহার করে তাহলে তাকে বিভিন্ন ধরনের গালিগালাজ ও হুমকি ধামকি দিয়ে রাস্তা ব্যাবহারে বাঁধা দেন। এমতাবস্থায় গ্রামের মানুষজন ভিশন কষ্টে চলাচল করছেন।
বিষয়টি নিয়ে মুঠোফোনে কথা হয় উক্ত ইউনিয়ন পরিষদের (পতনউষা) চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান এর সাথে, তিনি বলেন, আমি সহ এলাকার সকলেই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি যেহেতু ঘটনাটি জমি সঙ্ক্রান্ত তাই উভয় পক্ষকে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করছি।
অভিযুক্ত মোঃ রহমত উল্লার সাথে মুঠোফোনে মারামারি ও আব্দুর রাজ্জাক গং দের উপর হামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন “এটা তাদের সাজানো নাটক, এটা তারা অনেক আগে থেকেই করছে, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা”।
অভিযোগের ব্যাপারে কথা হয় কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আরিফ রহমান এর সাথে, তিনি বলেন এই বিষয়ে তদন্তের জন্য শমশের নগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
পরে শমশের নগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শামিম আখণ্জির সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, উভয় পক্ষেরই অভিযোগ রয়েছে, এক পক্ষের অভিযোগের তদন্ত শেষ করেছি অন্য পক্ষের অভিযোগের অদন্ত শেষে উভয়ের রিপোর্টের ভিত্তিতে উর্ধতন কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।