জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) : আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শতভাগ বাল্যবিয়ে মুক্ত রাঙ্গুনিয়া উপজেলা গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছেন রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন। এর মধ্যে তিনি কার্যক্রম বাস্তবায়নে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলার বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী অফিসে বাল্যবিয়ে দূরিকরণে প্রচারণা, প্রতিরোধ কমিটি গঠন ও বাল্যবিয়ে বন্ধে চিটি পাঠানো হচ্ছে বলে উপজেলা নির্বাহী অফিস সূত্রে জানা গেছে। সময় সুযোগ পেলেই বাল্যবিয়ে মুক্ত উপজেলা গড়তে ছুটে বেড়াচ্ছেন উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নভিত্তিক বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ কমিটি গঠন করার কার্যক্রম চলছে বলেও জানা গেছে। থাকবে উপজেলাব্যাপী একটি কেন্দ্রিয় কমিটি। এই কমিটির মাধ্যমে যেখানে বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটবে সেখানেই তা প্রতিরোধ গড়ে জড়িতদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর উপজেলা কেন্দ্রিয় কমিটির মাধ্যমে ডিসেম্বরে সমাবেশ করে বাল্যবিয়ে মুক্ত উপজেলার ঘোষনা দেওয়া হবে। এসময় তিনি সকলের সম্মেলিত প্রয়াসে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই বাল্যবিয়েমুক্ত উপজেলা গড়া সম্ভব বলে জানান। এভাবে শতভাগ বাল্য বিয়ে মুক্ত উপজেলা করতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন। একটি বাল্যবিয়ে দুটি পরিবারে কিভাবে দু:খ-দুর্দশা বয়ে নিয়ে আসে, কিভাবে একটি বাল্য বিয়ে ধ্বংস করে একজন সম্ভাবনাময়ী মেয়ের জীবন সে বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে তিনি সময় পেলেই ছুটে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে। বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে বুঝাতে তিনি রাঙ্গুনিয়ার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজে স্বশরীরে ক্লাস নেওয়ার কার্যক্রম ইতিমধ্যেই শুরু করেছেন। ক্লাসে শিক্ষার্থীদের বুঝাচ্ছেন বাল্যবিয়ের ফলে কিভাবে একটি ফুলের মতো জীবন অকালে ধ্বংস হয়ে যায়। তিনি শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে উপজেলার প্রতিটি ঘরে ঘরে বাল্যবিয়েকে না বলার শ্লোগান পৌছে দেয়ার মাধ্যমে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে উপজেলাকে বাল্যবিয়ে মুক্ত উপজেলা ঘোষণার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, বাল্য বিয়ে একটি জীবনকে অকালে নষ্ট করে দিচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশ জাতীর অনেক প্রতিভাবান কিশোর-কিশোরী অকালে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে। দেশব্যাপী এটি এখন একটি ভয়ানক মারাত্বক ব্যাধীতে রূপ নিয়েছে। অসেচতনাতাই বাল্যবিয়ের প্রধান কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, অভিভাবক মহল সচেতন হলে কিংবা শিক্ষার্থী, কিশোর-কিশোরীরা সচেতন হলে বাল্যবিয়ে থেকে নিজেদের দূরে রাখবেন। তাই আমি আগামী ডিসেম্বর মাসকে লক্ষ্য করে এর মধ্যে রাঙ্গুনিয়ার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করিয়ে একটি মেসেজই সকলের কাছে পৌছে দিতে চাই। ‘বাল্য বিয়ে মুক্ত সমাজ চাই।’ ‘আমরা আমাদের সন্তানদের অকালে ঝরে পড়তে দেবো না।’ ক্লাস নেওয়াকালে তিনি শিক্ষার্থীদের বলছেন, ‘তোমাদের আশেপাশে যখনই কোন বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটবে তখনই বাল্যবিয়ের ব্যাপারে আমাকে সরাসরি ফোন দেবে। নিজে বাল্য বিয়ে করবে না। অন্যকে বাল্যবিয়ের শিকার হতে দেবে না।’ একান্ত আলাপকালে ই্উএনও মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, বাল্যবিয়ে বন্ধে আমি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচারণার মাধ্যমে অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভা কিংবা একান্ত আলাপচারিতা বিভিন্ন সভা সমাবেশে বক্তব্য প্রদানকালে আমি বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার জন্য আহবান জানাচ্ছি। জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে আশানুরুপ ফল পাচ্ছেন বলেও তিনি জানান।
বাল্যবিয়ের ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পদক্ষেপকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাঙ্গুনিয়ার সচেতন মহল। তারা বাল্যবিয়ে বন্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাল্যবিয়ে বন্ধের ফেরিওয়ালা আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ যুগোপযোগী বলেও উল্লেখ করেন।