সুনামগঞ্জের ছাতকে পূর্ব বিরোধের জের ধরে দু’পক্ষের সংঘর্ষে মহিলাসহ অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত ৩০জনকে সিলেট ওসমানি মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার উপজেলার দোলারবাজার ইউপির পালপুর গ্রামে এঘটনা ঘটে। দু’ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকাগুলিও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পালপুর গ্রাম সংলগ্ন লায়েক-পতিত ভুমিতে বড় হওয়া কয়েকটি বন্য গাছ কেটে নেয়াকে কেন্দ্র করে প্রায় দেড়মাস আগে মৃত হারিছ আলীর পুত্র নুর মিয়ার সাথে পালপুর মাদরাসা কমিটির বিরোধ সৃষ্টি হয়। কমিটির দাবি হচ্ছে, লায়েক-পতিত ভূমির এসব গাছ বিক্রি করে বিগত দিনে মাদরাসার উন্নয়নে ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো কেটে নেয়ায় গ্রামে একাধিক সালিশ বৈঠক ডাকা হয়। এসব বৈঠকে উপস্থিত না হয়ে নূর মিয়া তার সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে ১৯নভেম্বর পালপুর জামে মসজিদে মাগরিবের নামাজ চলাকালে গ্রামবাসীর উপর হামলা চালায়। এতে ৫জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০জন আহত হন। এঘটনায় থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হয়। এরপর থেকে গ্রামের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পালপুর পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। প্রায় দু’সপ্তাহ নিয়মিত পুলিশ প্রহরা থাকাবস্থায় বিষয়টি আপোষে নিষ্পত্তির ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালান গন্যমান্য ব্যক্তিরা। গত দু’দিন থেকে উভয় পক্ষে আবারো উত্তেজনার ছড়িয়ে পড়ে। এরজের ধরে সোমবার (২৬ডিসেম্বর) সকালে নুর মিয়া পক্ষও আবুল হোসেন পক্ষের লোকজন সশস্ত্র সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েক রাউন্ড গুলি ও ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন জানান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে ২রাউন্ড টিয়ারসেলও ২রাউন্ড ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। দু’ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে গুরুতর আহত রাহিম উদ্দিন (৩৫), নোমান (২৮), সুন্দর আলী (৪৫), কয়েছ (২৫), জামাল আহমদ (৩০), এমরান (২৮), নুর মিয়া (৭৮), সিরাজ মিয়া (৩৩), আবুল হোসেন (৪৫), মইনুল হোসেন (৩৫), সেলিম (২৫), সুনু মিয়া (৪৫), সুফিয়া বেগম (৪০), জাহাঙ্গির (৩০), মইনুল (২২), তাহিদ মিয়া (৪২), নুরুল আলম (৩০), শাহ আলম (৩৫), হাছন আলী (৬৫), মিজানুর রহমান (২৫), হাসান (১৭), সোহেল (২২), আছলম আলী (৭০), রাজু আহমদ (২৫), সাইদুল (৩৫), ফয়জুল (৪০), আবুল কালাম-মোশাহিদ (৩৫), শরীফ আলম (৩০)কে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আজিজুর রহমান (৪০), আছদ আলী (৪৫), বশির আহমদ (৫৫), সাব্বির আহমদ (২৯), সমর উদ্দি (৪৫), শরিফ খান (৪০), কামরান আহমদ (২৫), ফখর উদ্দিন (৩৫), রুছমত আলী (৩০), কবির আহমদ (২০), নুর উদ্দিন (৪৫), হাসান (১৬), রাকিম আহমদ (৫৫), আবদুস ছালাম (৩০), জুয়েল আহমদ (২২), তোফায়েল (৩৫), কয়েস (২৫), সাইফুল (৩০), তাহিদ (৩২), শাফী (২৮), আব্দুল জব্বার (৩৫)সহ অন্যান্য আহতদের কৈতকসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। কৈতক হাসপাতালের ইনচার্জ ডাঃ মাজহারুল ইসলাম জানান, সংঘর্ষে আহত রোগীদের শরীরে একাধিক ¯িপ্রন্টার্স বিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে। নুর মিয়ার পুত্র মাহবুব জানান, প্রতিপক্ষের লোকজন তাদের উপর হামলা করার জন্য পরিকল্পনা করে আসছিল। নিরাপত্তার আশংকা নিয়ে তারা থানায় একটি জিডি করেন। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সোমবার সকালে তাদের বাড়ি ঘেরাও করে প্রতিপক্ষের লোকজন অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় তাদের বাড়ি লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলিও ছুঁেড় প্রতিপক্ষরা। এদিকে গ্রামবাসির পক্ষে আবুল হোসেন ও সাবেক মেম্বার আতিকুর রহমান জানান, পূর্ব বিরোধের জের ধরে সকালে নুর মিয়ার বাড়ির সামনে দিয়ে যাবার পথে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাদের পক্ষের মন্তাজ আলীর পুত্র রাকিম আলীর উপর ঢিল ছুঁরে তাকে গুরুতর আহত করে নুর মিয়ার লোকজন। এনিয়ে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে নূর মিয়ার পক্ষের লোকজন তাদেরকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলিও ককটেল নিক্ষেপ করে। গ্রামের আব্দুল জলিল মানিক জানান, তার সতের বছরের স্কুল পড়–য়া পুত্র হাসানকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে নুর মিয়া পক্ষের লোকজন পালিয়ে যায়। তার অবস্থা এখন আশংকাজনক। ছাতক থানার এসআই তরিকুল ইসলাম গুলি বিনিময়ের কথা অস্বীকার করে জানান, সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ দু’রাউন্ড টিআরসেল নিক্ষেপ করেছে। ছাতক থানার ওসি আশেক সুজা মামুন জানান, পরিস্থতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।