অর্থনীতি ডেস্ক : কাউকে পেছনে রেখে নয়, বরং সকলকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই কেবল টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জন করা সম্ভব। এর জন্য সরকার, বেসরকারি খাত, উন্নয়ন সহযোগি এবং নাগরিক সমাজকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
বুধবার রাজধানীর ফার্মগেট কৃষিবিদ ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত নাগরিক সম্মেলন-২০১৭ এর প্রারম্ভিক অধিবেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান,বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপপো, নারায়নগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি,সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এডভোকেট সুলতানা কামাল ও রাশেদা কে চৌধুরী, সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
‘বাংলাদেশের রূপান্তরমুখী অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন অন্বেষণে:কাদেরকে পেছনে রাখা যাবে না’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে-‘বাংলাদেশে এসডিজি বাস্তবায়ন,কাউকে পেছনে রাখা যাবে না’।
দিনব্যাপী সম্মেলনে প্রারম্ভিক অধিবেশনের পর পৃথক চারটি সমান্তরাল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।এগুলো হলো-অর্থনৈতিক প্রসঙ্গ,সামাজিক প্রসঙ্গ, জলবায়ু ও পরিবেশ প্রসঙ্গ এবং সুশাসন প্রসঙ্গ।
প্রারম্ভিক অধিবেশনের শুরুতে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন,এসডিজির মর্মবানী হলো-কেউ পেছনে পড়ে থাকবে না।দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষটিকে সার্বিক উন্নয়নে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।এর জন্য ব্যাক্তিখাত এবং নাগরিক সমাজের কন্ঠস্বর শক্তিশালী করা জরুরী।
তিনি এসডিজির সব লক্ষ্য অর্জন তথা সবার জন্য উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকার,বেসরকারিখাত,উন্নয়ন সহযোগি এবং নাগরিক সমাজকে অংশীদারিত্বেরভিত্তিতে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
দেবপ্রিয় বলেন,গত কয়েক বছরে আমরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ওপরে নিয়ে গেছি।গড় আয়ও বেড়েছে। কিন্তু এই গড় আয়ের হিসাব করলে আমরা সবার উন্নয়ন সম্পর্কে ধারনা পাবো না। কেননা গত কয়েকবছরে সম্পদ ও আয় বৈষম্যও অবিশ্বাস্যভাবে বেড়ে গেছে। তাই পিছিয়ে পড়া মানুষকে উন্নয়ন ভাবনায় অন্তর্ভুক্ত না করলে কেবল উচ্চ প্রবৃদ্ধি দিয়ে এসডিজি অর্জন সম্ভব হবে না।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন,আমাদের সঠিক তথ্য-উপাত্তের অপ্রতুলতা রয়েছে। সবাইকে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশীজন করতে তথ্য-উপাত্ত বাড়াতে হবে। তিনি এসডিজি অর্জনে সরকার ও বেসরকারি পর্যায়ের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন,পৃথিবীর বেশিরভাগ সম্পদ অল্প কিছু মানুষের হাতে কেন্দ্রিভূত। এটাকে সুষম উন্নয়ন বলা যায় না।সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য তিনি সুশাসন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
নারায়নগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি বলেন,উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সব মানুষকে শামিল করতে পারলে প্রকৃত উন্নয়ন হয়।এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার হতে পারে বড় মাধ্যম।স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত এবং উপযুক্ত কর্মসূচি গ্রহণ সহজ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে এসডিজির লক্ষ্যসমূহের মিল রয়েছে। সেখানে যেমন ন্যায্যাতা সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে-এসডিজিরও মূল্য লক্ষ্য সবার জন্য উন্নয়ন নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, কেবল গড় প্রবৃদ্ধি বা গড় আয়ের অগ্রগতির ঘরে পড়ে থাকলে আমরা ভুল করবো। প্রান্তিক বা দূরবর্তী মানুষের জন্য উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। এজন তিনি সবার জন্য উপযুক্ত অবকাঠামো ব্যবস্থা গড়ে তোলার সুপারিশ করেন। বাসস