মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে ‘অতি নিকটেই’ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল আলোচনায় এই মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “মানবাধিকার লঙ্ঘন আজকে আওয়ামী লীগের একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তারা সংবিধান লঙ্ঘন করছে।
“এজন্যই তাদেরকে অবশ্যই একদিন না একদিন অতিনিকটে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।”
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “আমাদের নেত্রী যিনি দীর্ঘ ৯ বছর সংগ্রাম করেছেন গণতন্ত্রের জন্যে, তাকে সম্পূর্ণ বিনাদোষে মিথ্যা মামলা দিয়ে আজকে আটক করে রাখা হয়েছে দীর্ঘ দুই বছর ধরে।
“আজকে ৩৫ লক্ষের ওপরে মানুষকে মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে, এক লক্ষের উপরে বেশি আসামি। প্রায় ৯‘শ মতো মানুষ গুম হয়ে গেছে, হত্যা হয়েছে হাজার হাজার।”
গুম হওয়া পরিবারের আহাজারির কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “কিছুক্ষণ আগে আমাকে ফোন করেছিলেন আমাদের আরেকজন মুন্না, আমার পাশেই থাকে দক্ষিণখানে। বলছিলেন যে, ‘বাবা আমার ছেলেটা হারিয়ে যাওয়ার ৮ বছর হল, তাকে খুঁজতে গিয়ে বাবাও হারিয়ে গেল’।
“এই যে ডিজএ্যাপিয়ারেন্স। তাদের অপরাধ- তাদের সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক চিন্তা ছিল, সরকারের মত থেকে ভিন্নমত পোষণ করতো। এই কারণে তাদেরকে হারিয়ে যেতে হয়েছে, খুন হতে হয়েছে।”
দলীয় নেতা এম ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার ঘটনা স্মরণ করে ফখরুল বলেন, “আজকে ইলিয়াস আলীর বাসায় যখন আমি যাই গুম হওয়ার দিনটিতে, আমার তখন মনে আছে তার ছোট্ট মেয়েটি যার বয়স ৬ বছর ছিল এখন তার বয়স প্রায় ১৩/১৪ বছর, তার চোখের দিকে আমি তাকাতে পারি না।”
নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংসের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আজকেও (বৃহস্পতিবার) একটি নির্বাচন হচ্ছে- পৌর নির্বাচন। ২২টি পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে। আমি ইতিমধ্যে যা খবর পেয়েছি যে প্রায় প্রত্যেকটি পৌরসভায় সরকারি দলের লোকেরা দখল করে নিয়েছে পুলিশের সাহায্যে, রাষ্ট্রের সাহায্যে।”
সম্প্রতি ভাস্কর্য ভাঙার অভিযোগ একটি মামলা দায়েরের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “কয়েকদিন আগে আমার চেয়ারম্যান দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং আমার বিরুদ্ধে আরও একটি নতুন মামলা আওয়ামী লীগের একটি সংগঠনের প্রেসিডেন্ট করেছেন যে আমরা নাকি উস্কানি দিয়েছে এই সমস্ত অপকর্ম যেটা আওয়ামী লীগ করছে, সেই অপকর্মগুলোতে। এ্ভাবেই বাংলাদেশ চলছে।”
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, “আজকে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের অধিকারগুলোকে ফিরিয়ে আনতে হবে।”
ভার্চুয়াল এই সভায় ‘অ্যাবসেন্স অব ডেমোক্রেসি এন্ড সিস্টেমেটিক হিউম্যান রাইটস ভায়োলেশন্স বাই স্টেট এপারেটাস’ শীর্ষক গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়।
বিএনপির মানবাধিকার টিমের সম্পাদনায় এই ১১৬ পৃষ্ঠার মধ্যে ২০০৯ সা্ল থেকে ২০২০ সালের মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা ঘটনা ও তথ্য প্রমাণাদি তুলে ধরা হয়েছে। গ্রন্থটির আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
ভার্চুয়াল আলোচনায় ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, তুরস্ক, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, জাপান, ওমান, ফিলিস্তিনের কূটনীতিক এবং জাতিসংঘ, আইআরআই, আইসিআরসি মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা যুক্ত হয়েছিলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামানের পরিচালনায় এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গুম হওয়া ইলিয়াস আলীর ছেলে আবরার ইলিয়াস ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি, পুলিশি নির্যাতনে গুরুতর আহত ছাত্রদল নেতা জাহাঙ্গীর আলম বক্তব্য রাখেন।
সূত্র, বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম