ইউ.এ.ই. প্রতিনিধি : সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে, হত দরিদ্র প্রবাসীরা মাতার ঘাম পায়ে ফেলে হাজারও দুঃখ, কষ্ট সয়ে, ‘মা-বাবা, ভাই-বোন, গরীব আত্মীয় স্বজন’দের জন্য পাঠানো পণ্য চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পণ্য খালাসের নানাবিদ জুট-জামেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার পণ্য সামগ্রী। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসকারী কার্গো ব্যবসায়ীরা চরম উৎকণ্ঠার সাথে দিন যাপন করছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবী, দুবাই, শারজাহ, আল-আইনসহ বিভিন্ন কার্গো ব্যবসায়ীরা বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে কার্গো ব্যবসার সাথে জড়িত। কিন্তু তাদের ব্যবসায় এমন একটি কালো অধ্যায় নেমে আসবে তা কখনো কল্পনাও করেনি। গত ১ জুন ২০১৫ থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে আটকা পরা পণ্য সামগ্রীর সন্ধানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কার্গো ব্যবসায়ীদের অফিসে গ্রহকেরা ভিড় করে এবং গাল-মন্দসহ হুমকি-দমকি দিচ্ছে। এমত অবস্থায় তারা কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না বলে জানান।
কার্গো ব্যবসায়ীরা আরোও জানান গত ১ জুন ২০১৫ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কাস্টম কর্মকর্তা এবং সিএন্ডএফ কর্তৃপক্ষের মধ্যে লেন-দেন সংক্রান্ত বিষয়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। সেই অসন্তোষের সূত্র ধরে গত জুনের ১ তারিখ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে কার্গো বিমানে পাঠানো সব পণ্য সামগ্রী সরকারী নানা শর্তের বেড়াঝালে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কাস্টম হাউজে আটকা পড়ে আছে।
কার্গো ব্যবসায়ীরা আরও জানান বেশীর ভাগ পণ্য সামগ্রী ইতিমধ্যে মেয়াদ উর্ত্তীণ হয়ে খাওয়া বা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে গ্রাহকেরা দিন দিন ধর্য্য হারা হয়ে কার্গো মালিক এবং কর্মচারীদের উপর চড়া হচ্ছে। কার্গো ব্যবসায়ীদের অভিমত এই সমস্যার সমাধান দ্রুত না হলে প্রবাসে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার জন্মদিতে পারে এবং প্রবাসে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার আশংকা প্রকাশ করেছে। (ইতিমধ্যে ইমেজ সংকটে কারণ সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশীদের ভিসা বন্ধ রয়েছে) ইতিমধ্যে ছোট ছোট বেশ ক’টি কার্গো ব্যবসায়ীরা তাদের কার্গো অফিস বন্ধ করে দিয়েছে। এমতাবস্থায় চলতে থাকলে ছোট-বড় সকল কার্গো অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা প্রকাশ করেছে। কার্গো প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে গেলে নানাবিদ সমস্যা ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্থ হবে প্রবাসী বাঙালিরা এবং রাজস্ব হারাবে বাংলাদেশ সরকার।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থানরত কার্গো ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ কার্গো সার্ভিস এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দরা, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে আটকা পড়া পণ্য সামগ্রী বিষয়ে, ইতিমধ্যে দুবাইস্থ কনস্যুলেট জেনারেলের সাথে দু’ই দু’ইবার বৈঠক করেও সৃষ্টি সমস্যার কোন সমধান খুঁজে পায়নি। কার্গো মালিকদের অনেকেই দেশে ছুটে গিয়ে উচ্চ পর্যায়ের অনেক সরকারী কর্মকর্তাসহ রাজনৈতিক নেতাদের স্বরণাপর্ণ হয়েও সৃষ্ট সমস্যার সমাধান করতে পারেনি বলে জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কার্গো ব্যবসায়ী বলেন দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা এলেই তার মন আর ভালো থাকে না! কারণ, সন্ধ্যায় গ্রহকেরা অফিসে বিড় জমায় এবং গালমন্দ করে তা নিরবে শুনতে বা সয্য করতে হয়! এখন আল্লাহর কাছে অবিরত প্রার্থনা করেন আল্লাহ যেন এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দেয়।
গত ২৩ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবীতে এক কার্গো অফিসে বসেছিলাম। কার্গো মালিক, কর্মচারী এবং গ্রহকদের দুঃখের অবস্থা দেখে আমার হৃদয় কেঁদেছে। কার্গো মালিকসহ কর্মচারীরা গ্রাহকদেরকে বুঝানোর প্রাণ-প্রণ চেষ্টা এবং অন্যদিকে গ্রাহকেরা কেউ কেউ উচু স্বরে, কেউ আবার কান্না স্বরে আবেদন-নিবেদন করে যাচ্ছে। কয়েক জন গ্রাহকের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা রমজান এবং ঈদের জন্য পরিবার, পরিজন, আত্মীয়, স্বজনদের জন্য পাঠানো পণ্য সামগ্রী পাঠিয়েছিল কিন্তু রমজান পার হয়ে কোরবানীর ঈদ সন্নিকটে এলেও তাদের পণ্য সামগ্রী আজও পাচ্ছে না! ১৫ দিনের কথা বলে কার্গো মালিকেরা পণ্য নিয়েছিল কিন্তু আজ কত দিন হল? আর পণ্য সামগ্রীগুলো পেলেও ব্যবহারের উপযুক্ত থাকবে কি না সন্দেহ প্রকাশ করেছে। কেননা ইতিমধ্যে বেশির ভাগ পণ্য মেয়াদ উর্ত্তীণ হয়ে গেছে, তার উপর পণ্যগুলো কোথায় কি অবস্থায় আছে, আল্লাহ ভালো জানে। একজন গ্রাহক বলেন তিনি ১ মাসের মধ্যে তার পণ্য না পেয়ে মনে মনে ভেবেছিল হয়তো কার্গো মালিকেরা বেশি লাভের জন্য বিমান কার্গোর টাকা নিয়ে পানির জাহাজ কার্গোতে পাঠিয়েছে। এখন মনে হচ্ছে কার্গো মালিকেরা আমাদের পণ্য সামগ্রীগুলো খেয়ে ফেলেছে! হয়তো তারা পাঠায় নি! আমার টাকাগুলো এবং পণ্যগুলো সব খেয়ে ফেলেছে।
আমার সব চেয়ে বেশি খারাপ লেগেছে একজন গ্রাহকের কথা শুনে। গ্রাহক বলেন তার বাবা অসুস্থ ছিল তাই বাবার জন্য ভালো ভালো বেশ কিছু বিদেশী খাবার পাঠিয়েছিল এই কার্গো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কিন্তু কিছু দিন পূর্বে তার বাবা তাদেরকে ছেড়ে (পৃথিবী ছেড়ে) চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তার বাবা পণ্য সামগ্রীগুলো আহরণ করবে-তো দূরের
কথা, পণ্যগুলো দেখেও যেতে পারেনি বলে কান্না করলেন! আরেক গ্রাহক বললেন আমার জমানো সব টাকা দিয়ে বউ, বাচ্চার ঈদের জন্য পণ্য সামগ্রী পাঠিয়েছিলাম কিন্তু তা আজও পায়নি এবং আমার পরিবার পুরানো কাপড় এবং পুরানো পণ্য সামগ্রী দিয়ে ঈদ যাপন করে। তার উপর বউ বাচ্চার আভিযোগ হয়তো আমি কোন কিছুই পাঠায়নি!
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টমে আটকা পরা পণ্যের ব্যপারে কার্গো ব্যবসায়ী এবং কার্গোতে পণ্য সামগ্রীদাতাদের সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন।