তাহিরপুর(সুনামগঞ্জ) থেকে :: ছিলটি ভাষা একটি প্রাচিন এতিহ্যবাহি ভাষা স্বয়ং সম্পুনর্ ভাষা।এ ভাষার রয়েছে নিজস্ব
বর্ণমালা অতচ অনেক সিলেটিরা-ই তা জানেন না। সিলেটিদের আঞ্চলিক ভাষার আলাদা বর্ণমালার নাম নাগরী লিপি।এক সময় সিলেট সহ ভারতের আসাম ত্রিপুরায় বসবাস রত সিলেটিরাও নাগরী লিপির ব্যবহার জানত অতচ প্রাচিন এই ইতিহাস হারাতে বসেছে সিলটি সম্প্রদায় । ভাষা গবেষকদের মতে খ্রিষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দির মধ্যবর্তি সময়ে জটিল সংস্কৃত প্রধান বাংলা বর্ণমালার বিকল্প লিপি হিসাবে’ সিলটী নাগরীর” লিপির উদ্ভাবন হয়েছিল বলে ধারনা করা হয়।বাংলা ,কাইথী,দেবও আরবী এ চার লিপির প্রভাবে সিলেটি নাগরীর উদ্ভাবন হয়।সিলেটি ভাষার লিখিতরূপ প্রদানকারী নাগরী লিপির ৩২টি বা বর্ণ রয়েছে। বর্ণগুলো হচ্ছে আ ই উ এ ও ক খ গ ঘ চ ছ জ ঝ ট ঠ ড ঢ ত থ দ ধ ন প ফব ভ ম র ল ড় শ হ। স্বরবর্ণ ৫টি (অ ই ঈ উ ঊ) কিন্তু সিলেটের বর্ত মান প্রজন্ম তাদের নিজস্ব ভাষালিখতে পড়তে জানেন না।মুখে থাকলেও লেখার প্রচলন উঠে গেছে বললেই চলে।সিলেটী নাগরী লিপির ব্যবহার শুধু মুসলমানদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এ-ই লিপি বাংলালিপির বিকল্প হিসেবে প্রচলিত এক স্বতন্ত্র লিপিমাত্র।আঠারও উনিশ শতকে সিলেটের বাইরে কিশোরগঞ্জ নেত্রকোণা
,ময়মনসিংহ ও কাছাড় অঞ্চলে এ লিপি প্রচার ও প্রসার লাভ করেছিল।নাগরী লিপি লিখতে সহজ ছিল বিধায় এটি ছিল খুবই জনপ্রিয়।ঐ সময়ে জনশ্রুতি আছে যে- নাগরি লিপি মাত্র আড়াই দিনেশেখা যায়।এর উৎপত্তিকাল খুব প্রাচীন না হলেও নাগরী সাহিত্যের বৈশিষ্ট্যের বিচারে বলা যায় এ লিপি চালু হয়েছে সতের শতকে|ডক্টর সুনীতিকুমার চট্রোপাধ্যায় খৃষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীকেসিলেটে এই লিপির প্রচলনকাল বলে অনুমান করেন। আবার কেউ কেউ হযরতশাহজালালের সাথে এই লিপির সিলেটে আগমনেরও ধারনা করে থাকেন বস্তুত,আঠার ও উনিশ শতকে সিলেটী নাগরী চর্চা ব্যাপক প্রসার লাভ করে। উনিশ শতকের শেষে সিলেটে ও কলকাতায় নাগরী লিপির ছাপাখানাও প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে ভারত বর্ষের অন্যান্য অঞ্চলেও নাগরী পুঁথি ও লিপির প্রচার ঘটে । ফ্রান্সের বিখ্যাত ভাষা যাদুঘরে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার উদৃতি রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের ভাষার বিবরণে উল্লেখ রয়েছে- বাংলাদেশে দুটি ভাষা প্রচলিত। এর একটি বাংলা এবং অন্যটি সিলেটি।
সিলেটি ভাষা নিয়ে দেশ- বিদেশে চলছে গবেষণা ।সিলেটি ভাষার উপর এ পর্যন্ত বেশ ক’জন পিইএচডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন। এর মধ্যে বৃটিশ নাগরিকও রয়েছেন।সিলেটি ভাষার উপর ইতিমধ্যে যারা পিএইচডি নিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন আব্দুল মোছাব্বির ভূঁইয়া।তিনি ভারতে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি নিয়েছেন মোহাম্মদ সাদিক, তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকরছেন।১৯৮৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি নিয়েছেন এস এম গোলাম কাদের । বৃটিশ নাগরিক জেমস লয়েড উইলিয়াম লন্ডনের সোয়াস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেছেন। এছাড়া সোয়াস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করছেন সাংবাদিক মতিয়ার চৌধুরী ও রূপা চক্রবর্তি। বৃটেনে সিলেটি ভাষা শিক্ষার কয়েকটি ইন্সটিটিউট থাকলেও বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সিলেটি ভাষা শিক্ষার কোনো ক্ষেত্র নেই। যার ফলে সিলেটি ভাষা মানুষের মুখে থাকলেও এর বর্ণমালা (নাগরী লিপি) অনেকটা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। হারিয়ে যাচ্ছে এর ইতিহাস। সম্প্রতি প্রবাসে অবস্থান রত ইতিহাস বিদ ডক্টর মুমিনুল হক ”নাগরীবর্ণে সিলটি ভাষা স্বীকৃতি পরিষদ’র”ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ সিলেট মৌলভীবাজার হবিগঞ্জ সুনাম গঞ্জের জেলা উপজেলা স্কুল কলেজ পর্যায়ে কমিট গঠন করে সোচ্চার করে তুলেছেন শিকর সন্ধানী সিলেটিদের।এছাড়া নাগরী বর্ণে সিলেটি ভাষার স্বীকৃতির দাবীতে মাননীয়া প্রধান মন্ত্রীকে স্বারক লিপি প্রদান করে নাগরীবর্ণে সিলটি ভাষা স্বীকৃতি পরিষদ|