সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা, ষড়ঋতুর নয়নাভিরাম একটি দেশ, আমাদের বাংলাদেশ। নদীমাতৃক এই দেশের অধিকাংশ মানুষ বসবাস করে গ্রামে। প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালি কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল এবং এই অর্থনীতির সম্পূর্ণ কোনো বিকল্প ব্যবস্থা অদ্যাবধি গড়ে উঠে নাই। এই জন্য কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির গুরুত্ব এখানে আবহমানকাল থেকেই অত্যন্ত বেশী। এদেশের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনায় রচিত যে মহাকাব্য গ্রামীণ জীবনকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত রয়েছে চিরকাল। আজও বাংলায় ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে আমাদের সকলের চেহারায়, চালচলনে ও স্বভাবে গ্রাম্য জীবনের ছাপ ও প্রভাব সর্বত্র লক্ষণীয়। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, গ্রামীণ লোকায়ত জীবন ব্যবস্থা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি এই জাতির লক্ষ্য নির্ধারণে অমূল্য পাথেয়স্বরূপ। গার্মেন্টসসহ নানা শিল্প ও প্রবাসীদের বৈদেশিক আয়ে দ্রুত এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ তবুও বাঙালি গর্ববোধ করে কৃষি-প্রধান একটি দেশ হিসেবে নিজেদেরকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচয় দিতে।
আদিকাল থেকে বাংলার কিষান-কিষাণী ফসলের মাঠে অক্লান্ত পরিশ্রমের পর দেহে প্রাণ সৃষ্টি করতে বিনোদনে চর্চা করে আসছে লোকজ ক্রীড়া। ছয়টি ঋতুর আবর্তে সম্পূর্ণভাবে প্রভাবিত বাংলার জীবন ও পরিবেশ। একসময় এখানে পরিস্থিতি ও অবসর মুহূর্তকে আনন্দময় করে তুলতে নানারকম খেলাধুলার সৃষ্টি হয়েছে। দেহ ও মনের ধরণ অনুযায়ী এবং সময়ের প্রতি খেয়াল রেখে এই সকল গ্রামীণ খেলা যা লোক-ক্রীড়া, লোকজ-ক্রীড়া বা লোকায়ত-ক্রীড়া নামে পরিচিত উৎপত্তি, বিকাশ, আয়োজন ও লালন-পালন হয়ে আসছে সেই হাজার বছর আগে থেকেই। গ্রাম বাংলার লোকায়ত খেলাগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীনও বটে। কত রকমের যে লোকজ খেলা বাংলায় প্রচলিত ছিল, তার কোনো হিসেব নেই। এই সকল ক্রীড়ার মধ্যে সর্বপ্রাচীন এবং সব থেকে জনপ্রিয় হলো আমাদের জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু বা কাবাডি। যা বিশ্ববাসীর কাছে বলার মতো গর্বের আরেকটি বিষয়। কাবাডির জনপ্রিয়তা এখানেই সীমাবদ্ধ নয় বরং বিশ্বের অনেক দেশে এর জনপ্রিয়তা রয়েছে তুঙ্গে। আমাদের জাতীয় মেলবন্ধন, ভালবাসা ও সম্মানের সাথে মিশে আছে হা-ডু-ডু খেলা। বিশ্বে এর নাম “HOLDING OF BREATH ” বা “দমের খেলা” কখনও একে “GAME OF THE MASSES” বা “গণ-মানুষের খেলা” নামেও বর্তমানে পরিচিতি রয়েছে। এর সহজ নিয়ম কানুন, জনপ্রিয়তা ও সরলতা গ্রাম্য লোকের আপন বিধায় একে গ্রাম বাংলার খেলাও বলা হয়ে থাকে।
ধারণা করা হয়, মানুষ প্রাগৈতিহাসিক যুগে যখন খাদ্য সংগ্রহের পাশাপাশি একক বা দলীয়ভাবে শিকারে যেত অথবা অন্য কোন বন্য প্রাণীর আক্রমণ থেকে ফসল বা নিজেকে রক্ষা করার কৌশল শিখতে গিয়ে কাবাডি খেলার সূচনা করেছিল। এতে কোন দ্বিমত নাই, বিশ্বের সর্বপ্রাচীন ও সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাগুলোর একটি আমাদের জাতীয় খেলা কাবাডি বা হা-ডু-ডু। এই বিষয়ে ঐতিহাসিকদের কাছে শক্ত প্রমাণ রয়েছে দাবী করা হয়, কাবাডির বয়স কমপক্ষে চার হাজার বছর। বর্তমানে এই খেলা জাপান, কোরিয়া, চায়না, কানাডা, ব্রিটেন সহ আফ্রিকার অনেক দেশেও নিয়মিত হয়ে থাকে। আমাদের কাবাডি একেক দেশে একেক নামে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানে কাবাডি কিন্তু নেপালে ডুডু, শ্রীলংকায় গুডু-গুডু, থাইল্যান্ডে থীকাব ও মালয়েশিয়ায় ছি-গুডু-গুডু নামেই বেশী পরিচিত। থাইল্যান্ডে এটি উৎসবের অংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় বীচ কাবাডির জনপ্রিয়তা অত্যন্ত বেশী।
ব্রিটিশ আগমনে এ অঞ্চলে বিভিন্ন বিদেশী খেলাধুলার প্রচলন ঘটে। ব্রিটিশরা শাসন-শোষণের পাশাপাশি বিনোদন হিসেবে তাদের নিজস্ব খেলাধুলা এ অঞ্চলে আয়োজন করতে থকে। ভারতবর্ষে ১৯১৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় কাবাডি খেলা। ১৯২৩ সালে ভারতের একজন খ্যাতনামা বাঙালী, সমাজসেবী এবং শিক্ষক কলকাতা ও তৎকালীন পূর্ব বাংলায় হা-ডু–ডু খেলার প্রচলন ও প্রসারে সমগ্র বাংলার তরুণদের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। কাবাডির প্রতি সারা বাংলার মানুষের ভালবাসা ও ব্যাপক জনপ্রিয়তার ব্যাপারটি ভালভাবে নেয়নি ব্রিটিশ সরকার। ১৯৩০ সালে ব্রিটিশের এক আদেশ বলে কাবাডি খেলা ভারতবর্ষে নিষিদ্ধ করা হয়। বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন তৎকালীন বাঙালি জাতীয়তাবাদী নেতারা। শুধুমাত্র বাঙালির প্রাণের এই হা-ডু-ডু খেলাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন। মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু বাঙালির এই আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন প্রদান করেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও ছিলেন আন্দোলনের পক্ষে সোচ্চার। এক পর্যায়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকারে বাধ্য হয় ব্রিটিশ সরকার। মাত্র এক বছরের মাথায় ১৯৩১ সালে কাবাডি খেলার ওপর থেকে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। শুরু হয় সারা বাংলায় আনন্দ ও উল্লাস। ভারতে ১৯৩৮ সালে অলিম্পিক এসোসিয়েশন যে সকল খেলার আয়োজন করে, তাতেও অন্তর্ভুক্ত ছিল বাংলার কাবাডি খেলা। ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ ছেড়ে চলে যাবার আগে এভাবেই বাংলার এই লোকজ ক্রীড়াটি সমগ্র ভারতবর্ষসহ সারা বিশ্বের সবার নজরে আসে, সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ও মর্যাদার আসন লাভ করে।
বাঙালি জাতীয়তাবাদের চরম উন্মেষ ঘটে মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে লাখো শহীদের রক্তে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাক হানাদারদের পরাজিত করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের একক একটি রাষ্ট্র হিসেবে পরিপূর্ণতা লাভ করে বাংলাদেশ। ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমান বাঙালির ঐতিহাসিক হা-ডু-ডু খেলাটিকে বাংলাদেশের জাতীয় খেলাতে উন্নীত করেন। তখন থেকেই হা-ডু-ডু খেলা কাবাডি নামকরণ হয়ে আমাদের জাতীয় জীবনে পথ চলা শুরু করে। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের পূর্ণগঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ক্রীড়াঙ্গনে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে প্রথম আন্তর্জাতিক কাবাডি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ভারতীয় দল বাংলাদেশে এসে ঢাকা, টাঙ্গাইল, দিনাজপুর, যশোর, ফরিদপুর ও কুমিল্লা জেলা দলগুলোর সঙ্গে খেলায় অংশগ্রহণ করে। ঐতিহ্যগতভাবে কৃষক পরিবারের সন্তান বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন তাতে অন্তর্ভুক্ত ছিল কৃষকের প্রাণের খেলা কাবাডি। কিন্তু ৭৫’ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলে তাঁর এতদিনের কৃষিনির্ভর সোনার বাংলা গড়ার লালিত স্বপ্ন অংকুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে বৃহত্তর ফরিদপুরে কাবাডি খেলার প্রথম সূচনা হয় বলে জানা যায় আবার অনেকে বলেন হা-ডু-ডু খেলা প্রথম হয় বরিশালে। সেখান থেকেই সর্বত্র খেলাটি প্রচলিত হয়ে পড়ে। একসময় বাংলার অনেক অঞ্চলে এ ক্রীড়াটিকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হতো নান রকম উৎসবের আমেজ। গ্রামীণ বিত্তবান সমাজ এ আয়োজনের পৃষ্ঠপোষক হতেন। পুরস্কার হিসেবে ঘোড়া, গরু, ছাগলসহ নানা রকম নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য দেয়া হতো। পরবর্তীতে বাংলার জমিদারগণ এতে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে শুরু করেন। তবে ভারতীয় অনেক ঐতিহাসিক দাবী করেন, কাবাডি খেলার মূল উৎপত্তি স্থল পাঞ্জাব। এটি আরম্ভ হয় তামিলনাড়ুতে- ভারতবর্ষে অনেক প্রচলিত আরেকটি ধারণা। কাবাডি খেলার উৎপত্তি সম্পর্কে হিন্দু শাস্ত্রীয় একটি মত হচ্ছে, মহাভারতে বর্ণিত অভিমন্যু কর্তৃক কৌরব সৈন্যদের চক্রব্যূহ ভেদ করার ব্যর্থ চেষ্টার ঘটনা থেকে ধারণা নিয়ে এই ক্রীড়ার সৃষ্টি হয়। তাদের মাঝে আরেকটি মত বলে হিন্দু ভগবান কৃষ্ণ বিনোদন ও রোমাঞ্চকর অনুভূতির জন্য একরকম একটি লীলা করতেন, যা অনেকটা কাবাডির অনুরূপ। এদিকে বৌদ্ধ সাহিত্যে লেখা আছে, গৌতম বুদ্ধ সুস্থ দেহ, মন এবং দৃঢ় চরিত্র গঠনে তরুণ বয়সে কাবাডি খেলতেন। এখানকার মুসলিম অনেক ঐতিহাসিকগন বলেন যে, সমগ্র ভারতবর্ষের উন্নত জীবন-ব্যবস্থা, বিনোদন ও সংস্কৃতি এসেছে মূলত: আর্যদের মাধ্যমে ভারতবর্ষে। অতএব নিঃসন্দেহে বলা যায় কিভাবে সকল ভেদাভেদ ভুলে এই খেলাটি সকল গণ-মানুষের কাছে সমান জনপ্রিয়তা ও আস্থা অর্জন করেছিল। বিশ্বে একসময় বাংলাদেশই ছিল শ্রেষ্ঠ শক্তিধর দেশ। কিন্তু সামান্য সময়ের ব্যবধানে কাবাডি খেলায় এই শ্রেষ্ঠত্ব তুলে নিয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। বর্তমানে বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রশক্তি ইরান, পাকিস্তান, জাপানের কাছেও অনেকসময় আমাদের বাহিনীগুলো অনবরত মার খাচ্ছে।
কাবাডি একটি দলীয় খেলা যেখানে খরচ বলতে কিছু নেই এবং সম্পূর্ণ অনাড়ম্বর বলে আয়োজনেরও খুব বেশী প্রয়োজন নেই। তবুও যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন জাতীয় বাজেটে তা সংকুলান ছাড়া বাংলাদেশ কাবাডি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও অবদান কখনোই রাখতে সম্ভব হবে না। অন্যদিকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনই জাতীয় ক্রীড়া কাবাডির অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক করা আবশ্যক। একই সাথে গ্রাম বাংলার ক্রীড়াঙ্গনে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি আবহমান বাংলার লোকক্রীড়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখাও প্রয়োজন। বাংলার উন্মুক্ত মাঠ-ঘাট-প্রান্তরে, স্কুল-কলেজে, বাড়ির আঙিনায় এমনকি সামান্য এক চিলতে জমি পেলেও কাবাডির আয়োজন করা যায়। তবে এই খেলায় সফলতার পূর্বশর্ত শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতা, পেশীর ক্ষিপ্রতা, ফুসফুসের শক্তি ও সহনশীলতা, দ্রুত চিন্তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং প্রয়োগের সামর্থ্য; সর্বোপরি প্রতিপক্ষের কৌশল ও প্রতিটি মনোভাব অনুধাবনের যোগ্যতা।
বাঙালির জাতীয় খেলা কাবাডি নিয়ে সরকারী ও বেসরকারি মনোভাব কখনও পরিষ্কার ছিল না এবং একশ্রেণীর মানুষের মনোভাব আজও পরিচ্ছন্ন নয়। দুঃখজনক হলেও সত্যি স্বাধীনতার পর থেকে আজও এই বিষয়ে এই জাতি চরম উদাসীনতা ও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আমাদের জাতীয় কোন বিষয় এত অবহেলার স্বীকার হয় নাই যতটুকু হতে হয়েছে জাতীয় খেলা কাবাডিকে। শাপলা থেকে দোয়েল চত্বর এমনকি সুন্দরবনের বাঘ পর্যন্ত ঢাকা শহরে স্থান করে নিয়েছে কিন্তু দেশের কোথাও বাঙালির কাবাডির কোন স্থান হয় নাই। ঢাকার স্টেডিয়াম পাড়ায় যতটুকু না দিলেই নয় শান্তনাস্বরূপ এমন একটি ছোট্ট স্টেডিয়াম তৈরি করে দেয়া হয়েছে তাও একেবারে শেষ মাথায় অনেকটা লোকচক্ষুর অন্তরালে। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। তাই সরকারি ভূমিকা ও পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এখন এগিয়ে আসা দরকার। অন্যদিকে মিডিয়ার কাছে প্রত্যাশা এখন, কৃষি ও গ্রামীণ ঐতিহ্যের আমাদের জাতীয় খেলাকে নিয়ে বাংলাদেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জোর প্রচার ও প্রচারণা চালাতে তারা স্ব-উদ্যোগী হবেন। কিছুদিন আগে বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতে স্বনামধন্য জাতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা এবং নির্মাতা থেকে শুরু করে সেদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার পর্যন্ত কাবাডি খেলার আয়োজনে এগিয়ে আসলে তাবৎ বিশ্বের ক্রীড়াঙ্গনে এর ভিন্ন বার্তা ও ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়। সমগ্র ভারতের গণ-মানুষ মনে করে আজও এই খেলাটি তাদের আত্মার খোরাক যোগায়।
একটি বিশ্বকাপ সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে আয়োজক দেশের ক্রমাগত জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি তৈরি ও আস্থা অর্জনে সাহায্য করে। বহুমুখী লাভের মাঝে সেখানে নতুন করে উৎপাদন ও আয়ের পথ সৃষ্টি হয়। প্রথমবারের কাবাডি বিশ্বকাপ বাংলার গ্রামীণ জীবনে যে প্রভাব ও বিনিয়োগ হবে তার পরিমাপ হবে বিশাল। নয়নাভিরাম বাংলাদেশ প্রধানত: একটি কৃষি নির্ভর দেশের মডেল হয়ে গড়ে উঠলে দেশের জন্য তা কল্যাণকর হবে। আমি এই লেখার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো জাতীয় খেলা কাবাডির বিশ্বকাপ আয়োজক দেশ হতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল মহলের কাছে বিনম্র শ্রদ্ধা রেখে অনুরোধসহ প্রস্তাব করছি। স্বাধীনতার অনেক বছর পরে এই সরকারের হাতেই ২০১১-১২ এবং ২০১২-১৩ উভয় অর্থবছরে দেশের ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপাদন করা সম্ভবপর হয়। প্রায় ১৭ কোটির এই বাঙালি জাতি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পরে এই প্রথম বিদেশেও রফতানি করে। কৃষিতে এই সাফল্য ও আগামীতে এই অর্জন ধরে রাখতে এখনই এই দেশে কৃষি নির্ভর জীবন ব্যবস্থার দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব ও প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আগের বারে ক্ষমতায় এলে বঙ্গবন্ধু তনয়া ১৯৯৯ সাল থেকে আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতায় কাবাডি খেলার অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক করেছিলেন। আমাদের প্রত্যাশা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতেই জাতীয় এই খেলাটির বিশ্বকাপ আয়োজন, গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে এবং এদেশের কৃষিতে সবচেয়ে বেশী উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। ক্রীড়া জগতে বাংলাদেশের গৌরব ও সম্মান অব্যাহত রাখতে প্রথমবারের মতো কাবাডির বিশ্বকাপের আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।