সুলতান মাহমুদ:: কে জানত নবীগঞ্জে লন্ডন প্রবাসীর বাড়িতে শেষ সফর হবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর। গত ৩০ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেলে নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের উমরপুর গ্রামের ইউপি সদস্য সাইদুর রহমানের ভাই লন্ডন প্রবাসী সৈয়দুর রহমান সাঈদ এর ব্যক্তিগত নিমন্ত্রণে পরিবার পরিজন নিয়ে সফর করেন সৈয়দ মহসিন আলী। ঐ বিকাল ৪টায় একটি হেলিকপ্টার যোগে মন্ত্রী বিবিয়ানা বিদ্যুৎ প্লান্টের লিংক রোডে অবতরণ করে বিশাল গাড়িবহর সহকারে লন্ডন প্রবাসীর বাড়িতে যান। এসময় মন্ত্রীর সাথে ছিলেন স্ত্রী সৈয়দা শায়রা মহসিন, মেয়ে সৈয়দা সাবরিনা, মন্ত্রীর ভাতিজা আব্দুল গাফফার, এডিসি শফিউল আলম, পুলিশ সুপার (সার্কেল) জয়দেব কুমার ভদ্র, নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাসুম বিল্লাহ, নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল বাতেন খান, দৈনিক সময়ের যাত্রীর সম্পাদক ও প্রকাশক সুলতান মাহমুদ, দৈনিক সমাচার প্রতিনিধি বুলবুল আহমদ, এনটিভির প্রতিনিধি মুহিবুর রহমান চৌধুরী তছনু, নিজ দলের নেতাকর্মীসহ গ্রামবাসী। নবীগঞ্জের মাটিতে এটাই ছিল সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর শেষ সফর। ওইদিন যদিও তিনি প্রকাশ্যে কোন বক্তব্য দেননি তার পরও অত্যান্ত খোলাখুলিভাবে উপস্থিত লোকজনকে আশস্থ করে বলেছিলেন শ্রীঘ্রই আরেকটি সফর করবেন নবীগঞ্জে। কিন্তু নিয়তির পরিহাত ৪৪ দিনের মাথায় পৃথিবীর সকল মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
বাংলাদেশের রাজনীতির একটি চেয়ার ফাঁকা করে চলে গেছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী। সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা যান তিনি। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে দেশ আর দেশের মানুষকে অনেক দিয়েছেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ গঠনে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রচুর কাজও করেছেন।
২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি বিএনপি নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানকে বিপুল ভোটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে সেইবার কোনো মন্ত্রীত্ব পাননি। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে আবার বিজয়ী হবার পর তাকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। তৃণমূলের এই নেতা সম্মানিত হন তার কাজের জন্য। কাজ করেছেন যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ গঠনেও। তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক কাজে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। মৌলভীবাজার মুহকুমার রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিতে তিনি ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগ যুবলীগের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে জেলা আওয়ামী লীগেরও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
স্বাধীনতাত্তোরকালে তিনিই একমাত্র জননেতা যিনি পৌরসভায় পর পর ৩বার বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯২ সালে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে তাকে শ্রেষ্ঠ পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করে।
২০১৪ সালের ১২ই জানুয়ারি তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন। সমাজকল্যাণমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পগুলোকে ঢেলে সাজিয়েছেন। সেখানে এখন বহুমুখী বাস্তবসম্মত প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। সমাজসেবায় অবদান রাখার জন্য তিনি ভারতের নেহেরু সাম্য সম্মাননা ও আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন সম্মাননা স্বর্ণপদক লাভ করেন।
সাহিত্য ও সাংবাদিকতা ছিলো তার পছন্দের বিষয়। অবসরে তিনি বই পড়তে ভালবাসতেন। কবি-লেখকদের সঙ্গে নিয়মিত আড্ডা দিতেন। দেশের বড় বড় সাংবাদিকদের অনেকেই ছিলেন তার ব্যক্তিগত বন্ধু। তিনি এক সময় বাংলাদেশ টাইমসের প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
গত ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে নিউমোনিয়া, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের সমস্যা নিয়ে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হন মন্ত্রী। সেখানে তাকে লাইফ সাপোর্টে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ৫সেপ্টেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকালে মারা যান তিনি।