Menu |||

হিন্দি ছবিতে কিভাবে দেখানো হয়েছে ‘তিন তালাক’

তিন তালাক প্রথা নিয়ে ভারতে গত কয়েক বছর ধরে ব্যাপক বিতর্কের পরে বিষয়টি এখন সেদেশের সুপ্রীম কোর্টের বিচারাধীন। মুসলমান সমাজের যে প্রথাটি নিয়ে এত আলোচনা, বিতর্ক, সেটা হিন্দি ছায়াছবির জগতে প্রায় অনুপস্থিত।

বলিউড ছবির গবেষকরা বলছেন মাত্র একটি সিনেমায় তিন তালাকের সামাজিক সমস্যাকে খতিয়ে দেখা হয়েছে। আর অন্য কয়েকটি হাতে গোনা ছবিতে তালাক বিষয়টি থাকলেও তার বিশেষ কোনও বিশ্লেষণ ছিল না।

আশির দশকের গোড়ায় তৈরী নিকাহ ছবির ‘দিল কি আর্মাঁ..’ গানটি ছিল সেই সময়ের হিট গানের একটা।

সালমা আগা, রাজ বব্বর আর দীপক পরাশর ছিলেন ছবিটির মূখ্য ভূমিকায়।

এটিই বলিউডের একমাত্র ছবি, যেটার মূল বিষয়ই ছিল তিন তালাক প্রথা।

মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির গবেষক অম্বরীশ রায়চৌধুরী বলছিলেন, “বি আর চোপড়ার ওই ছবিটি ছাড়া অন্য কোনও ছবিতে তিন তালাকের প্রসঙ্গটা আসেই নি। অনেক ছবিতেই তিনি সামাজিক ইস্যুগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এখানেও তিনি তালাকের বিষয়টাকেই চ্যালেঞ্জ করেছেন তিনি। ক্লাইম্যাক্সে একটা দৃশ্য আছে যেখানে নায়িকা সালমা আগা প্রশ্ন করছেন যে যখন খুশি তিনবার তালাক বলে আমাকে বাড়ি থেকে বার করে দেবে! আমি কি কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নাকি!”

ক্লাইম্যাক্সের ওই অংশটায় সালমা আগা আর রাজ বব্বর এবং দীপক পরাশর একই দৃশ্যে ছিলেন।

মুসলিম সোশ্যাল নামে হিন্দি ছায়াছবির একটি ধারাই রয়েছে – যেখানে মুসলমান সমাজ নিয়েই ছবি তৈরী হত। এখন যদিও সেই ধারার কোনও ছবি প্রায় তৈরীই হয় না, কিন্তু তিরিশের দশক থেকে শুরু করে আশির দশক পর্যন্ত এই ধারার ছবি – যেমন পুকার, চৌদভি কা চাঁদ, বহু বেগম বা পাকিজার মতো অত্যন্ত সফল আর জনপ্রিয় ছবি এই ধারারই সিনেমা।

কিন্তু তার মধ্যে তালাক প্রথা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করা কোনও ছবিই নেই। হিন্দী ছায়াছবির ইতিহাসবিদ রউফ আহমেদের কথায়, “মুসলিম সমাজ নিয়ে আজকাল তো আর ছবি হয় না.. আটের দশকের পরে বলতে গেলে হয়ই নি.. আগেও যা হয়েছে, মুঘল এ আজমের মতো ছবি, সেগুলোর প্রেক্ষিত ঐতিহাসিক ছিল। সমস্যাটা হচ্ছে বেশীরভাগ পরিচালকই মুসলমান সমাজটাকে বুঝতে পারে না.. নিকাহ বানিয়েছিলেন বি আর চোপড়া। তিনি গোটা সমস্যাটাকে বুঝে তারপরে একটা ঠিকমতো কাহিনী উপহার দিতে পেরেছিলেন.যেটা সত্যিই চিন্তার উদ্রেক ঘটিয়েছিল।”

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সঞ্জয় মুখার্জির মতে অবশ্য তিন তালাক সহ মুসলিম সমাজ নিয়ে ছবি তৈরী না হওয়ার কারণটা অন্য।

“বলিউড কখনই মুসলিম সমাজকে নিয়ে বিশেষ আলোচনা করে নি। এর কারণটা সম্ভবত আমাদের একটা ধারণা আছে যে সংখ্যালঘুদের যে নিজস্ব একটা ডোমেইন আছে, তার মধ্যে আমরা কখনও ঢুকতে চাই নি। রাজনৈতিকভাবে সঠিক থাকার জন্যই হয়তো এটা করা হয়,” বলছিলেন মি. মুখার্জি।

তিন তালাক প্রথা নিয়ে বিতর্ক চলছে ভারতে

আবার বলিউড ছবির গবেষক অম্বরীশ রায়চৌধুরী বলছিলেন আরও কয়েকটি হিন্দী সিনেমায় তালাকের প্রসঙ্গ এসেছে ঠিকই, কিন্তু বিশ্লেষণধর্মী কোনও বক্তব্য সেগুলোতে যেমন ছিল না, তেমনই সেগুলো ঘটায় নি চিন্তার উদ্রেক।

তবে হিন্দী চলচ্চিত্রের ইতিহাসবিদ রউফ আহমেদ বলছিলেন এখন তিন তালাকের প্রসঙ্গে যেসব আলোচনা বা বিতর্ক চলছে, সেগুলোর পেছনে রাজনীতি রয়েছে। আর শুধু তালাক বা তিন তালাকটা তো সমস্যা নয় – তালাকের পরে মুসলিম নারীদের জীবন কীভাবে কাটে, ছবি সেগুলো নিয়েও হতে পারত।

নিকাহ ছবিটি যার লেখা তোফা নামের গল্পটা নিয়ে তৈরী, সেই অচলা নাগর বলছিলেন একজন নারীর দৃষ্টিকোণ গোটা বিষয়টা দেখেছিলেন তিনি, কোনও ধর্ম ছিল না সেখানে।

মিসেস নাগরের কথায়, “তোফা নামের গল্পটার মূল চরিত্র নিলোফার না হয়ে নীলিমাও হতে পারত – যে একজন নারী, কারও স্ত্রী। শুধু আই লাভ ইউ ধরণের শব্দ বলা হবে স্ত্রীর সামনে, প্রেম ভালবাসার কথা বলা হবে আর তারপরে সামান্য লড়াই-ঝগড়ার পরেই বলে দেওয়া হবে যাও বেরিয়ে যাও ঘর থেকে – এটা কেমন সমাজ! এই প্রশ্নটারই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছিলা গল্পটা লেখার সময়ে।”

ঘটনাচক্রে এখনও পর্যন্ত তালাককে কেন্দ্র করে তৈরী একমাত্র ছবি নিকাহর বিরুদ্ধে গোটা কুড়ি মামলা হয়েছিল, অনেক মৌলবী ফতোয়াও জারি করেছিলেন সিনেমাটির বিরুদ্ধে। অনেক বিক্ষোভও হয়েছিল, আটকিয়ে দেওয়া হয়েছিল ছবির প্রদর্শন। তবুও, ভারতে তো বটেই পাকিস্তানেও খুব জনপ্রিয় হয়েছিল নিকাহ।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» কুয়েতের আবদালিতে শপ উদ্ভোধনী ও অভিনন্দন সভায় রাষ্ট্রদূত

» কুয়েতে মুরাদুল হক চৌধুরীকে সম্মাননা

» তাপপ্রবাহ: প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা

» মালয়েশিয়ায় ই-পাসপোর্ট সেবা উদ্বোধন

» কুয়েতে সংবর্ধিত হলেন মুরাদুল হক চৌধুরী

» সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঝড়বৃষ্টিতে মৃত বেড়ে ৪

» তাপদাহ: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধের নির্দেশ

» কুয়েতে প্রবাসী নারীদের সংগঠন উদযাপন করেছে পহেলা বৈশাখ

» কুয়েত বাংলাদেশ কমিউনিটির ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত

» কুয়েতে বাংলাদেশ ভবনে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে প্রবাসীদের শুভেচ্ছা বিনিময়

Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
,

হিন্দি ছবিতে কিভাবে দেখানো হয়েছে ‘তিন তালাক’

তিন তালাক প্রথা নিয়ে ভারতে গত কয়েক বছর ধরে ব্যাপক বিতর্কের পরে বিষয়টি এখন সেদেশের সুপ্রীম কোর্টের বিচারাধীন। মুসলমান সমাজের যে প্রথাটি নিয়ে এত আলোচনা, বিতর্ক, সেটা হিন্দি ছায়াছবির জগতে প্রায় অনুপস্থিত।

বলিউড ছবির গবেষকরা বলছেন মাত্র একটি সিনেমায় তিন তালাকের সামাজিক সমস্যাকে খতিয়ে দেখা হয়েছে। আর অন্য কয়েকটি হাতে গোনা ছবিতে তালাক বিষয়টি থাকলেও তার বিশেষ কোনও বিশ্লেষণ ছিল না।

আশির দশকের গোড়ায় তৈরী নিকাহ ছবির ‘দিল কি আর্মাঁ..’ গানটি ছিল সেই সময়ের হিট গানের একটা।

সালমা আগা, রাজ বব্বর আর দীপক পরাশর ছিলেন ছবিটির মূখ্য ভূমিকায়।

এটিই বলিউডের একমাত্র ছবি, যেটার মূল বিষয়ই ছিল তিন তালাক প্রথা।

মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির গবেষক অম্বরীশ রায়চৌধুরী বলছিলেন, “বি আর চোপড়ার ওই ছবিটি ছাড়া অন্য কোনও ছবিতে তিন তালাকের প্রসঙ্গটা আসেই নি। অনেক ছবিতেই তিনি সামাজিক ইস্যুগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এখানেও তিনি তালাকের বিষয়টাকেই চ্যালেঞ্জ করেছেন তিনি। ক্লাইম্যাক্সে একটা দৃশ্য আছে যেখানে নায়িকা সালমা আগা প্রশ্ন করছেন যে যখন খুশি তিনবার তালাক বলে আমাকে বাড়ি থেকে বার করে দেবে! আমি কি কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নাকি!”

ক্লাইম্যাক্সের ওই অংশটায় সালমা আগা আর রাজ বব্বর এবং দীপক পরাশর একই দৃশ্যে ছিলেন।

মুসলিম সোশ্যাল নামে হিন্দি ছায়াছবির একটি ধারাই রয়েছে – যেখানে মুসলমান সমাজ নিয়েই ছবি তৈরী হত। এখন যদিও সেই ধারার কোনও ছবি প্রায় তৈরীই হয় না, কিন্তু তিরিশের দশক থেকে শুরু করে আশির দশক পর্যন্ত এই ধারার ছবি – যেমন পুকার, চৌদভি কা চাঁদ, বহু বেগম বা পাকিজার মতো অত্যন্ত সফল আর জনপ্রিয় ছবি এই ধারারই সিনেমা।

কিন্তু তার মধ্যে তালাক প্রথা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করা কোনও ছবিই নেই। হিন্দী ছায়াছবির ইতিহাসবিদ রউফ আহমেদের কথায়, “মুসলিম সমাজ নিয়ে আজকাল তো আর ছবি হয় না.. আটের দশকের পরে বলতে গেলে হয়ই নি.. আগেও যা হয়েছে, মুঘল এ আজমের মতো ছবি, সেগুলোর প্রেক্ষিত ঐতিহাসিক ছিল। সমস্যাটা হচ্ছে বেশীরভাগ পরিচালকই মুসলমান সমাজটাকে বুঝতে পারে না.. নিকাহ বানিয়েছিলেন বি আর চোপড়া। তিনি গোটা সমস্যাটাকে বুঝে তারপরে একটা ঠিকমতো কাহিনী উপহার দিতে পেরেছিলেন.যেটা সত্যিই চিন্তার উদ্রেক ঘটিয়েছিল।”

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সঞ্জয় মুখার্জির মতে অবশ্য তিন তালাক সহ মুসলিম সমাজ নিয়ে ছবি তৈরী না হওয়ার কারণটা অন্য।

“বলিউড কখনই মুসলিম সমাজকে নিয়ে বিশেষ আলোচনা করে নি। এর কারণটা সম্ভবত আমাদের একটা ধারণা আছে যে সংখ্যালঘুদের যে নিজস্ব একটা ডোমেইন আছে, তার মধ্যে আমরা কখনও ঢুকতে চাই নি। রাজনৈতিকভাবে সঠিক থাকার জন্যই হয়তো এটা করা হয়,” বলছিলেন মি. মুখার্জি।

তিন তালাক প্রথা নিয়ে বিতর্ক চলছে ভারতে

আবার বলিউড ছবির গবেষক অম্বরীশ রায়চৌধুরী বলছিলেন আরও কয়েকটি হিন্দী সিনেমায় তালাকের প্রসঙ্গ এসেছে ঠিকই, কিন্তু বিশ্লেষণধর্মী কোনও বক্তব্য সেগুলোতে যেমন ছিল না, তেমনই সেগুলো ঘটায় নি চিন্তার উদ্রেক।

তবে হিন্দী চলচ্চিত্রের ইতিহাসবিদ রউফ আহমেদ বলছিলেন এখন তিন তালাকের প্রসঙ্গে যেসব আলোচনা বা বিতর্ক চলছে, সেগুলোর পেছনে রাজনীতি রয়েছে। আর শুধু তালাক বা তিন তালাকটা তো সমস্যা নয় – তালাকের পরে মুসলিম নারীদের জীবন কীভাবে কাটে, ছবি সেগুলো নিয়েও হতে পারত।

নিকাহ ছবিটি যার লেখা তোফা নামের গল্পটা নিয়ে তৈরী, সেই অচলা নাগর বলছিলেন একজন নারীর দৃষ্টিকোণ গোটা বিষয়টা দেখেছিলেন তিনি, কোনও ধর্ম ছিল না সেখানে।

মিসেস নাগরের কথায়, “তোফা নামের গল্পটার মূল চরিত্র নিলোফার না হয়ে নীলিমাও হতে পারত – যে একজন নারী, কারও স্ত্রী। শুধু আই লাভ ইউ ধরণের শব্দ বলা হবে স্ত্রীর সামনে, প্রেম ভালবাসার কথা বলা হবে আর তারপরে সামান্য লড়াই-ঝগড়ার পরেই বলে দেওয়া হবে যাও বেরিয়ে যাও ঘর থেকে – এটা কেমন সমাজ! এই প্রশ্নটারই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছিলা গল্পটা লেখার সময়ে।”

ঘটনাচক্রে এখনও পর্যন্ত তালাককে কেন্দ্র করে তৈরী একমাত্র ছবি নিকাহর বিরুদ্ধে গোটা কুড়ি মামলা হয়েছিল, অনেক মৌলবী ফতোয়াও জারি করেছিলেন সিনেমাটির বিরুদ্ধে। অনেক বিক্ষোভও হয়েছিল, আটকিয়ে দেওয়া হয়েছিল ছবির প্রদর্শন। তবুও, ভারতে তো বটেই পাকিস্তানেও খুব জনপ্রিয় হয়েছিল নিকাহ।

Facebook Comments Box


এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



আজকের দিন-তারিখ

  • বুধবার (রাত ২:৪৫)
  • ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)

Exchange Rate

Exchange Rate EUR: বুধ, ১ মে.

সর্বশেষ খবর



Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Bangladesh Office

Director. Rumi Begum
Adviser. Advocate Koyes Ahmed
Desk Editor (Dhaka) Saiyedul Islam
44, Probal Housing (4th floor), Ring Road, Mohammadpur,
Dhaka-1207. Bangladesh
Contact: +8801733966556 / +8801920733632

Email Address

agrodristi@gmail.com, agrodristitv@gmail.com

Licence No.

MC- 00158/07      MC- 00032/13

Design & Devaloped BY Popular-IT.Com
error: দুঃখিত! অনুলিপি অনুমোদিত নয়।