চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি এলাকায় প্রবাসীর স্ত্রীকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় আরও এক আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে কিলিং মিশনে অংশ নেয়ার কথা স্বীকার করেছে আবু তৈয়ব প্রকাশ রানা (২৫) নামের ওই আসামি।
রোববার (১০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম ফরিদ আলমের আদালতে রানা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন অগ্রদৃষ্টিকে বলেন, ১৬ মার্চ মনছুর ও ইয়াছিন নামে দুজন আসামি গ্রেফতারের পর আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রানাকে গ্রেফতারের পর সেও আদালতে দায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
গত ০৫ মার্চ রাতে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির ১৩ নম্বর সড়কের ৩৮ নম্বর প্লটে আলহাজ্ব জনাবা খাতুন ভিলার তিনতলায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ছয়তলা ভবনটির মালিক ফটিকছড়ি উপজেলার ছাদেকনগর গ্রামের প্রবাসী আব্দুস শুক্কুর। পারভিন আক্তার (৩৬) তার ছোট ভাই দুবাই প্রবাসী নূরুল আলমের স্ত্রী।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, জবানবন্দিতে রানা জানিয়েছে, আব্দুস শুক্কুরের দূর সম্পর্কের ভাগ্নে ইয়াছিন তার বন্ধু। ইয়াছিনের কথামত সে পারভিনকে হত্যার মিশনে অংশ নেয়।
ঘটনার দিন সন্ধ্যার পরে ইয়াছিন পারভিন আক্তারের সাথে মোবাইলে কথা বলে বাসায় ছেলে সাঈদ ছাড়া আর কেউ না থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হয়। তারপর তারা হাটহাজারী থেকে রউফাবাদ এলাকায় আসে। ইয়াছিন অন্ধকারে পারভিনের বাড়ির পাশে রাস্তায় অবস্থান নেয়। তিন সহযোগী মনছুর, ইসহাক ও রানা বাড়ির ভিতরে ঢুকে। কিন্তু তখনও গৃহশিক্ষক বাসায় থাকায় তিনজন সিঁড়িতে বসে থাকে। রাত সোয়া ৯টার দিকে গৃহশিক্ষক বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা বাসায় ঢুকে পড়ে।
আসামি ইসহাক এবং রানা পারভিন আক্তারের মুখ চেপে ধরে টেনেহিঁচড়ে খাট থেকে তাকে মেঝেতে ফেলে দিয়ে হাত পা বেঁধে ফেলে। রানা পারভিন আক্তারকে উপুড় করে মাথার উপর বসে থাকে। আসামি মনছুর পারভিনের আলমিরা থেকে ১৮ হাজার টাকা, চার ভরি স্বর্ণালংকার ও মোবাইল নিয়ে নেয়।
ঘটনার পরদিন তারা লুট করা স্বর্ণালংকার রাউজান থানার গহিরায় নাছির টাওয়ারে গহিরা ফ্যাশন জুয়েলার্স নামে একটি দোকানে বিক্রি করে। স্বর্ণ বিক্রির টাকা চারভাগে ভাগ করে মনছুর ও ইয়াছিন টেকনাফ এবং ইসহাক ও রানা অজ্ঞাত স্থানে চলে যায়।
এর আগে আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে ইয়াছিন জানিয়েছিল, সে প্রায় তিন বছর আগে দূর সম্পর্কের মামা শুক্কুরের বাসার দারোয়ান হিসেবে কাজ করেছিল। ভবন নির্মাণের সময় শুক্কুর তাকে টাইলস সরবরাহের কাজ দেবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু কাজ না দিলে শুক্কুরের সঙ্গে ইয়াছিরেন মনোমালিন্য হয়।
পরে অবশ্য শুক্কুর ইয়াছিনকে দুবাই নিয়ে গিয়ে তার সবজি দোকানে মাসিক সাত’শ দিরহাম বেতনে চাকরি দেয়। শুক্কুর মাসিক বেতনের টাকা থেকে ভিসার খরচ কেটে রাখতে থাকলে ইয়াছিন আবারও ক্ষুব্ধ হয়। এছাড়া শুক্কুর মারধর করত বলে ক্ষোভ ছিল ইয়াছিরেন। সে শুক্কুরের পাশের আরেকটি দোকানে চাকরি নিয়ে চলে যায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শুক্কুর দুবাই পুলিশ দিয়ে তাকে গ্রেফতার করিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। বাংলাদেশে পাঠানোর আগে অবশ্য ইয়াছিন ১৭ দিন জেল খাটে।
বাংলাদেশে ফেরার পর ইয়াছিন শুক্কুরের উপর প্রতিশোধের পরিকল্পনা নেয়। সহযোগীদের কথামত প্রতিশোধ নিতে টাকা সংগ্রহ করতে প্রথমে সাঈদকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয়। সেটা ভেস্তে গেলে সাঈদের বাসায় ডাকাতির পরিকল্পনা করে।