জাকির সিকদার,সাভার,ঢাকা : নির্বাচন কমিশনার চলতি বছর ডিসেম্বরের শেষে পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের এ ঘোষণায় সাভার পৌরসভার সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রচারনায় মাঠে নেমেছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা জনসংযোগ, শো-ডাউনের পাশাপাশি ডিজিটাল ব্যানার টানিয়ে পৌরবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। এ সবই করছেন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং ঐ দলীয় ঘরানার লোকজন। এ ক্ষেত্রে মাঠে নেই বিএনপি ও তার মিত্ররা। মাঠে থাকা তো দূরের কথা নির্বাচনে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করার মতো নেতারাও রয়েছেন সাভারের বাইরে। ইতোমধ্যে যারা পৌর নির্বাচনে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তাদের অনেকেই মিথ্যা মামলায় জেলে আছেন, আবার অনেকেই গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বিরোধী দলের পক্ষে কথা বলার লোকও নেই মাঠে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে বিএনপি’র পক্ষে প্রার্থী হওয়ার লোকও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ অবস্থায় চলছে সাভার পৌর নির্বাচনের প্রস্তুতি। এর ফলে যে প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন সেই সাভার পৌরসভার
মেয়র পদে অধিষ্ঠিত হবেন বলে সাধারন জনগণের মাঝে বদ্ধমূল ধারণা জন্মেছে। প্রার্থীরাও জনগণের এ ধারণাই বিশ্বাস করেন। তাই বিএনপি বা বিরোধী দলের অনেকে ঝুঁকি নিয়ে আর আসন্ন সাভার পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথা ভাবছেন না। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা সাভার পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে মাঠে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন। তারা দলের মনোনয়ন লাভে প্রায় প্রতিদিনই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারস্থ হয়ে আশীর্বাদ প্রার্থনা করছেন। সাভার পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক এমপি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আশরাফউদ্দিন খান ইমু, সাভার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আব্দুল গণি ও ঢাকা জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো: মিজানুর রহমান মিজান ওরফে জিএস মিজান। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও সাভার উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন খান নঈম প্রতিদিনই সাভার পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে জনগণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে মেয়র প্রার্থী হিসেবে দোয়া চাচ্ছেন। তবে সাভার পৌর মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব মো: রেফাতউল্লাহ বর্তমানে জেলে রয়েছেন। দল তাকে মনোনয়ন দিলে এবং নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি হলে তিনি জেলে বসেও সাভার পৌরসভার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন।
আসন্ন সাভার পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী। মূলত তাদের কর্মকান্ডেই মাঠে কিছু নির্বাচনী জৌলুস রয়েছে। যা চোখে পড়ার মতো। একাধিক ব্যক্তি দলীয় মনোনয়ন চাওয়ায় জনগণের মাঝে কিছু নির্বাচনী ইমেজ ধরে রাখতে পেরেছেন তারা। আজকে কোন মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের কোন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে দেখা করেছেনতো কালকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী নেতা সেই কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে দেখা করে অধিক আন্তরিতকাপূর্ণ ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করছেন। আজ কোন মেয়র প্রার্থী নেতা পৌরসভার কোন এলাকায় জনসংযোগ করলে কাল সে এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী নেতা সে এলাকায় অধিক কর্মী বাহিনী নিয়ে গণসংযোগ করছেন। দলীয় কর্মসূচীও তারা পৃথক পৃথকভাবে সর্বশক্তি দিয়ে পালন করে যাচ্ছেন। এভাবেই প্রায় প্রতিদিনই চলছে মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কর্মকান্ড। সাভারবাসীর সঙ্গে গোটা বিশ্ববাসীও ফেসবুকের কল্যাণে এতোদিন তা প্রত্যক্ষ করেছেন। বর্তমানে ফেসবুক বন্ধ থাকায় তাদের মাঠের কর্মকান্ডও কিছুটা ভাটা পড়েছে।
সাভার পৌর নির্বাচনকে ঘিরে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রার্থী নিয়ে ভোটারদের মধ্যেও এখন বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ চলছে। বিশেষ করে বলা যায়, মেয়র পদ নিয়ে। ভোটারদের মধ্যে তাদের অতীত এবং বর্তমান কর্মকান্ড নিয়ে নানা বিশ্লেষণ হচ্ছে। সহজ কথায় শুধু উন্নয়নই নয়, কে দলীয়গন্ডির বাইরে গিয়ে জনগণের সুখ-দু:খের সঙ্গী হবেন। কে তাদের ছায়া হয়ে আগলিয়ে রখে পৌরবাসীর অভিভাবক হতে পারবেন। ভোটাররা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কে সাভার পৌরবাসীর অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, এ ভাবনাটাই বেশি ভাবছেন। সে বিশ্লষণই মূলত জনগণের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক এমপি ও পৌর চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন খান ইমু, সাভার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী মোঃ আব্দুল গণি, ঢাকা জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো: মিজানুর রহমান মিজান। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আশরাফ উদ্দিন খান ইমু মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সাভার এরিয়া কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সাভার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর পর সাভার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও তিনি প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এছাড়াও সাভার এলাকা থেকে সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামীলীগের এই প্রার্থী। এমনকি সাভার পৌর সভা গঠনের পর আশরাফউদ্দিন খান ইমু প্রথম পৌর নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। পরপর দুইবার সাভার পৌর চেয়ারম্যানেরও দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে জনগণের সঙ্গে আছেন। ফলে সাভারবাসীর মধ্যে রয়েছে তার বিশাল ইমেজ। দলমত নির্বিশেষে সাভারের অধিকাংশ মানুষ তাকে অভিভাবক হিসেবেই মনে করেন। এছাড়া তার সঙ্গে রয়েছে আওয়ামী লীগের বৃহৎ একটি অংশ। তারা মনেপ্রাণে চাচ্ছেন এবং বিশ্বাস করছেন দল তাকে আগামী সাভার পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন দিবে। তিনি পরিণত বয়সে এসে সাভার পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে তাকে ভোটাররা বিমুখ করবে না বলে তাদের বদ্ধমূল ধারণা। সেক্ষেত্রে মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়ে দল আশরাফ উদ্দিন খান ইমুর দক্ষতা ও ইমেজকে কাজে লাগাবে।
সাভার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী মোঃ আব্দুল গণি ইয়ারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। গত সেশনে তিনি সাভার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ সাভার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এখন তিনিও দলের মনোনয়ন চাচ্ছেন। সক্রিয়ভাবে রয়েছেন নির্বাচনী মাঠে। দলের অনেক নেতাকর্মী তার পক্ষে কাজ করছেন। তাদের ধারণা ও বিশ্বাস তিনিই আগামী সাভার পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে দলের মনোনয়ন পাবেন।
সাভার কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস, ঢাকা জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো: মিজানুর রহমান মিজান। তিনি ছাত্রলীগের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। উদীয়মান নেতাদের মধ্যে অত্যন্ত ক্লিন ইমেজের অধিকারী এই প্রার্থী। ফলে দলমত নির্বিশেষে সাভার পৌরবাসীর মধ্যে তার অনেক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। শোনা যাচ্ছে, দল ইমেজের কথা চিন্তা করে তরুণ নেতা হিসেবে আওয়ামী লীগ সাভার পৌরসভার মেয়র পদে তাকেও বেছে নিতে পারেন।
সাভার পৌর বিএনপির সভাপতি ও পরপর দুই বার নির্বাচিত সাভার পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব মো: রেফাতউল্লাহ ২০ দলীয় জোটের হরতাল-অবরোধচলাকালীন নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে দায়েরকৃত একাধিক মামলার আসামী হয়ে কারাগারে আটক রয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন থেকে সাভার পৌর বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তার আগেও দলের স্থানীয় শাখায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে সাভার পৌরসভায় তাকেই মনোনয়ন দেয়ার কথা। সেক্ষেত্রে তিনি জেলে থাকলেও সাভার পৌরসভার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন।
অপরদিকে সাভারের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোঃ সালাহউদ্দিন খান নঈমের নামও বিভিন্ন মহলে উচ্চারিত হচ্ছে। তিনি জাতীয় পদকপ্রাপ্ত সমাজকর্মী, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক) সাভার উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক। এছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত। রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ সার্বিক বিষয় মাথায় নিয়ে তিনিও নির্বাচনী মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন।
সাভার উপজেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য মতে, ২০১০ সালে সাভার পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে মোট কেন্দ্র ৬২টি, মোট ভোট কক্ষের সংখ্যা ৪২৫টি, ভোটার সংখ্যা মোট ১ লাখ ৬০ হাজার দুইশত বিরাশি জন। তারমধ্যে পুরুষ ভোটার ৮১ হাজার ৯শত ২২ জন, মহিলা ভোটার ৭৮ হাজার ৩শত ৬০জন।
সাভার পৌরবাসীর প্রত্যাশা একজন সৎ, অভিজ্ঞ ও দক্ষ এবং জনগণের কাছে সমাদৃত ব্যক্তিই সাভার পৌরসভার মেয়র পদে অধিষ্ঠিত হোক। সকল সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে পৌরবাসীর অভিভাবক হিসেবে নাগরিকদের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করুক-এটাই সকলের প্রত্যাশা।