ফুরুফুরার দাদাহুজুর মৌলানা আবু বকর সিদ্দিকি রাহ এর স্মৃতি জড়িত হুগলি মাদরাসা বন্ধ করলো মমতা সরকার । ২০০ বছরের প্রাচীন হুগলি মাদ্রাসা, যে মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন বাংলা-আসাম-বাংলাদেশের অন্যতম ধর্মতাত্ত্বিক প্রয়াত ফুরুফুরার ‘দাদাহুজুর’ মৌলানা আবু বকর সিদ্দিকি ফুরফুরাভী রাহ , গোলাম সালমানী আব্বাসী। এখান থেকে পাশ করেছেন প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ডঃ এবিএম হাবিবুল্লাহ, বিজ্ঞানী আতাউর রহমান, সাহিত্যিক মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, দেওয়ান ওস্মান গণির মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। কলকাতা রাজ্য সরকারের যখন ১০,০০০ কাওমী বা খারিজি মাদ্রাসাকে অনুমোদন দেওয়ার প্রতিশ্রুতির মাঝেই সুকৌশলে বন্ধ করে দেওয়া হলো এই সরকারি মাদ্রাসাটিকে। দানবীর হাজী মুহম্মদ মহসিনের নামে প্রদেয় অর্থে। ১৮০৬ সালে তিনি তাঁর সমস্ত সম্পত্তি মুসলমানদের জন্য ওয়াকফ করে সেটি দেখভালের দায়িত্ব দেন তৎকালীন সরকারকে। ১৮১২ সালে তাঁর প্রয়ান হয়। তাঁর পাঁচ বছর পর ১৮১৭ সালে তৈরি হয় মাদ্রাসা-ই-মহসিনীয়া বা মহসিন মাদ্রাসা। মহসিনেরই দানের টাকায় ১৮৩৬ সালে হুগলি মহসিন কলেজ স্থাপিত হলে এই মাদ্রাসাটি তাঁর অধীনে চলতে থাকে। ১৮৭৩-এ মাদ্রাসা ও তার ছাত্রাবাসের উন্নতিকল্পে ব্রিটিশ সরকার ব্যবস্থা নেয়। ১৯১৫ সালে মাদ্রাসায় রিফর্মড পাঠক্রম চালু হয় এখান থেকেই। ১৯২৫-এ মাদ্রাসায় আধুনিক শিক্ষার ব্যবস্থা হয় ‘নিউ স্কিম’ নামে। ১৮৪০ সালে এটিকে ইন্টারমিডিয়েট কলেজে উন্নীত করার পর একে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বোর্ডের আওতায় আনা হয়। পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা বোর্ডের অফিসটিও এখানেই ছিল ১৯৬২ সাল পর্যন্ত। এটি সেই অর্থে রাজ্যের বিদ্যালয় শিক্ষা অধিকর্তার দ্বারা পরিচালিত মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে পুরোপুরি সরকারি নিয়ন্ত্রণে থাকা শুধু মুসমলানদের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বামফ্রন্ট আমলে ২০১০ সালে এটিকে বন্ধ করার চেষ্টা হয়েছিল। পরবর্তীতে মাদ্রাসার দখল নিয়ে নেন হুগলির জেলাশাসক। সিপিএম আমলে এই মাদ্রাসায় ছাত্র ভর্তি বন্ধের মৌখিক নির্দেশ দিয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় বিদ্যালয় শিক্ষক সমতির নেতা সরকার-অনুগত তুলসীদাস ভট্টাচার্য। এরপর টিচার ইন-চার্জ করে আনা হয় জনৈক নাসির আলিকে। তিনি এসে শিক্ষাদান ও মাদ্রাসার উন্নতির বদলে সাম্প্রদায়িকতার নামে নানা অপপ্রচার ও বিদ্বেষ ছড়াতে থাকেন। এমনকি হোস্টেলের মেসের পাচকদের নিয়েও উসকানির খেলা শুরু করেন। ছাত্রদের খাবার সমস্যা শুরু হয়। এরপর ছাত্র-বৎসল শিক্ষক মুহম্মদ জিন্নাতুল্লাহকে হোস্টেল থেকে তাড়ানো হয়। যে সব সংবাদপত্রে তখন খবর ছাপা হতো, সেগুলির কোনওটিকে জামাতের আর বাকিদের আরএসএসের বলে দেগে দিতেন। ছাত্ররা বিক্ষোভে নামলে জিন্নাতুল্লাহকে কলকাতায় বদলি করা হল। নাসির আলির জায়গায় এর পর আসেন আরেক ভণ্ড শরফুদ্দিন। নতুন ছাত্র ভর্তি বন্ধ করে তিনি হোস্টেল সুপারকে বদলি করালেন। নানা অজুহাতে কেবল মাদ্রাসা ছুটি দিতে থাকলেন আর ভর্তি বন্ধ করলেন। মোট ছুটির দিন ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করলেন, যার ফলে শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হল। তারপর ভর্তি হওয়া ছাত্রদেরও এখান থেকে তাড়ানো হল। ডেকে ডেকে তাঁদের টিসি নিতে বাধ্য করা হল। ঠিক এভাবেই ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র প্রক্রিয়াতেই বন্ধ করা হল হুগলি মাদ্রাসা।