Menu |||

“নারী, তোমাকে পারতেই হবে” ডাঃ ফারহানা মোবিন

মৃত্তিকা গুণতে থাকে প্রতীক্ষার প্রহর। মনের মাঝে বাাজতে থাকে দুশ্চিন্তার ঘন্টা। না জানিন নতুন মাসের কাজের সেডিউলটা কেমন হবে। কতগুলো নাইট ডিউটি দিবে কে জানে! নাই ডিউটি শুনলেই রেগে যায় মৃত্তিকার শ্বশুর বাড়ীর মানুষ। বাড়ীর বউ রাতের বেলা কেন বাসার বাইরে থাকবে? না জানি কি ধরণের মানুষের সাথে ওঠা বসা করে, রাতে পুরুষ মানুষদের সাথে বোধ হয় অপারেশন থিয়েটারে যায়, না জানি সারা রাত বাসার বাইরে হাসপাতালে কাটায়, কিভাবে কাটায়! এই ধরণের কাজে মন্তব্য আমাদের অনেক নারী চিকিৎসককে শুনতে হয়। হয়তো কন্ঠ দিয়ে অনেকেই বলেন না, মনে মনে চিন্তা করেন। ব্যাধিগুলো দূর হয়নি। যেই নারী কর্মীরা রাতের বেলা ডিউটি করে, অনেক পরিবারেই তাদের নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে। আমাদের নারী সমাজে এখনো তারা পুরুষদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে। একজন পুরুষ বা স্বামী অথবা বাবার নাইট ডিউটি থাকলে এতাটা ভোগান্তির শিকার হতে হয় না। কিন্তু বাসার নারী সদস্যটাকে পড়তে হয় বিভিন্ন রকম ভোগান্তিতে। আমাদের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট নারী পুরুষের বৈষম্যের জন্য এই সমস্যাগুলো হয়। যা কখনোই কাম্য নয়।
বাসাতে নারী ও পুরুষ বা স্বামী-স্ত্রী সমানভাবে সুযোগ-সুবিধা পেয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারলে, সংসারে সহজেই সচ্ছলতা আসবে। নারী-পুরুষ উভয়েই বুঝতে পারবেন, যে আমাদের সমাজে যে একচেটিয়া, পুরুষেরা টাকা অর্জন করেন, তা ভীষণ কঠিন। স্ত্রী আয় করতে পারলে, তখন তিনিও স্বামীর উপার্জনকে শ্রদ্ধা করতে শেখেন। যারা আয় করতে পারেন না, তাঁরা স্বামীর উপার্জনের কষ্ট বোঝেনা, তা নয়। তবে যে, স্ত্রীরা অর্জন করতে পারেন, তারা একই সাথে স্বাবলম্বী ও দূরদর্শী হয়ে ওঠেন।
চিকিৎসকের পাশাপাশি নার্স বা সেবিকা কার্যে নিয়োজিত নারীরাও নিয়মিত রাতে ডিউটি করেন। কারণ এটা তাদের পেশার একটি বড় অংশ। অনেক পরিবারে মেনে নিলেও বেশীর ভাগ পরিবারেই মানতে চায়না। সংসারে টাকা দরকার দেখে হয়তো একজন স্বামী তার স্ত্রীকে মুখ ফুটে বলতে পারেন না, কিন্তু মনে মনে বিরক্ত হন, যার প্রভাব পরে ব্যক্তিগত জীবনে। মনের মাঝে পুঞ্জীভূত হওয়া বিরক্তি বা ক্ষোভ থেকে সংসারে বাধে অশান্তি। যা কখনোই কাম্য নয়।
আমাদের সমাজে পাইলট, চিকিৎসক, সেবিকা, এই ধরণের পেশার মানুষদের নিয়মিত রাতে ডিউটি করতে হয়। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই নাইট-ডিউটিতে সমস্যা হয় না অথচ নারীদের ক্ষেত্রে চিত্রটা প্রায় ক্ষেত্রেই বিপরীত।
নারী চিকিৎসক বা সেবিকাদের রাতের বেলা ডিউটি থাকে অন্য পেশার নারীদের তুলনায় অনেক বেশী। পাশ্চাত্য দেশগুলোকে নারীরা যেভাবে এগিয়ে গেছে পুরুষদের মতো, আমাদের দেশের নারী সমাজ এখনো পেছনে পড়ে রয়েছে বহুগুণে।

এই অবস্থার অন্যতম প্রধান কারণঃ
পরিবারের ছেলে সন্তানদের সব রকম সুযোগ সুবিধা মেয়ে সন্তানদের তুলনায় বেশী দেয়া।
এখনো সন্তান জন্মের সময় মেয়ের পরিবর্তে ছেলে সন্তান কামনা করা। মেয়ে সন্তান হলে অনেক পরিবারের সদস্যরা এখনো মন খারাপ করে। কারণ সুযোগ সুবিধা বেশী দেয়ার জন্য পুরুষরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় টিকে যায়। ফলে সবার বদ্ধমূল ধারণা, যে ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় বেশী বুদ্ধিমান। তাই সন্তান জন্ম হবার সময় সবাই মেয়ের পরিবর্তে ছেলেকে এখনো আশা করে থাকে।
সঠিকভাবে মেয়েদের নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। এই জন্য রাতে ডিউটি হলে নিরাপত্তাহীনতার কারণে পরিবারের সদস্যদের মাঝে নানান রকম দুশ্চিন্তা কাজ করে। আর এই দুশ্চিন্তার জন্য বাসার বউ বা মেয়ে সদস্যটির রাতে ডিউটির কথা শুনলে অন্যরা খুশী হতে পারেন না। সব চিকিৎসক বা সেবিকারা পরিবার থেকে বি ত হয়, এমনটি নয়, তবে বেশীর ভাগ নারী চিকিৎসকেরা এই পরিস্থিতির শিকার হন। কারণ, রোগীর প্রয়োজন চিকিৎসকেরা নিয়মিত রাতে ছুটে যান হাসপাতালে।

নাইট ডিউটিকে কেন্দ্র করে মানুষ জনের মাঝে থেকে দূর হোক নেতিবাচক ভাবনা, এই জন্য আমাদের করণীয়ঃ
আমাদের ভেতর থেকে নেতিবাচক ধারণাগুলো দূর করে, নারী জাগরণে শামিল হতে হবে।
পরিবারের সবাইকে অনুভব করতে হবে, যে, নারী পুরুষ দুজনেই পরিবারে সমান গুরুত্বপূর্ণ। একজন মেয়ে যদি ঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, তবে একজন পুরুষের মতোই দায়িত্ব পালন করতে পারবে। নিজের বাবা মা ও শশুর বাড়ীতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
গণমাধ্যমগুলোকে নারী সমাজেজর উন্নতি ও জাগরণের জন্য আরো বেশী অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে বিভিন্ন সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো বেশী কর্মতৎপর হতে হবে।
যে কোন সমস্যা পরিবারের সবার সাথে আলোচনা করলে, সবার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বাড়বে। এতে বাবা-মা, ভাই, বোন, স্বামী, স্ত্রী সবার মধ্যে বিশ্বাস বোধ বাড়বে। ফলে ভুল বোঝার সম্ভাবনা কমে আসবে।
স্বামী, স্ত্রীকে হতে হবে পরস্পরের খুব ভালো বন্ধু। দলিলে স্বাক্ষর দিলেই স্বামী বা স্ত্রী হওয়া যায়। কিন্তু সুখী হবার জন্য স্বামী স্ত্রীকে খুব ভালো বন্ধু হতে হয়। সবাই ভালো বন্ধু হওত পারেনা। যারা যতো ভালো বন্ধু তারা ততো বেশী সুখী হয় পারিবারিক ও কর্মজীবনে।
পরস্পরের মধ্যে কোন সন্দেহ হলে মান অভিমান না করে, বুদ্ধিমানের কাজ হলো সরাসরি প্রশ্ন করা। এতে অনেক সন্দেহ দূর হবে। বাসার সবাইকে বুঝতে হবে যে, বাড়ীর পুরুষ মানুষটির যেমন কর্মক্ষেত্র আছে, বাসার নারীটিরও তেমন কর্মক্ষেত্র রয়েছে। এই সত্যটাকে উপলব্ধি ও শ্রদ্ধা করতে হবে।
ছেলেমেয়েদেরও বোঝাতে হবে যে, মা চাকরি করেন। কর্মক্ষেত্রের প্রয়োজনে তাকে রাতে ডিউটি করতে হয়। সম্ভব হলে স্বামী বা ছেলে মেয়েদেরকে নিজের কর্মক্ষেত্রে সুযোগ বুঝে নিয়ে যান। এতে তারা বুঝতে পারবে, যে আপনাকে কতোটা কঠিন সময় পার করতে হয়। আপনি কষ্ট করে যে টাকা উপার্জন করেন, তা আপনার পরিবারের জন্যই, অন্য কারো জন্য নয়, বা শুধুমাত্র নিজের স্বার্থের জন্য নয়। এই সত্যটি পরিবারের সবাইকে অনুভব করতে হবে।
চিকিৎসক, পাইলট, প্রহরী (যদিও আমাদের দেশে নারী প্রহরী সংখ্যাতে একেবারেই নগণ্য, বিশেষত রাতের বেলা ডিউটি করার জন্য), সেবিকা এই ধরণের পেশাজীবীদের রাতের বেলা ডিউটি করতে হয়। অবস্থার প্রয়োজনে প্রায়ই সারারাত জাগতে হয়। তাই ডিউটি শেষ হবার পরে বাসায় এসেই অনেকে ঘুমিয়ে পড়েন। এতে অনেক পরিবারের সন্দেহ আরো প্রকট হয়ে ওঠে। পরিবার ও অন্যান্য সবাইকে বুঝতে হবে যে, দিনের সব কাজ শেষে, সারারাত জেগে কাজ করাটা অনেক কষ্টের কাজ। প্রতিটি মানুষেরই ৬-৭ ঘন্টা নিয়মিত ঘুমানো উচিৎ, মানুষতো যন্ত্র নয়। তাই নাইট ডিউটি শেষে বাসায় এসে ঘুম পাবে, মেজাজ খারাপ লাগাটাও স্বাভাবিক।
প্রতিটি মা ও মেয়েকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে যে, মেয়ে মানেই ঘরের সৌন্দর্য নয়, একজন মেয়ে একই সাথে ঘর ও বাহিরের কর্মজগতের যোগ্য হতে পারে। এতে পরিবার ও পরিণামে একটি জাতির জন্য মঙ্গল।
এখনো প্রায় সব পরিবারে সম্পত্তি ভাগের ক্ষেত্রে ছেলেদের সিংহ ভাগ দেয়া হয়। ছেলেমেয়েকে সব কিছুতে সমান গুরুত্ব দিলে, একজন মেয়ে হয়ে উঠবে একজন পুরুষের মতো শক্তিশালী। যা শুধু একটি পরিবার নয়, একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য ভীষণ জরুরী।

পারস্পরিক বিশ্বাসবোধ, বন্ধুত্ব আর নারীকে পুরুষের মতো মূল্যায়ণে সম্মানিত হোক সাদা এপ্রন। নারী পুরুষের সম পরিমাণ সাফল্যে ধন্য হোক পরিবার।

 

ডাঃ ফারহানা মোবিন
এমবিবিএস, পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন (পাবলিক হেল্থ),
রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার (গাইনী এন্ড অবস্),
স্কয়ার হাসপাতাল।
ডায়াবেটোলোজি, বারডেম হসপিটাল।
সি-কার্ড (ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এন্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউ, ঢাকা, বাংলাদেশ)

Facebook Comments Box

সাম্প্রতিক খবর:

প্রবাসী কর্মীর প্রতিবন্ধী সন্তানদের " প্রতিবন্ধী ভাতা" প্রদানের দরখাস্ত আহ্বান
প্রবাসী স্বজন ফাউন্ডেশনের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
পান খাওয়া মানুষদের দেশে দেয়ালের রঙ লাগেনা
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আনসার হোসেন চৌধুরী কুয়েতে মারা গেছেন
নায়ক ফেরদৌসের স্ত্রীর বিচক্ষণতায় বাঁচল বিমানে থাকা ২৯৭ জনের প্রাণ
জালালাবাদ এসোসিয়েশন ঢাকার পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত
নতুন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হলো না সিলেটের চার মন্ত্রীর
প্রবাসীকে স্যালুট দিয়ে এমপি হিসেবে যাত্রা শুরু করলেন ব্যারিস্টার সুমন
আমরা কীভাবে আমাদের আরব বিশ্বের ভবিষ্যতকে বিপদের সম্মুখীন হতে রক্ষা করব?
রেমিট্যান্সে বড় ধাক্কা, ৪১ মাসে সর্বনিম্ন’

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» কুয়েতে মুরাদুল হক চৌধুরীকে সম্মাননা

» তাপপ্রবাহ: প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা

» মালয়েশিয়ায় ই-পাসপোর্ট সেবা উদ্বোধন

» কুয়েতে সংবর্ধিত হলেন মুরাদুল হক চৌধুরী

» সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঝড়বৃষ্টিতে মৃত বেড়ে ৪

» তাপদাহ: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধের নির্দেশ

» কুয়েতে প্রবাসী নারীদের সংগঠন উদযাপন করেছে পহেলা বৈশাখ

» কুয়েত বাংলাদেশ কমিউনিটির ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত

» কুয়েতে বাংলাদেশ ভবনে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে প্রবাসীদের শুভেচ্ছা বিনিময়

» মালয়েশিয়ার মিনি ঢাকায় ‘রেস্টুরেন্ট মনির ভাই’ উদ্বোধন

Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
,

“নারী, তোমাকে পারতেই হবে” ডাঃ ফারহানা মোবিন

মৃত্তিকা গুণতে থাকে প্রতীক্ষার প্রহর। মনের মাঝে বাাজতে থাকে দুশ্চিন্তার ঘন্টা। না জানিন নতুন মাসের কাজের সেডিউলটা কেমন হবে। কতগুলো নাইট ডিউটি দিবে কে জানে! নাই ডিউটি শুনলেই রেগে যায় মৃত্তিকার শ্বশুর বাড়ীর মানুষ। বাড়ীর বউ রাতের বেলা কেন বাসার বাইরে থাকবে? না জানি কি ধরণের মানুষের সাথে ওঠা বসা করে, রাতে পুরুষ মানুষদের সাথে বোধ হয় অপারেশন থিয়েটারে যায়, না জানি সারা রাত বাসার বাইরে হাসপাতালে কাটায়, কিভাবে কাটায়! এই ধরণের কাজে মন্তব্য আমাদের অনেক নারী চিকিৎসককে শুনতে হয়। হয়তো কন্ঠ দিয়ে অনেকেই বলেন না, মনে মনে চিন্তা করেন। ব্যাধিগুলো দূর হয়নি। যেই নারী কর্মীরা রাতের বেলা ডিউটি করে, অনেক পরিবারেই তাদের নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে। আমাদের নারী সমাজে এখনো তারা পুরুষদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে। একজন পুরুষ বা স্বামী অথবা বাবার নাইট ডিউটি থাকলে এতাটা ভোগান্তির শিকার হতে হয় না। কিন্তু বাসার নারী সদস্যটাকে পড়তে হয় বিভিন্ন রকম ভোগান্তিতে। আমাদের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট নারী পুরুষের বৈষম্যের জন্য এই সমস্যাগুলো হয়। যা কখনোই কাম্য নয়।
বাসাতে নারী ও পুরুষ বা স্বামী-স্ত্রী সমানভাবে সুযোগ-সুবিধা পেয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারলে, সংসারে সহজেই সচ্ছলতা আসবে। নারী-পুরুষ উভয়েই বুঝতে পারবেন, যে আমাদের সমাজে যে একচেটিয়া, পুরুষেরা টাকা অর্জন করেন, তা ভীষণ কঠিন। স্ত্রী আয় করতে পারলে, তখন তিনিও স্বামীর উপার্জনকে শ্রদ্ধা করতে শেখেন। যারা আয় করতে পারেন না, তাঁরা স্বামীর উপার্জনের কষ্ট বোঝেনা, তা নয়। তবে যে, স্ত্রীরা অর্জন করতে পারেন, তারা একই সাথে স্বাবলম্বী ও দূরদর্শী হয়ে ওঠেন।
চিকিৎসকের পাশাপাশি নার্স বা সেবিকা কার্যে নিয়োজিত নারীরাও নিয়মিত রাতে ডিউটি করেন। কারণ এটা তাদের পেশার একটি বড় অংশ। অনেক পরিবারে মেনে নিলেও বেশীর ভাগ পরিবারেই মানতে চায়না। সংসারে টাকা দরকার দেখে হয়তো একজন স্বামী তার স্ত্রীকে মুখ ফুটে বলতে পারেন না, কিন্তু মনে মনে বিরক্ত হন, যার প্রভাব পরে ব্যক্তিগত জীবনে। মনের মাঝে পুঞ্জীভূত হওয়া বিরক্তি বা ক্ষোভ থেকে সংসারে বাধে অশান্তি। যা কখনোই কাম্য নয়।
আমাদের সমাজে পাইলট, চিকিৎসক, সেবিকা, এই ধরণের পেশার মানুষদের নিয়মিত রাতে ডিউটি করতে হয়। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই নাইট-ডিউটিতে সমস্যা হয় না অথচ নারীদের ক্ষেত্রে চিত্রটা প্রায় ক্ষেত্রেই বিপরীত।
নারী চিকিৎসক বা সেবিকাদের রাতের বেলা ডিউটি থাকে অন্য পেশার নারীদের তুলনায় অনেক বেশী। পাশ্চাত্য দেশগুলোকে নারীরা যেভাবে এগিয়ে গেছে পুরুষদের মতো, আমাদের দেশের নারী সমাজ এখনো পেছনে পড়ে রয়েছে বহুগুণে।

এই অবস্থার অন্যতম প্রধান কারণঃ
পরিবারের ছেলে সন্তানদের সব রকম সুযোগ সুবিধা মেয়ে সন্তানদের তুলনায় বেশী দেয়া।
এখনো সন্তান জন্মের সময় মেয়ের পরিবর্তে ছেলে সন্তান কামনা করা। মেয়ে সন্তান হলে অনেক পরিবারের সদস্যরা এখনো মন খারাপ করে। কারণ সুযোগ সুবিধা বেশী দেয়ার জন্য পুরুষরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় টিকে যায়। ফলে সবার বদ্ধমূল ধারণা, যে ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় বেশী বুদ্ধিমান। তাই সন্তান জন্ম হবার সময় সবাই মেয়ের পরিবর্তে ছেলেকে এখনো আশা করে থাকে।
সঠিকভাবে মেয়েদের নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। এই জন্য রাতে ডিউটি হলে নিরাপত্তাহীনতার কারণে পরিবারের সদস্যদের মাঝে নানান রকম দুশ্চিন্তা কাজ করে। আর এই দুশ্চিন্তার জন্য বাসার বউ বা মেয়ে সদস্যটির রাতে ডিউটির কথা শুনলে অন্যরা খুশী হতে পারেন না। সব চিকিৎসক বা সেবিকারা পরিবার থেকে বি ত হয়, এমনটি নয়, তবে বেশীর ভাগ নারী চিকিৎসকেরা এই পরিস্থিতির শিকার হন। কারণ, রোগীর প্রয়োজন চিকিৎসকেরা নিয়মিত রাতে ছুটে যান হাসপাতালে।

নাইট ডিউটিকে কেন্দ্র করে মানুষ জনের মাঝে থেকে দূর হোক নেতিবাচক ভাবনা, এই জন্য আমাদের করণীয়ঃ
আমাদের ভেতর থেকে নেতিবাচক ধারণাগুলো দূর করে, নারী জাগরণে শামিল হতে হবে।
পরিবারের সবাইকে অনুভব করতে হবে, যে, নারী পুরুষ দুজনেই পরিবারে সমান গুরুত্বপূর্ণ। একজন মেয়ে যদি ঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, তবে একজন পুরুষের মতোই দায়িত্ব পালন করতে পারবে। নিজের বাবা মা ও শশুর বাড়ীতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
গণমাধ্যমগুলোকে নারী সমাজেজর উন্নতি ও জাগরণের জন্য আরো বেশী অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে বিভিন্ন সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো বেশী কর্মতৎপর হতে হবে।
যে কোন সমস্যা পরিবারের সবার সাথে আলোচনা করলে, সবার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বাড়বে। এতে বাবা-মা, ভাই, বোন, স্বামী, স্ত্রী সবার মধ্যে বিশ্বাস বোধ বাড়বে। ফলে ভুল বোঝার সম্ভাবনা কমে আসবে।
স্বামী, স্ত্রীকে হতে হবে পরস্পরের খুব ভালো বন্ধু। দলিলে স্বাক্ষর দিলেই স্বামী বা স্ত্রী হওয়া যায়। কিন্তু সুখী হবার জন্য স্বামী স্ত্রীকে খুব ভালো বন্ধু হতে হয়। সবাই ভালো বন্ধু হওত পারেনা। যারা যতো ভালো বন্ধু তারা ততো বেশী সুখী হয় পারিবারিক ও কর্মজীবনে।
পরস্পরের মধ্যে কোন সন্দেহ হলে মান অভিমান না করে, বুদ্ধিমানের কাজ হলো সরাসরি প্রশ্ন করা। এতে অনেক সন্দেহ দূর হবে। বাসার সবাইকে বুঝতে হবে যে, বাড়ীর পুরুষ মানুষটির যেমন কর্মক্ষেত্র আছে, বাসার নারীটিরও তেমন কর্মক্ষেত্র রয়েছে। এই সত্যটাকে উপলব্ধি ও শ্রদ্ধা করতে হবে।
ছেলেমেয়েদেরও বোঝাতে হবে যে, মা চাকরি করেন। কর্মক্ষেত্রের প্রয়োজনে তাকে রাতে ডিউটি করতে হয়। সম্ভব হলে স্বামী বা ছেলে মেয়েদেরকে নিজের কর্মক্ষেত্রে সুযোগ বুঝে নিয়ে যান। এতে তারা বুঝতে পারবে, যে আপনাকে কতোটা কঠিন সময় পার করতে হয়। আপনি কষ্ট করে যে টাকা উপার্জন করেন, তা আপনার পরিবারের জন্যই, অন্য কারো জন্য নয়, বা শুধুমাত্র নিজের স্বার্থের জন্য নয়। এই সত্যটি পরিবারের সবাইকে অনুভব করতে হবে।
চিকিৎসক, পাইলট, প্রহরী (যদিও আমাদের দেশে নারী প্রহরী সংখ্যাতে একেবারেই নগণ্য, বিশেষত রাতের বেলা ডিউটি করার জন্য), সেবিকা এই ধরণের পেশাজীবীদের রাতের বেলা ডিউটি করতে হয়। অবস্থার প্রয়োজনে প্রায়ই সারারাত জাগতে হয়। তাই ডিউটি শেষ হবার পরে বাসায় এসেই অনেকে ঘুমিয়ে পড়েন। এতে অনেক পরিবারের সন্দেহ আরো প্রকট হয়ে ওঠে। পরিবার ও অন্যান্য সবাইকে বুঝতে হবে যে, দিনের সব কাজ শেষে, সারারাত জেগে কাজ করাটা অনেক কষ্টের কাজ। প্রতিটি মানুষেরই ৬-৭ ঘন্টা নিয়মিত ঘুমানো উচিৎ, মানুষতো যন্ত্র নয়। তাই নাইট ডিউটি শেষে বাসায় এসে ঘুম পাবে, মেজাজ খারাপ লাগাটাও স্বাভাবিক।
প্রতিটি মা ও মেয়েকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে যে, মেয়ে মানেই ঘরের সৌন্দর্য নয়, একজন মেয়ে একই সাথে ঘর ও বাহিরের কর্মজগতের যোগ্য হতে পারে। এতে পরিবার ও পরিণামে একটি জাতির জন্য মঙ্গল।
এখনো প্রায় সব পরিবারে সম্পত্তি ভাগের ক্ষেত্রে ছেলেদের সিংহ ভাগ দেয়া হয়। ছেলেমেয়েকে সব কিছুতে সমান গুরুত্ব দিলে, একজন মেয়ে হয়ে উঠবে একজন পুরুষের মতো শক্তিশালী। যা শুধু একটি পরিবার নয়, একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য ভীষণ জরুরী।

পারস্পরিক বিশ্বাসবোধ, বন্ধুত্ব আর নারীকে পুরুষের মতো মূল্যায়ণে সম্মানিত হোক সাদা এপ্রন। নারী পুরুষের সম পরিমাণ সাফল্যে ধন্য হোক পরিবার।

 

ডাঃ ফারহানা মোবিন
এমবিবিএস, পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন (পাবলিক হেল্থ),
রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার (গাইনী এন্ড অবস্),
স্কয়ার হাসপাতাল।
ডায়াবেটোলোজি, বারডেম হসপিটাল।
সি-কার্ড (ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এন্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউ, ঢাকা, বাংলাদেশ)

Facebook Comments Box

সাম্প্রতিক খবর:

প্রবাসী কর্মীর প্রতিবন্ধী সন্তানদের " প্রতিবন্ধী ভাতা" প্রদানের দরখাস্ত আহ্বান
প্রবাসী স্বজন ফাউন্ডেশনের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
পান খাওয়া মানুষদের দেশে দেয়ালের রঙ লাগেনা
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আনসার হোসেন চৌধুরী কুয়েতে মারা গেছেন
নায়ক ফেরদৌসের স্ত্রীর বিচক্ষণতায় বাঁচল বিমানে থাকা ২৯৭ জনের প্রাণ
জালালাবাদ এসোসিয়েশন ঢাকার পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত
নতুন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হলো না সিলেটের চার মন্ত্রীর
প্রবাসীকে স্যালুট দিয়ে এমপি হিসেবে যাত্রা শুরু করলেন ব্যারিস্টার সুমন
আমরা কীভাবে আমাদের আরব বিশ্বের ভবিষ্যতকে বিপদের সম্মুখীন হতে রক্ষা করব?
রেমিট্যান্সে বড় ধাক্কা, ৪১ মাসে সর্বনিম্ন’


এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



আজকের দিন-তারিখ

  • বৃহস্পতিবার (রাত ৯:৩২)
  • ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)

Exchange Rate

Exchange Rate EUR: বৃহঃ, ২৫ এপ্রি.

সর্বশেষ খবর



Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Bangladesh Office

Director. Rumi Begum
Adviser. Advocate Koyes Ahmed
Desk Editor (Dhaka) Saiyedul Islam
44, Probal Housing (4th floor), Ring Road, Mohammadpur,
Dhaka-1207. Bangladesh
Contact: +8801733966556 / +8801920733632

Email Address

agrodristi@gmail.com, agrodristitv@gmail.com

Licence No.

MC- 00158/07      MC- 00032/13

Design & Devaloped BY Popular-IT.Com
error: দুঃখিত! অনুলিপি অনুমোদিত নয়।