ডেস্ক নিউজ : দেশব্যাপী নানা আয়োজনে বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক এবং বাংলা চলচ্চিত্র ও টিভি নাটকের নন্দিত নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের ৬৯তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে।
গাজীপুরের নুহাশ পল্লী, চ্যানেল আই চত্বর, লেখকের জন্মভূমি নেত্রোকোনার কুতুবপুরে তাঁর নিজ হাতে গড়া স্কুলে ও ফরিদপুরে ব্যাপক আয়োজনে স্মরণ করা হয় পাঠক তৈরির কারিগর এ কথা সাহিত্যিককে।
এদিকে ১২ নভেম্বর, রোববার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে হুমায়ূন আহমেদের ফ্ল্যট বাড়ি ‘দক্ষিণা হাওয়ায়’ তার পরিবারের সদস্যরা কেক কেটে তার জন্মদিন উদযাপনের শুভ সূচনা করেন।
আজ সকাল পৌনে ১১টায় গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে পরিবারের সদস্য ও হুমায়ূন আহমেদের ভক্তরা গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় তাদের জনপ্রিয় এ কথাসাহিত্যিককে স্মরণ করেন। প্রথমেই হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন এবং ছোট দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিত লেখকের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এর পরেই ভক্ত অনুরাগী এবং অন্যান্য লেখক, কথাসাহিত্যিকসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের ঢল নামে তাঁর সমাধিতে। তারা ফুল দিয়ে গভীর ভালোবাসায় স্মরণ করেন তাদের প্রিয় লেখককে। অনেকে আবার তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করেন।
জন্মদিন উপলক্ষে নুহাশ পল্লীতে লেখকের দুই ছেলে কেক কাটেন এবং মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করেন। এ সময় হুমায়ুন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন বলেন, সারাদেশের মানুষ হুমায়ূন আহমেদকে যেভাবে স্মরণ করে তা তাদের খুব ভাল লাগে, মনে হয় বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে তাদের হুমায়ূন আহমেদ সবার আদরের হুমায়ূন হয়ে ওঠেন।
তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদের প্রতি সাধারণ মানুষের এ ভালবাসাকে সম্মান জানিয়ে তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য হুমায়ূন স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পারিবারিক সম্মতিতে খুব শিগগিই নুহাশ পল্লীতে জাদুঘর নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।
শাওন আরও বলেন, হুমায়ূন আহমেদ ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার যে ডাক তিনি দিয়েছিলেন, তাঁর অবর্তমানে সেই ডাকের কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি হুমায়ূন আহমেদের সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশের বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী ও সরকারি মহলসহ সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন।
নুহাশ পল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, নন্দিত লেখকের ভক্তরা ভোরের আলো ফোঁটার সাথে সাথেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নুহাশ পল্লীতে আসতে শুরু করেন। এতে হলুদ পাঞ্জাবী পড়া হিমু পরিবারের সদস্যরাও আছেন। তাদের অনেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হিমু পরিবহনে চড়ে নুহাশ পল্লীতে আসেন। এছাড়া নুহাশপল্লীর কর্মকর্তা, কর্মচারীরাও তাদের প্রিয় মানুষটির কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
তিনি বলেন, হুমায়ূন স্যারের জন্মদিন উপলক্ষে তার ভক্তদের সংগঠন হিমু পরিবহনের উদ্যোগে গাজীপুরে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। তার মধ্যে ক্যান্সার সচেতনতামূলক প্রচারণার জন্য সকালে ৩০ জনের একটি দল সাইকেল র্যালির মাধ্যমে জেলা শহর থেকে নুহাশ পল্লীতে আসেন। পথে তারা সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেন। সংগঠনের ১৫ সদস্যের অপর একটি দল ঢাকা থেকে খালি পায়ে হেঁটে নুহাশ পল্লীতে আসেন। বিকেলে গাজীপুর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। এছাড়া স্যারের জন্মদিন উপলক্ষে নুহাশ পল্লীতে চিত্রশিল্পী আসাদ খানের সাত দিনব্যাপী দ্বিতীয় একক চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলা সাহিত্যের পাঠক সৃষ্টিকারী এ জনপ্রিয় লেখককে নিয়ে চ্যানেল আই ‘হুমায়ূন মেলা’র আয়োজন করেছে। আজ বিকাল ৩টা ৫ মিনিটে চ্যানেল আই চত্বরে দেশের বিভিন্ন অঙ্গণের বিশিষ্টজনেরা এ মেলার উদ্বোধন করেন।
এসিআই পিওর সল্টের পৃষ্টপোষকতায় চ্যানেল আই এ মেলার আয়োজন করেছে।
অন্যবারের মতো এবারও মেলায় নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উদযাপিত হচ্ছে। মেলায় লেখকের বই, চলচ্চিত্র, নাটকসহ তার কর্মজীবনের নানা সামগ্রীর স্টল রয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণ মঞ্চে পরিবেশিত হচ্ছে হুমায়ূন আহমেদের লেখা গান, নাচ, আবৃত্তি, স্মৃতিচারণসহ নানা পর্ব। মেলা চলবে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। রেডিও ভূমি এবং চ্যানেল আই সরাসরি এ মেলা সম্প্রচার করছে।
জননন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৬৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ফরিদপুরের হুমায়ূন আহমেদ জন্মোৎসব কমিটি ফরিদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আজ সকালে আলোচনা সভা ও চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।
ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. এমএ জলিল।
জননন্দিত এ কথাসাহিত্যিকের ৬৯তম জন্মবার্ষিকীতে গুগলও শুভেচ্ছা জানিয়েছে। তারা হুমায়ুন আহমেদকে স্মরণ করে ডুডল সাজিয়েছে। এতে দেখানো হয়েছে হুমায়ুন আহমেদ বসে আছেন, আর হিমু হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে পায়চারি করছেন।
পাঠক প্রিয় এ লেখক ও কথা সাহিত্যিক ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই ৬৪ বছর বয়সে আমেরিকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরে ২৪ জুলাই গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী এলাকায় অবস্থিত তাঁর স্বপ্নের নুহাশ পল্লীর লিচুগাছ তলায় দাফন করা হয়। (বাসস)