আ হ জুবেদ : একজন প্রবাসীর জীবনের গল্প, ষাটোর্ধ এই প্রবাসীর পরিচয় নানান ভাবে দিতে হয়।
তিনি একজন সংগঠক, লেখক, সাংবাদিক, সঙ্গীত প্রেমী এবং চাকরিজীবী মানুষ।
আর এই মানুষটি স্বদেশ ছেড়ে জীবন আর জীবিকার তাগিদে পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে মধ্যপ্রাচ্যের কুয়েতে পাড়ি জমিয়েছিলেন ৮০ এর দশকের একটু আগে।
অর্থাৎ বিয়াল্লিশ বছর শেষ করে তেতাল্লিশ বছরে পা রাখা এই প্রবাসী জীবনের গল্পে আছে প্রাপ্তি, সফলতা-ব্যর্থতা আর অতীত স্মৃতি নিয়ে নানা কথা।
বলছিলাম কুয়েতে বাংলাদেশ কমিউনিটির অত্যন্ত পরিচিত মুখ, নানান পরিচয়ে এ দেশটির বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতা আব্দুর রউফ মাওলার কথা।
১৯৭৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এক ছাত্র কুয়েত পাড়ি জমিয়েছিলেন, পারিবারিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে তখনকার সেই যুবকটি জীবনের বিয়াল্লিশটি বছর কাটিয়ে দিয়েছেন স্বপ্ন পূরণের আশায়।
বর্তমান কুয়েতে বাংলাদেশ কমিউনিটির অত্যন্ত পরিচিত মুখ, নানান পরিচয়ে এ দেশটির বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতা আব্দুর রউফ মাওলা হচ্ছেন তখনকার সেই যুবক।
আব্দুর রউফ মাওলা, ইলেকট্রিক ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে কুয়েতে পাড়ি জমিয়েছিলেন, ইচ্ছে ছিল লেখাপড়া শেষ করে দেশেই স্বপ্ন পূরণে কাজ করবেন।
কিন্তু সেই স্বপ্ন, আশা আর প্রত্যাশা ছিল এতোই বেশি যে, সে সময়কার বাংলাদেশের উপার্জনে সবটুকু পূরণ করা সম্ভব নয় ভেবে ৮০ এর দশকের একটু আগে পশ্চিম এশিয়ার দেশ কুয়েতে এসে আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে কাজ শুরু করেন।
২২ শে এপ্রিল ১৯৫৫ সালে মোটামুটি স্বচ্ছল একটি পরিবারে আব্দুর রউফ মাওলার জন্ম, নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপগজ্ঞ থানার কেন্দুয়া পাড়া গ্রামে একটি মধ্যবিত্ত, সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি।
দাদা মরহুম হাজী রহম আলীর পুত্র বাবা মরহুম হাজী মোহাম্মদ মাওলা বকস্, পাচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সেই পরিবারে জ্যৈষ্ঠ পুত্র আব্দুর রউফ মাওলা।
আব্দুর রউফ মাওলার নিজ এলাকায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে পূর্ব পুরুষদের সুনাম ও সুখ্যাতি সেকাল এবং একালে বেশ প্রশংসিত ছিল।
পরিবারের জ্যৈষ্ঠ ব্যক্তিরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত, প্রকৃত সমাজ সেবায় নিয়োজিত ও স্থানীয় এলাকায় প্রতিনিধিত্ব করার ফলে এ পরিবারটির গ্রহণযোগ্যতাও ছিল সবার শীর্ষে।
১৯৭১ সালে অর্থাৎ স্বাধীনতার প্রথম ব্যাচে কাঞ্চন ভারত চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১ম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন আব্দুর রউফ মাওলা।
১৯৭৪ সালে ঢাকা নটর ডেম কলেজ থেকে ২য় বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন।
সেসময়কার তরুণ আব্দুর রউফ মাওলার স্বপ্ন ছিল, ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর আইন (ওকালতি ) বিভাগে অনার্স পড়বেন।
কিন্তু বিভিন্ন জটিলতার কারণে সেই স্বপ্ন পূরণে বেশি দূর এগুনো সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
পরে ১৯৭৫ সালে ইংরেজীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়ে সেখানেও অসমাপ্তি লেখাপড়া, শেষে জীবিন আর জীবিকার তাগিদে মধ্যপ্রাচ্যের কুয়েতে পাড়ি জমাতে হয়েছিল।
এরপর দেশে এবং প্রবাসে সাংগঠনিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন আব্দুর রউফ মাওলা।
প্রবাস জীবনের শুরুর দিকটার কথা জানতে চাইলে আব্দুর রউফ মাওলা বলেন, ইলেকট্রিক ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে কুয়েত এসেছিলাম একটি কোম্পানিতে, পরে কাজ করেছি মোবারক আল-কবির হাসপাতালের একটি বিভাগে ও ন্যাশনাল ইন্ডাস্ট্রি কোম্পানিতে।
বর্তমানে দীর্ঘদিন ধরে কুয়েতের পানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের টেকনিশিয়ান পদে কাজ করছি।
তিনি বলেন, ১৯৮৩ সালে এই মন্ত্রণালয়ে দক্ষ লোক নিয়োগের জন্য তিন’শ বাংলাদেশীর ইন্টার্ভিউ নেয়া হয়েছিল, এর মধ্য ত্রিশ জন বাংলাদেশী সিলেক্টেড হয়েছিলেন, সেই ত্রিশ জনের একজন ছিলাম আমি।
কুয়েতের সাংগঠনিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেকে কবে থেকে সম্পৃক্ত করেছেন জানতে চাইলে আব্দুর রউফ মাওলা বলেন, কুয়েতে আসার পর আমি প্রথমেই প্রবাসী সাহিত্য পরিষদে যুগ দিয়ে ছিলাম, পরে একে একে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনে যোগ দেই, একটা সময় আমি ও আমার এক সহপাঠী মিলে মরুলেখা নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ শুরু করি।
রাজনৈতিক পথচলা শুরু করেন কবে থেকে, এমন এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুর রউফ মাওলা বলেন, দশম শ্রেণীর ছাত্র থাকা অবস্থায় কাঞ্চন হাইস্কুলে চার সহপাঠী মিলে ছাত্রলীগ গঠন করেছিলাম আমরা।
তিনি বলেন, কুয়েতে আসার পর প্রথমে আমি ঠাকুর গায়ের নজরুলের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু পরিষদে যোগদান করি।
এর পর বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কুয়েতে যোগদান করি, বর্তমানে ওই সংগঠনের তিন বারের নির্বাচিত কুয়েত সভাপতি হিসেবে আমি দায়িত্ব পালন করছি।
জীবনে প্রাপ্তি, হারানো আর স্বপ্ন নিয়ে কী ভাবছেন? এমন এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুর রউফ মাওলা বলেন, জীবনের অনেক প্রাপ্তিতে আমি সন্তুষ্ট, হারানোর তালিকা অনেক লম্বা যেহেতু প্রবাসেই জীবনের বেশির ভাগ সময় অতিবাহিত করেছি। আর স্বপ্ন নিয়ে ভাবছি, জীবনের বাকি সময় দেশেই কাটাবো।
তিনি বলেন, প্রবাসে আরো কিছুটা সময় থাকতে হবে শুধুমাত্র মেয়েদের লেখাপড়ার একটি চূড়ান্ত স্থানে যাওয়ার আগ পর্যন্ত।
আব্দুর রউফ মাওলা বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন, কুয়েত আওয়ামীলীগের সভাপতি,কুয়েত থেকে প্রকাশিত মরুলেখা পত্রিকার সম্পাদক, (ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া ফোরাম,বিডি) কুয়েতের সভাপতি হিসেবে।
পাশাপাশি তিনি একজন মানবাধিকার কর্মী, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের আজীবন সদস্য।
আব্দুর রউফ মাওলা তিন মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে কুয়েতের জাবরিয়া এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন।
সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংবাদিকতার জীবনে অনেক সহকর্মী ও সহপাঠীদের সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন আব্দুর রউফ মাওলা।