গত সংখ্যায় লেখা বেড়ানোর জায়গার বাইরে কুয়েতে আছে তিনটে মিউজিয়াম। সংগ্রহে মেসোপটেমিয়া সভ্যতার গল্প ছাড়া আর কিছু নেই। আছে অনতিপ্রাচীন নৌ জীবনের গাথা ও তদ্ পরবর্তী বিবর্তন।সেসবের একটা ছোট সংস্করণ সায়েন্টিফিক সেন্টারেই পাওয়া যায়।
সময় কাটাতে তাই ভরসা পার্ক, সিনেমা, শপিং মল আর রেস্তোরাঁ। এখানে শীত গ্রীষ্ম দুইই চরম। শীতে মাইনাস সাত আট আর গরমে পঞ্চাশ খুব সাধারণ ব্যাপার। তাই পার্ক বাদ।
তামিল আর মালয়লি সিনেমা খুব আসে। বাংলা না আসলেও মাসে একটা বা দুটো হিন্দী সিনেমা আসে। সাবটাইটেল থাকে। কুয়েতিরা হিন্দী সিনেমা বেশ পছন্দ করে দেখেছি।
শপিং মল রাজকীয় এবং দামও তদনুসার। নিত্যদিনের সাধারণ কেনাকাটার জন্য পাড়ায় পাড়ায় বাকালা বা মুদিখানা আছে। বাসিন্দা অনুযায়ী দরকারী সামগ্রী রাখে। কর্তা যে এলাকায় থাকেন, এখানে বাংলাদেশী মানুষ অনেক। তাই শুধু পোস্ত ছাড়া বাঙালী সব মশলাপাতি এখানে পাওয়া যায়। সব এলাকায় এত কিছু সুলভ নয় । প্রসঙ্গতঃ পোস্ত এদেশে ব্যানড।
সাধারণ লোকের জন্য দুটো সুপার মার্কেট চেইন নামকরা, লুলু আর ক্যারি ফোর। লুলুর মালিক ভারতীয়, কেরালার। ক্যারি ফোর ফরাসী ।দেশ বিদেশের শাকসবজি ফলমূল কি পাওয়া যায়না এখানে !
অপূর্ব, অদ্ভুত এবং বিদঘুটে কত রকম সুখাদ্য অখাদ্য ফল। মুর্শিদাবাদ মালদার যে কোয়ালিটির আম এখন কেবলই কিংবদন্তী, এখানে তা রাশি রাশি বিক্রি হচ্ছে। চেনা অচেনা লতাপাতা এমন কি পলতা পাতা, কুলেখাড়া, চিরতা, নালতে, কলমী, শালুক সহজেই পাওয়া যায়। থোড় মোচা ডুমুর যে বাংলার বাইরে সমগ্র ভারত তথা বিশ্বের বহু কোনায় চাষ হয়, তা তাদের আমদানীর ট্যাগ দেখলে জানা যায়।
ইলিশ তো খুবই সুলভ। বাংলাদেশী ইলিশ হাসিনাজী তাঁর দেশের মানুষদের জন্য হাসতে হাসতে এখানে চড়া দামে বিকিয়ে দেন ; কুয়েতিরা অত কাঁটা বেছে খাওয়ার পাবলিক নয় মোটেও। ইলিশের ডিম এখানে প্যাকেট করে ওজনে বিক্রি হয়। অফ সিজনে কটা ডিম ভাজা আর তার তেল দিয়েই তো এক থালা ভাত উঠে যায়।
এছাড়াও পাবদা, পার্শে, তোপসে, ট্যাংরা, পুঁটি, কাজরি, ভেটকি, রুই, কাতলা, চিতল, চিংড়ি সব সঅঅঅঅব মাছ মৃত এবং শুটকি পাওয়া যায়। জ্যান্ত মাছের জন্য অবশ্য সমুদ্রে ছিপ ফেলতে হবে। আমার শাশুড়িমা এবং বাবা এখানকার কাঁচা বাজার দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।
শুক্রবার এখানে ছুটি থাকে। সেই দিন সকাল থেকে বিকেল হাটের মত একটা সস্তা বাজার বসে। ফ্রাইডে মার্কেট। নতুন পুরোনো অনেক জিনিস বিক্রি হয়। ফ্রিজ টিভি আসবাব বাসনপত্র কাপড় চোপড় তেল সাবান সবই সেখানে পাওয়া যায়। কর্তা অনেক দুর্লভ সিডি ওখান থেকে কিনেছেন। বাবা ওই মার্কেটে উবু হয়ে বসে প্রাচীন সুন্দর সুন্দর ডিজাইনের পুরোনো ছোট কটা কাঠের বাক্স আর রুপোর ট্রে কিনেছিলেন, খুব সস্তায়।
ধনী মলগুলোয় যেতে আসতে বিভিন্ন দামী কোম্পানি কুয়েতিদের গায়ে পার্ফ্যুম স্প্রে করে দেয়। কেউ কেনে , বেশিরভাগই কেনেনা। আমরা কিনতে পারবনা আগে থেকেই ভেবে নিয়ে আমাদের গায়ে ভুলেও ছেটায়না। কিন্তু আমার ধুতি পাঞ্জাবী পরিহিত বাবাকে কোন দেশের রাজা ভেবে আচ্ছা করে সুগন্ধি স্প্রে করেছিল। বাবা সেটাকে বরযাত্রীর মত ওয়েলকাম ভেবে বরকর্তার মত হাতজোড় করে স্মিত হেসে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
লেখক:
গার্গী চক্রবর্তী (ভারত)
চলবে……