Menu |||

৫০ বছর পরও যে সিনেমা ঘিরে অনেক রহস্য

১৯৬৮ সালের ৩রা এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পেয়েছিল সায়েন্স ফিকশন চলচ্চিত্র ‘২০০১: এ স্পেস ওডিসি’। পরিচালক স্ট্যানলি কুবরিকের এই ছবি একটি রীতিমত কাল্ট এর মর্যাদা পেয়েছে, চলচ্চিত্র বোদ্ধারা এটিকে বিবেচনা করেন সর্বকালের সেরা ছবিগুলোর একটি বলে। এ নিয়ে ইতিহাসের সাক্ষীর এই পর্বটি পরিবেশন করেছেন মোয়াজ্জেম হোসেন:

‘২০০১: এ স্পেস ওডিসি”র একটা বৈশিষ্ট্য ছিল, এতে সংলাপের পরিবর্তে শক্তিশালী ভিজ্যুয়াল এবং শব্দের প্রাধান্য। তখনো পর্যন্ত সিনেমার গল্প বলার যে কৌশল, সেটাকে যেন আমূল বদলে দিয়েছিল এই ছবি।

কিয়ের ডুলে এই ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এটিকে তার অভিনয় জীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর একটি বলে মনে করেন তিনি।

“এই বিখ্যাত ছবিতে যে আমি কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম, সেটা নিয়ে আমি গর্বিত। আমি প্রায় তিরিশটি ছবিতে কাজ করেছি। কিন্তু সবাই কিন্তু এটির কথাই বলে।”

১৯৬০ এর দশকের সেই সময়টায় কিয়ের ডুলে ছয়টি কাহিনীচিত্রে কাজ করে ফেলেছেন। কিন্তু তারপরও যখন তিনি তার এজেন্টের কাছ থেকে ডাক পেলেন, তিনি অবাক হয়ে গেলেন।

“আমার এজেন্ট আমাকে বললেন, তোমার এখনই এ নিয়ে কথা বলতে বসা উচিৎ, কারণ তোমাকে এই ছবিতে প্রধান ভূমিকায় অভিনয়ের অফার দেওয়া হয়েছে। এটা ছিল আমার কাছে একেবারে অভাবনীয় একটা ব্যাপার।”

 

তখন যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র শিল্পে স্ট্যানলি কুবরিকের অব্স্থানটা কি ছিল? তাঁকে কিভাবে দেখা হতো?

“তখনই তাকে বিবেচনা করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের সেরা চলচ্চিত্র পরিচালকদের একজন হিসেবে। ততদিনে তিনি ‘ডক্টর স্ট্রেঞ্জলভ’, ‘লোলিটা’ এবং ‘স্পার্টাকাসের’ মতো ছবি করে ফেলেছেন। ততদিনে তিনি অসাধারণ কিছু কাজ করে ফেলেছেন।”

এই ছবি তৈরির জন্য স্ট্যানলি কুবরিক জুটি বেঁধেছিলেন বিখ্যাত ব্রিটিশ সায়েন্স ফিকশন লেখক আর্থার সি ক্লার্কের সঙ্গে। যিনি ছিলেন এর কাহিনীকার। দুজনে মিলে তারা এই ছবির চিত্রনাট্য লিখলেন। সেটি করতেই তাদের সময় লেগেছিল প্রায় চার বছর।

ছবিতে কিয়ের ডুলে নভোচারী ডেভিড বোওম্যানের ভূমিকায় অভিনয় করেন। কিন্তু প্রথম যখন তিনি চিত্রনাট্যটি দেখেছিলেন, তখন এই চরিত্র তার খুব পছন্দ হয়নি।

“ঐ ছবিতে যেটা ছিল ব্যতিক্রম, তা হলো, সেখানে সংলাপ ছিল খুবই কম। ৮০ হতে ৯০ শতাংশ অংশ জুড়ে কেবলই নানা ভিজ্যুয়ালস।”

“কাজেই অভিনেতা হিসেবে আমাদের বলার মতো তেমন কিছু ছিল না ঐ ছবিতে। ফলে ছবিটা তৈরি করার পর যা দাঁড়ালো, চিত্রনাট্য দেখে তার কোন ধারণা পাওয়ার উপায় ছিল না।”

 

ছবির কাহিনীর শুরু কয়েক মিলিয়ন বছর আগে আফ্রিকার এক মরুভূমিতে। সেখানে একদল আদি-বনমানব একটি বিরাট পাথরের ফলক আবিস্কার করে। এই রহস্যজনক কালো পাথরের স্তম্ভফলক থেকে অদ্ভূত সংকেত বিচ্ছুরিত হচ্ছিল।

এই পাথর ফলক তাদেরকে শেখাচ্ছিল কিভাবে একটি সামান্য হাড় বা অস্থিকে অস্ত্র হিসেবে তাদের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যায়।

কয়েক মিলিয়ন বছর পরে এই পাথর ফলকটিকে আবার দেখা গেল। একটি নভোযানে চড়ে বিজ্ঞানীরা যখন একটি মহাকাশ-স্টেশনে যাচ্ছেন, তখন। এই মার্কিন নভোযানটি যাচ্ছিল বৃহস্পতি গ্রহের দিকে। তারা এই পাথরফলকটি এবং এর অদ্ভূত ক্ষমতা সম্পর্কে আরও খোঁজ-খবর নিতে চায়। কিয়ের ডুলে হচ্ছেন এর মূল নভোচারীদের একজন।

নভোযান যখন মহাকাশের অন্ধকার ভেদ করে ছুটে চলেছে, তখন স্ট্যানলি কুবরিক যেভাবে ক্ল্যাসিকাল মিউজিক ব্যবহার করেছেন, তা তখনকার সায়েন্স-ফিকশন সিনেমার ব্যাকরণ ভেঙ্গে দিয়েছিল। নভোচারীরা তখন ছুটে চলেছেন অজানার দিকে, নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে। তখন সেখানে এ ধরণের মিউজিকের ব্যবহার একটা নতুন মাত্রা তৈরি করেছিল। সেখানে সংলাপ প্রায় নেই বললেই চলে, আর নভোযানের আরোহীদের মধ্যেও কথাবার্তা খুবই কম।

ছবিটির শ্যুটিং করা হয় ইংল্যান্ডে এমজিএম স্টুডিওতে। সেখানে পরিচালক কুবরিক একটা বিরাট কাঠামো তৈরি করেছিলেন মহাকাশযানের ভেতরে দৃশ্য সৃষ্টি করার জন্য। এটির ওজন ছিল প্রায় ৪০ টন।

“শিশুদের জন্য মেলায় যে ধরণের নাগরদোলা দেখা যায়, কল্পনা করুন সেরকম বিরাট একটা চক্র। এখন এই নাগরদোলার ভেতরে সিনেমার সেটটা তৈরি করা হয়েছিল। এটি ছিল অসাধারণ। আমি এরকম কিছু এর আগে দেখিনি।”

একজন অভিনেতা হিসেবে এরকম একটি বিরাট সেটে কাজ করার অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল?

“কাউকে নিশ্চয় এটা মনে করিয়ে দেওয়ার দরকার নেই যে, তখনো পর্যন্ত কম্পিউটার জেনারেটেড স্পেশাল ইফেক্ট বলে কিছু ছিল না। ২০০১ ছবিতে সব কিছু বাস্তবেই করতে হয়েছিল।”

তিনি বলছেন, “ছবির একেবারে শুরুর দিকে একটা শট আছে। যেখানে গ্যারি লকওয়ার্ড বা ফ্রাংক পুল এই নাগরদোলার একেবারে শীর্ষে খাবার খাচ্ছেন মাথা নীচে পা উপরে থাকা অবস্থায়। সেই শটে এরপর আমাকে ঢুকতে দেখা যায়। আমি একেবারে নীচের তলায় নামছিলাম কিছু খাবারের জন্য।”

“এরপর আমাকে হেঁটে গিয়ে তার পাশের সীটে গিয়ে বসতে দেখা গেল। তখন আমারো পা উপরে, মাথা নীচে। আমি নিশ্চয়ই পা উপরে, মাথা নীচে দিয়ে হাঁটিনি। গ্যারি লকওয়ার্ড আসলে একটা রশি থেকে ঝুলছিল। আর তাকে সেই অবস্থাতেই ঘোরানো হচ্ছিল। আর আমি হেঁটে আমার জায়গায় গিয়েছিলাম। এভাবেই আসলে দৃশ্যটা শট করা হয়েছিল।”

ছবির কপিরাইট Stephen Shugerman/Getty Images

 

ঐ সিনেমার আরও অনেক দৃশ্যের মতো এই দৃশ্যটিও ধারণ করা হয়েছিল মাত্র একটি শটে। এই সিনেমার আরও অনেক জিনিস আছে, যা নতুন উদাহারণ তৈরি করেছিল। যা আসলে ঐ সময়ের তুলনায় অনেক এগিয়ে ছিল।

কুবরিক যেভাবে ঐ ছবিতে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করেছেন, সেটাও ছিল একটা নতুন ব্যাপার। মহাকাশযানের কম্পিউটার, হা-ল, ছিল এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।

হা-ল একই সঙ্গে ভালে এবং খারাপ, এই দুই ধরণের মানবিক আবেগ প্রকাশ করতো। তার সঙ্গে কিয়ের ডুলের সম্পর্কটা ছিল বেশ জটিল। সেখানে টেনশন ছিল, পরস্পরের বিরুদ্ধে রাগ-ক্ষোভ ছিল। এসব কিছুই ছবিতে দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল।

“আমার মনে হয় অভিনয়ের দিক থেকে চিন্তা করলে সবচেয়ে আবেগময় দৃশ্যটা ছিল যখন আমি হা-লকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে ফেলছি।”

হা-ল ঐ নভোযানের বাকী ক্রুদের সবাইকে হত্যা করেছিল। এবার বুঝি ডেভিড বোওম্যান, অর্থাৎ কিয়ের এর পালা। নিজের হেলমেটের ভেতর তখন তিনি জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছেন। ঐ অবস্থাতেই তিনি হা-ল এর সঙ্গে লড়াইয়ের চেষ্টা করছেন।

“জন স্টাইনবেকের ‘অফ মাইস এন্ড মেন’ উপন্যাস অবলম্বনে করা একটি নাটকের কথা আপনি শুনেছেন কিনা জানিনা, আমাকে কিন্তু এই দৃশ্যটা সেই নাটকের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল।”

“সেখানে একটা দৃশ্য আছে, যেখানে একজন লোক তার বোকাসোকা বন্ধুকে গুলি করে হত্যা করছে। যাতে করে ক্রুদ্ধ জনতা তাকে হত্যা করতে না পারে। হা-ল’কে ভেঙ্গে ফেলার কাজটি আবেগের দিক থেকে চিন্তা করলে সেরকম একটি ব্যাপারই ছিল।”

ছবিটির শেষ আট মিনিট নিয়েই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। বোওম্যানকে তার নভোচারীর স্যুট পরা অবস্থায় একটি ঘরের ভেতর দিয়ে হেঁটে একটি নিউ ক্ল্যাসিকাল বাড়ির দিকে যেতে দেখা যায়। এরপর তাকে একটি বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখা যায়। তাকে ধীরে ধীরে বুড়ো হতে দেখা যায়। এরপর তাকে একটি মানবভ্রুণ হিসেবে মহাশূণ্যে ভেসে থাকতে দেখা যায়।

কিয়ের ডুলে মনে করেন, এর মানেটা ঠিক কী – সে বিষয়ে স্ট্যানলি খুব বেশি সুনির্দিষ্ট হতে চাননি।

ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর যে খুব হৈ চৈ পড়ে গিয়েছিল তা নয়। কিন্তু পরে সমালোচকরা এই ছবিটির খুবই প্রশংসা করেছিলেন। কিন্তু ছবিটার কাজ যখন শেষের দিকে, তখন কি এর সঙ্গে যুক্ত যারা, তারা ভেবেছিলেন, এই ছবি নিয়ে এত কথা হবে?

“আমি কিন্তু বুঝতে পারছিলাম আমি খুবই ভালো একটা ছবিতে কাজ করছি। আমাকে অনেক অটোগ্রাফ দিতে হয়।”

“আমাকে যেটা অবাক করে, তা হলো, যারা অটোগ্রাফ নিতে আসে, তাদের বেশিরভাগেরই এই ছবি তৈরির সময় জন্মই হয়নি। তারা আমাকে এই ছবি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। এটি ইতিহাসে একটা জায়গা দখল করে আছে। আমি সেই ইতিহাসের অংশ।”

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» তারেক মনোয়ার একজন স্পষ্ট মিথ্যাবাদী

» কুয়েতে নতুন আইনে অবৈধ প্রবাসীদের কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে

» সোশ্যাল প্লাটফর্মে লন্ডনী মেয়েদের বেলেল্লাপনা,চাম্পাবাত সবার শীর্ষে

» ফারুকীর পদত্যাগের বিষয়টি সঠিক নয়

» পাকিস্তান থেকে সেই আলোচিত জাহাজে যা যা এল

» মিছিল করায় আট মাস ধরে সৌদি কারাগারে ৯৩ প্রবাসী, দুশ্চিন্তায় পরিবার

» কুয়েতে যুবলীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

» ক্ষমা না চাইলে নুরের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়

» বাকু থেকে ফিরলেন ড. মুহাম্মাদ ইউনূস

» শুক্রবার আহত ও শহীদদের স্মরণে কর্মসূচি দিলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
,

৫০ বছর পরও যে সিনেমা ঘিরে অনেক রহস্য

১৯৬৮ সালের ৩রা এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পেয়েছিল সায়েন্স ফিকশন চলচ্চিত্র ‘২০০১: এ স্পেস ওডিসি’। পরিচালক স্ট্যানলি কুবরিকের এই ছবি একটি রীতিমত কাল্ট এর মর্যাদা পেয়েছে, চলচ্চিত্র বোদ্ধারা এটিকে বিবেচনা করেন সর্বকালের সেরা ছবিগুলোর একটি বলে। এ নিয়ে ইতিহাসের সাক্ষীর এই পর্বটি পরিবেশন করেছেন মোয়াজ্জেম হোসেন:

‘২০০১: এ স্পেস ওডিসি”র একটা বৈশিষ্ট্য ছিল, এতে সংলাপের পরিবর্তে শক্তিশালী ভিজ্যুয়াল এবং শব্দের প্রাধান্য। তখনো পর্যন্ত সিনেমার গল্প বলার যে কৌশল, সেটাকে যেন আমূল বদলে দিয়েছিল এই ছবি।

কিয়ের ডুলে এই ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এটিকে তার অভিনয় জীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর একটি বলে মনে করেন তিনি।

“এই বিখ্যাত ছবিতে যে আমি কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম, সেটা নিয়ে আমি গর্বিত। আমি প্রায় তিরিশটি ছবিতে কাজ করেছি। কিন্তু সবাই কিন্তু এটির কথাই বলে।”

১৯৬০ এর দশকের সেই সময়টায় কিয়ের ডুলে ছয়টি কাহিনীচিত্রে কাজ করে ফেলেছেন। কিন্তু তারপরও যখন তিনি তার এজেন্টের কাছ থেকে ডাক পেলেন, তিনি অবাক হয়ে গেলেন।

“আমার এজেন্ট আমাকে বললেন, তোমার এখনই এ নিয়ে কথা বলতে বসা উচিৎ, কারণ তোমাকে এই ছবিতে প্রধান ভূমিকায় অভিনয়ের অফার দেওয়া হয়েছে। এটা ছিল আমার কাছে একেবারে অভাবনীয় একটা ব্যাপার।”

 

তখন যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র শিল্পে স্ট্যানলি কুবরিকের অব্স্থানটা কি ছিল? তাঁকে কিভাবে দেখা হতো?

“তখনই তাকে বিবেচনা করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের সেরা চলচ্চিত্র পরিচালকদের একজন হিসেবে। ততদিনে তিনি ‘ডক্টর স্ট্রেঞ্জলভ’, ‘লোলিটা’ এবং ‘স্পার্টাকাসের’ মতো ছবি করে ফেলেছেন। ততদিনে তিনি অসাধারণ কিছু কাজ করে ফেলেছেন।”

এই ছবি তৈরির জন্য স্ট্যানলি কুবরিক জুটি বেঁধেছিলেন বিখ্যাত ব্রিটিশ সায়েন্স ফিকশন লেখক আর্থার সি ক্লার্কের সঙ্গে। যিনি ছিলেন এর কাহিনীকার। দুজনে মিলে তারা এই ছবির চিত্রনাট্য লিখলেন। সেটি করতেই তাদের সময় লেগেছিল প্রায় চার বছর।

ছবিতে কিয়ের ডুলে নভোচারী ডেভিড বোওম্যানের ভূমিকায় অভিনয় করেন। কিন্তু প্রথম যখন তিনি চিত্রনাট্যটি দেখেছিলেন, তখন এই চরিত্র তার খুব পছন্দ হয়নি।

“ঐ ছবিতে যেটা ছিল ব্যতিক্রম, তা হলো, সেখানে সংলাপ ছিল খুবই কম। ৮০ হতে ৯০ শতাংশ অংশ জুড়ে কেবলই নানা ভিজ্যুয়ালস।”

“কাজেই অভিনেতা হিসেবে আমাদের বলার মতো তেমন কিছু ছিল না ঐ ছবিতে। ফলে ছবিটা তৈরি করার পর যা দাঁড়ালো, চিত্রনাট্য দেখে তার কোন ধারণা পাওয়ার উপায় ছিল না।”

 

ছবির কাহিনীর শুরু কয়েক মিলিয়ন বছর আগে আফ্রিকার এক মরুভূমিতে। সেখানে একদল আদি-বনমানব একটি বিরাট পাথরের ফলক আবিস্কার করে। এই রহস্যজনক কালো পাথরের স্তম্ভফলক থেকে অদ্ভূত সংকেত বিচ্ছুরিত হচ্ছিল।

এই পাথর ফলক তাদেরকে শেখাচ্ছিল কিভাবে একটি সামান্য হাড় বা অস্থিকে অস্ত্র হিসেবে তাদের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যায়।

কয়েক মিলিয়ন বছর পরে এই পাথর ফলকটিকে আবার দেখা গেল। একটি নভোযানে চড়ে বিজ্ঞানীরা যখন একটি মহাকাশ-স্টেশনে যাচ্ছেন, তখন। এই মার্কিন নভোযানটি যাচ্ছিল বৃহস্পতি গ্রহের দিকে। তারা এই পাথরফলকটি এবং এর অদ্ভূত ক্ষমতা সম্পর্কে আরও খোঁজ-খবর নিতে চায়। কিয়ের ডুলে হচ্ছেন এর মূল নভোচারীদের একজন।

নভোযান যখন মহাকাশের অন্ধকার ভেদ করে ছুটে চলেছে, তখন স্ট্যানলি কুবরিক যেভাবে ক্ল্যাসিকাল মিউজিক ব্যবহার করেছেন, তা তখনকার সায়েন্স-ফিকশন সিনেমার ব্যাকরণ ভেঙ্গে দিয়েছিল। নভোচারীরা তখন ছুটে চলেছেন অজানার দিকে, নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে। তখন সেখানে এ ধরণের মিউজিকের ব্যবহার একটা নতুন মাত্রা তৈরি করেছিল। সেখানে সংলাপ প্রায় নেই বললেই চলে, আর নভোযানের আরোহীদের মধ্যেও কথাবার্তা খুবই কম।

ছবিটির শ্যুটিং করা হয় ইংল্যান্ডে এমজিএম স্টুডিওতে। সেখানে পরিচালক কুবরিক একটা বিরাট কাঠামো তৈরি করেছিলেন মহাকাশযানের ভেতরে দৃশ্য সৃষ্টি করার জন্য। এটির ওজন ছিল প্রায় ৪০ টন।

“শিশুদের জন্য মেলায় যে ধরণের নাগরদোলা দেখা যায়, কল্পনা করুন সেরকম বিরাট একটা চক্র। এখন এই নাগরদোলার ভেতরে সিনেমার সেটটা তৈরি করা হয়েছিল। এটি ছিল অসাধারণ। আমি এরকম কিছু এর আগে দেখিনি।”

একজন অভিনেতা হিসেবে এরকম একটি বিরাট সেটে কাজ করার অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল?

“কাউকে নিশ্চয় এটা মনে করিয়ে দেওয়ার দরকার নেই যে, তখনো পর্যন্ত কম্পিউটার জেনারেটেড স্পেশাল ইফেক্ট বলে কিছু ছিল না। ২০০১ ছবিতে সব কিছু বাস্তবেই করতে হয়েছিল।”

তিনি বলছেন, “ছবির একেবারে শুরুর দিকে একটা শট আছে। যেখানে গ্যারি লকওয়ার্ড বা ফ্রাংক পুল এই নাগরদোলার একেবারে শীর্ষে খাবার খাচ্ছেন মাথা নীচে পা উপরে থাকা অবস্থায়। সেই শটে এরপর আমাকে ঢুকতে দেখা যায়। আমি একেবারে নীচের তলায় নামছিলাম কিছু খাবারের জন্য।”

“এরপর আমাকে হেঁটে গিয়ে তার পাশের সীটে গিয়ে বসতে দেখা গেল। তখন আমারো পা উপরে, মাথা নীচে। আমি নিশ্চয়ই পা উপরে, মাথা নীচে দিয়ে হাঁটিনি। গ্যারি লকওয়ার্ড আসলে একটা রশি থেকে ঝুলছিল। আর তাকে সেই অবস্থাতেই ঘোরানো হচ্ছিল। আর আমি হেঁটে আমার জায়গায় গিয়েছিলাম। এভাবেই আসলে দৃশ্যটা শট করা হয়েছিল।”

ছবির কপিরাইট Stephen Shugerman/Getty Images

 

ঐ সিনেমার আরও অনেক দৃশ্যের মতো এই দৃশ্যটিও ধারণ করা হয়েছিল মাত্র একটি শটে। এই সিনেমার আরও অনেক জিনিস আছে, যা নতুন উদাহারণ তৈরি করেছিল। যা আসলে ঐ সময়ের তুলনায় অনেক এগিয়ে ছিল।

কুবরিক যেভাবে ঐ ছবিতে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করেছেন, সেটাও ছিল একটা নতুন ব্যাপার। মহাকাশযানের কম্পিউটার, হা-ল, ছিল এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।

হা-ল একই সঙ্গে ভালে এবং খারাপ, এই দুই ধরণের মানবিক আবেগ প্রকাশ করতো। তার সঙ্গে কিয়ের ডুলের সম্পর্কটা ছিল বেশ জটিল। সেখানে টেনশন ছিল, পরস্পরের বিরুদ্ধে রাগ-ক্ষোভ ছিল। এসব কিছুই ছবিতে দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল।

“আমার মনে হয় অভিনয়ের দিক থেকে চিন্তা করলে সবচেয়ে আবেগময় দৃশ্যটা ছিল যখন আমি হা-লকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে ফেলছি।”

হা-ল ঐ নভোযানের বাকী ক্রুদের সবাইকে হত্যা করেছিল। এবার বুঝি ডেভিড বোওম্যান, অর্থাৎ কিয়ের এর পালা। নিজের হেলমেটের ভেতর তখন তিনি জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছেন। ঐ অবস্থাতেই তিনি হা-ল এর সঙ্গে লড়াইয়ের চেষ্টা করছেন।

“জন স্টাইনবেকের ‘অফ মাইস এন্ড মেন’ উপন্যাস অবলম্বনে করা একটি নাটকের কথা আপনি শুনেছেন কিনা জানিনা, আমাকে কিন্তু এই দৃশ্যটা সেই নাটকের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল।”

“সেখানে একটা দৃশ্য আছে, যেখানে একজন লোক তার বোকাসোকা বন্ধুকে গুলি করে হত্যা করছে। যাতে করে ক্রুদ্ধ জনতা তাকে হত্যা করতে না পারে। হা-ল’কে ভেঙ্গে ফেলার কাজটি আবেগের দিক থেকে চিন্তা করলে সেরকম একটি ব্যাপারই ছিল।”

ছবিটির শেষ আট মিনিট নিয়েই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। বোওম্যানকে তার নভোচারীর স্যুট পরা অবস্থায় একটি ঘরের ভেতর দিয়ে হেঁটে একটি নিউ ক্ল্যাসিকাল বাড়ির দিকে যেতে দেখা যায়। এরপর তাকে একটি বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখা যায়। তাকে ধীরে ধীরে বুড়ো হতে দেখা যায়। এরপর তাকে একটি মানবভ্রুণ হিসেবে মহাশূণ্যে ভেসে থাকতে দেখা যায়।

কিয়ের ডুলে মনে করেন, এর মানেটা ঠিক কী – সে বিষয়ে স্ট্যানলি খুব বেশি সুনির্দিষ্ট হতে চাননি।

ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর যে খুব হৈ চৈ পড়ে গিয়েছিল তা নয়। কিন্তু পরে সমালোচকরা এই ছবিটির খুবই প্রশংসা করেছিলেন। কিন্তু ছবিটার কাজ যখন শেষের দিকে, তখন কি এর সঙ্গে যুক্ত যারা, তারা ভেবেছিলেন, এই ছবি নিয়ে এত কথা হবে?

“আমি কিন্তু বুঝতে পারছিলাম আমি খুবই ভালো একটা ছবিতে কাজ করছি। আমাকে অনেক অটোগ্রাফ দিতে হয়।”

“আমাকে যেটা অবাক করে, তা হলো, যারা অটোগ্রাফ নিতে আসে, তাদের বেশিরভাগেরই এই ছবি তৈরির সময় জন্মই হয়নি। তারা আমাকে এই ছবি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। এটি ইতিহাসে একটা জায়গা দখল করে আছে। আমি সেই ইতিহাসের অংশ।”

Facebook Comments Box


এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



Exchange Rate

Exchange Rate EUR: Thu, 21 Nov.

সর্বশেষ খবর



Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Bangladesh Office

Director. Rumi Begum
Adviser. Advocate Koyes Ahmed
Desk Editor (Dhaka) Saiyedul Islam
44, Probal Housing (4th floor), Ring Road, Mohammadpur,
Dhaka-1207. Bangladesh
Contact: +8801733966556 /+8801316861577

Email Address

agrodristi@gmail.com, agrodristitv@gmail.com

Licence No.

MC- 00158/07      MC- 00032/13

Design & Devaloped BY Popular-IT.Com
error: দুঃখিত! অনুলিপি অনুমোদিত নয়।