” সাথী আপু টকি, আই কই , আই কে খুজো. ….” ছোট্ট বেলায় এই কথাগুলো আমি বলতাম আমার মামাতো বোন কে । তখন ঠিক মতো কথা বলতে শিখিনি ।
টুকি শব্দ টা বলতে পারতাম না । বলতাম টকি ।
আমি বলতে পারতাম না । বলতাম আই ।
সবুজ রং এর এই পাতাটার নাম মনে নেই । নানার বাড়ির চারপাশে এই পাতাগুলো ঘাসের মধ্যে মিশে থাকতো ।আমরা দল বেঁধে অনেক ছেলে মেয়ে একসাথে খেলতাম । কেউ কোথাও আঘাত পেলে বা কেটে গেলে , এই সবুজ পাতা গুলো চিবিয়ে , তার সাথে থুথু লাগিয়ে , কাটা জায়গায় লাগাতাম ।
তখন স্কুলে ভর্তি হয়নি । কি যে সব হাসির কাজ করতাম । এই সবুজ পাতা গুলো মাঝে মাঝে চিবিয়ে
খেতাম । টক স্বাদের পাতা।
নাম টা কিছুতেই মেনে মনে করতে পারছি না ।
চোখ বন্ধ করলেই , আমি সেই পাতা গুলো , এখনও দেখতে পাই ।
সেই ছোট্ট আমি টা আজ আছি , আমার সাথী আপু আছে , কিন্তু হারিয়ে গেছে টকি বলার বয়স ।
আমি আর আমার মামাতো বোন নানার বাসার কাঁঠাল গাছ তলায় খেলতাম , আমরা দুজনে কাঁঠাল গাছের পাতা কুড়িয়ে, জামার পকেটে রাখতাম । আর বলতাম , আমাদের পকেট ভর্তি টাকা । কাঁঠাল গাছ এর পাশে একটা বেল গাছ ছিল । গাছ টা এখনও আছে । সবাই
বলতো , সেই গাছে নাকি বৃদ্ধ এক জ্বীন থাকে । সেই জ্বীন নাকি মানুষের উপকার করে ।
আমার নানার সাথে সেই জ্বীন নাকি মসজিদে নামাজ পড়তে যেতো ।
তখন রাজশাহীর রায়পাড়া ছিল গাছপালা , ঝোপ জঙ্গলে ভরা । অদ্ভুত সুন্দর কাশ ফুল ফুটতো । পাট গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতো ।
আমি সাথী আপুর সাথে আমার আরেক নানীর
( নানীর বোন ) বাসায়
যেতাম । নাসরিন খালা খুব সুন্দর সুন্দর গল্প বলতো ।
ভোর বেলা আমি আর সাথী আপু মামার বাসার ছাদে , বাটা বিস্কুট আর চা খেতাম । গরুর খাঁটি দুধ দিয়ে বানানো চা । অদ্ভুত সুন্দর সেই স্বাদ ।
পঁচিশ পয়সা দিয়ে পাওয়া যেত একটি বাটা বিস্কুট । কি যে সুন্দর আর স্বপ্নমাখা সেই দিন গুলো । বাটা বিস্কুট এখনও পাওয়া যায় । তবে পঁচিশ পয়সার সেই বাটা বিস্কুটের আজ বড়ই অভাব ।
শীতের সকালে, আকাশে উড়ে যেত শীতের অতিথি পাখি , ধবধবে সাদা বক । আমি আর আপু মুগ্ধ চোখে দেখতাম সেই দৃশ্য ।
বিকেলে আমি আর সাথী আপু মসজিদে পড়তে
যেতাম । অনেক ছোট ছোট ছেলে মেয়ে একসাথে কায়দা বই পড়তাম । মসজিদ থেকে ফেরার পথে মার্বেল
কিনতাম । বিভিন্ন রং এর মার্বেল ।
মামী অনেক মজার মজার খাবার রান্না করতো । আমি আর আপু ছাদের উপর থেকে দেখতাম , বেগুন টমেটো চাষ করার কাজ । মাঝে মাঝে লিচু বাগান এর মাচার উপর আমরা দুজন বসে থাকতাম ।
সন্ধ্যায় মাগরীব এর আযান ভেসে আসতো আমার নানার কবরস্থানের দিক থেকে । তখন মনটা উদাস হয়ে যেত ।
আমার নানা নানী মিশে আছেন রায়পাড়ার সেই কবরস্থানের মাটিতে । আমার নানা মরহুম আলহাজ্ব ডাঃ জয়নাল আবেদীন ছিলেন ভীষণ মহত আর হৃদয়বান চিকিৎসক ।
তিনি নিবেদিত প্রাণ হয়ে অগণিত মানুষের উপকার করেছেন । তাঁর মহত্ত্বের জন্য তিনি রায়পাড়ার বিখ্যাত চিকিৎসক ছিলেন ।
নানাভাই আমি যেন তোমার মতো মহত হতে পারি ।
চোখ বন্ধ করলেই আজো দেখতে পাই,
আমি আর সাথী আপু , আমরা হাত ধরে ছুটে চলেছি , হলুদ সরিষা ক্ষেতের মধ্যে ।
অদ্ভুত সুন্দর সেই সরিষার
ফুল ।
তখন মোবাইল ফোন ছিল
না । তাই হলুদ সরিষা ক্ষেতের ছবি তুলতে পারিনি।
ছবি গুলো ক্যামেরা তে নেয় ,
ছবি গুলো থেকে গেছে বুকের মধ্যখানে ।
আর থাকবে অনন্তকাল ।
আজ
আবারো খুব বলতে ইচ্ছে করছে ,
” সাথী আপু টকি , আই কই, আই কে খুজো…….,
সাথী আপু টকি……..। ”