ভারতের মাটিতে প্রথম টেস্ট খেলতে বাংলাদেশের কেন প্রায় সতেরো বছর লেগে গেল, তা নিয়ে সম্প্রতি আলোচনা ও সমালোচনা কম হয়নি। এর আগে যখনই ভারতে বাংলাদেশের টেস্ট খেলার প্রস্তাব উঠেছে, তখনই স্পন্সর পাওয়া যাবে না বা মাঠে দর্শকদের সাড়া মিলবে না – এই সব যুক্তিতে তা মুলতুবি হয়ে গেছে।
কিন্তু হায়দ্রাবাদ টেস্ট কি সেই সব আশঙ্কা অমূলক প্রমাণ করতে পারল?
বাণিজ্যিক ও ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণে কতটা সফল হল এই টেস্ট?
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যেমন উন্নতি করেছে তাতে স্থানীয় দর্শকরাও মুগ্ধ – এবং তাদের বলতে কোনও দ্বিধা নেই বাংলাদেশকে আরও অনেক আগেই ভারতে খেলতে আমন্ত্রণ জানানো উচিত ছিল। লাঞ্চের ঠিক আগে মাহমুদউল্লা ও সাব্বির রহমান যেভাবে খেলছিলেন মুক্তকণ্ঠে তারও প্রশংসা করছিলেন তারা।
শুধু সাধারণ দর্শকরাই নন, হায়দ্রাবাদ ক্রিকেট সংস্থার সচিব কে জন মনোজও বিবিসিকে বলছিলেন বাণিজ্যিক দৃষ্টিতেও এই টেস্টটা যথেষ্ট সফল।
তিনি জানাচ্ছেন, “ভারতীয় বোর্ড এই দিক থেকে দারুণ হোমওয়ার্ক করেছে এবং টেস্টের মার্কেটিংও খুব ভাল হয়েছে। আর এখানে প্রোডাক্ট যেটা, সেই বাংলাদেশ দলও আগের তুলনায় এখন অনেক উন্নতি করেছে, পাঁচদিন ধরে লড়ছে ও টেস্ট ক্রিকেটের জন্য সেটা খুব ভাল বিজ্ঞাপন”।
ঢাকার ইনকিলাব পত্রিকার হয়ে হায়দ্রাবাদ টেস্ট কভার করতে এসেছেন শামীম চৌধুরী, তিনিও মনে করেন আমন্ত্রিত দল হিসেবে বাংলাদেশ তাদের মর্যাদা রেখেছে ভালভাবেই।
“বিদেশের মাটিতে, বিশেষ করে অশ্বিন-জাদেজার বোলিং অ্যাটাকের সামনে ৩৮৮ করা কিন্তু সামান্য কথা না। ৬৮৭ রানের নীচে চাপা পড়ে ফলো-অন সেভ করার সময় মাথায় অনেক কিছুই ঘুরপাক খায়। সে অবস্থা কাটিয়ে বাংলাদেশ কিন্তু একটা রিজনেবল স্কোর করেছে”। বলেন তিনি।
দর্শক যে বেশ ভাল সংখ্যায় এসেছে, তা স্বীকার করছেন হায়দ্রাবাদের ক্রিকেট কর্মকর্তা কে জন মনোজও।
তিনি বলেন, “৩৬ হাজার ক্ষমতার স্টেডিয়ামে শনি-রবিবার ২৩ হাজার মতো দর্শক হয়েছে, যেটা টেস্টে দারুণ বলতে হবে। আমার এখন বলতে দ্বিধা নেই, সফলভাবে এই টেস্ট আয়োজন করতে পেরে আমরা গর্বিত, আশা করি বাংলাদেশেরও এখানে ভাল লেগেছে”।
তবে এই সিরিজ কেন মাত্র এক টেস্টের, বাংলাদেশের দিক থেকে সেই আক্ষেপ কিন্তু থাকছেই। ক্রীড়া সাংবাদিক মহিউদ্দিন পলাশের কথায়:
“টেস্টটা খেলার জন্য কিন্তু আমাদের অনেক দেন-দরবার করতে হয়েছে। ১৭ বছর পর খেলেও কিন্তু পূর্ণাঙ্গ একটি সিরিজ হয়নি। সমালোচনার মুখে হয়তো পড়তে যাচ্ছিল যেকারণে বিবেচনার মতো করে বাংলাদেশকে এখানে একটি ম্যাচ দিয়েছে”।
যদিও মুম্বই মিররের ক্রিকেট লেখক অমিত গুপ্তা কিন্তু মনে করেন, আগে নয় – বাংলাদেশকে এখন আমন্ত্রণ জানানোটাই সঠিক হয়েছে। “কারণটা সহজ, আগে এলে তারা হয়তো লড়োই দিতে পারত না, এখন খুব ভালভাবে লড়াই দিচ্ছে”।
হায়দ্রাবাদের পুরনো আইপিএল ডেকান চার্জার্সের সিইও ছিলেন ভেঙ্কট রেড্ডি, তিনিও বলছিলেন পরিণতি আর অভিজ্ঞতাই ক্রিকেটের আসল ব্যাপার – বাংলাদেশ এতদিনে সেটা অর্জন করেছে ও অচিরেই হয়তো বিশ্বের অন্যতম সেরা দল হয়ে উঠতে চলেছে।
ম্যাচের পঞ্চম দিনেও যেভাবে মানুষ বাংলাদেশের খেলা দেখতে এসেছে সেটাই প্রমাণ করে তাদের আকর্ষণ। সুতরাং এতদিন কেন ভারতে খেলতে আসা হয়নি তা নিয়ে আক্ষেপ করে লাভ নেই – বরং তার মতে বাংলাদেশের উচিত এটাই উপভোগ করা যে ভারত হয়তো হায়দ্রাবাদ টেস্ট জিতেছে – কিন্তু বাংলাদেশও হারেনি, নিজেদের তারা প্রমাণ করেছে।