গত আসরের সেমি-ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বড় হারের মধুর প্রতিশোধ নিল ভারত।
পেসার জাসপ্রিত বুমরাহর নিচু ফুল টস সুইপ করার চেষ্টায় পারলেন না জফ্রা আর্চার, বল আঘাত করল তার পায়ে। এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে আঙুল তুলে দিলেন আম্পায়ার। ব্যাটসম্যান রিভিউ নিলেও রক্ষা হলো না। তাতে জয়ের অপেক্ষাটাই স্রেফ একটুখানি বাড়ে ভারতের। ম্যাচের ফল নিয়ে সংশয় তো কেটে গিয়েছিল অনেক আগেই। রান তাড়ায় লড়াই জমাতেই পারেনি ইংল্যান্ড। গতবারের চ্যাম্পিয়নদের উড়িয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল ভারত।
বৃষ্টি-বিঘ্নিত দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে বৃহস্পতিবার ভারতের জয় ৬৮ রানে।
গায়ানার মন্থর ও অসম বাউন্সের উইকেটে রোহিত শার্মার ফিফটি ও সুরিয়াকুমার ইয়াদাভের চল্লিশোর্ধ ইনিংসে ১৭১ রানের পুঁজি গড়ে ভারত। জবাবে ২০ বল বাকি থাকতে ১০৩ রানেই গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড।
গত আসরের দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে অ্যাডিলেইডে ১৬৮ রান করেও ইংল্যান্ডের কাছে ১০ উইকেটে হেরেছিল ভারত। একই মঞ্চে এবার ইংলিশদের ব্যাটিং গুঁড়িয়ে মধুর প্রতিশোধ নিল প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়নরা।
ব্যাটিংয়ে দলকে সামনে থেকে পথ দেখান অধিনায়ক রোহিত। ৩৯ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৫৭ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৬ বলে ৪৭ রান করেন সুরিয়াকুমার।
তবে ম্যাচের সেরা আকসার প্যাটেল। ব্যাট হাতে ৬ বলে এক ছক্কায় ১০ রানের ক্যামিওর পর হাত ঘুরিয়ে ৪ ওভারে ২৩ রানে ৩ উইকেটে নেন বাঁহাতি এই স্পিনার।
দারুণ বোলিং করেন বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার কুলদিপ ইয়াদাভও। তিনিও নেন ৩ উইকেট, ৪ ওভারে ১৯ রান দিয়ে। বুমরাহর প্রাপ্তি দুটি।
আগামী শনিবার শিরোপা লড়াইয়ে ভারতের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা, যারা বৈশ্বিক আসরে সাতবার সেমি-ফাইনাল থেকে বিদায়ের পর ফাইনালে উঠেছে প্রথমবার।
লক্ষ্য তাড়ায় ইংল্যান্ডের শুরুটা হয় আশা জাগানিয়া। প্রথম ৩ ওভারে বিনা উইকেটে ২৬ রান তোলে তারা। চতুর্থ ওভারে প্রথমবার আক্রমণে এসে প্রথম বলেই জস বাটলারকে (১৫ বলে ২৩) ফিরিয়ে দেন আকসার। এরপর নিয়মিতই উইকেট হারায় ইংলিশরা।
ফিল সল্টের স্টাম্প এলোমেলো করে দেন বুমরাহ। আকসার পরের ওভারে ধরেন দ্বিতীয় শিকার, বোল্ড করে দেন জনি বেয়ারস্টোকে।
পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ড করে ৩৯ রান। এরপর আবার শুরু হয় ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিল।
টানা তৃতীয় ওভারে উইকেটের দেখা পান আকসার, এবার তার শিকার মইন আলি। স্যাম কারানকে বিদায় করেন কুলদিপ। নিজের পরের দুই ওভারে তিনি ফেরান হ্যারি ব্রুক ও ক্রিস জর্ডানকে।
ব্রুকের ১৯ বলে ২৫ রানই হয়ে থাকে ইনিংসের সর্বোচ্চ। লিয়াম লিভিংস্টোন ও আদিল রাশিদ কাটা পড়েন রান আউটে। আর্চারকে বিদায় করে জয় নিশ্চিত করেন বুমরাহ।
এর আগে বৃষ্টির কারণে সোয়া এক ঘন্টা দেরিতে হওয়া টসে জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠান বাটলার। আরও একবার দ্রুতই ভিরাট কোহলিকে (৯ বলে ৯) হারায় ভারত। গত আসরের রেকর্ড স্কোরার এবার ৭ ম্যাচের পাঁচটিতেই দুই অঙ্ক ছুঁতে ব্যর্থ হলেন।
তিনে নেমে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি রিশাভ পান্তও (৬ বলে ৪)। পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে ৪৬ রান করা ভারতকে টানেন রোহিত ও সুরিয়াকুমার।
মাঝে আরেক দফা বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকে লম্বা সময়। তবে রোহিত-সুরিয়াকুমারের ব্যাটিংয়ে ছন্দপতন হয়নি। তৃতীয় উইকেটে ৫০ বলে ৭৩ রানের কার্যকর জুটি উপহার দেন দুজন।
রোহিত ফিফটি পূর্ণ করেন ৩৬ বলে। তাকে ফিরিয়েই জুটি ভাঙেন লেগ স্পিনার রাশিদ। সুরিয়াকুমারও এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি।
হার্দিক পান্ডিয়া (১৩ বলে ২৩) ও রবীন্দ্র জাদেজার (৯ বলে ১৭*) ক্যামিওতে পৌনে দুইশর কাছাকাছি পুঁজি গড়ে ভারত। ইংল্যান্ডের সামনে যা হয়ে উঠল পাহাড়সম। সেই পাহাড়ে চাপা পড়ে থামলে তাদের বিশ্বকাপ অভিযান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ১৭১/৭ (রোহিত ৫৭, কোহলি ৯, পান্ত ৪, সুরিয়াকুমার ৪৭, পান্ডিয়া ২৩, জাদেজা ১৭*, দুবে ০, আকসার ১০, আর্শদিপ ১*; টপলি ৩-০-২৫-১, আর্চার ৪-০-৩৩-১, কারান ২-০-২৫-১, রাশিদ ৪-০-২৫-১, জর্ডান ৩-০-৩৭-৩, লিভিংস্টোন ৪-০-২৪-০)
ইংল্যান্ড: ১৬.৪ ওভারে ১০৩ (সল্ট ৫, বাটলার ২৩, মইন ৮, বেয়ারস্টো ০, ব্রুক ২৫, কারান ২, লিভিংস্টোন ১১, জর্ডান ১, আর্চার ২১, রাশিদ ২, টপলি ৩*; আর্শদিপ ২-০-১৭-০, বুমরাহ ২.৪-০-১২-২, আকসার ৪-০-২৩-৩, কুলদিপ ৪-০-১৯-৩, জাদেজা ৩-০-১৬-০, পান্ডিয়া ১-০-১৪-০)
ফল: ভারত ৬৮ রানে জয়ী