ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদত্যাগের জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ।
পরিচালনাকারীদের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে কার্যত তিনিই ব্যাংকটি পরিচালনা করছিলেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এক ফেইসবুক স্ট্যাটাসে হুমকি পাওয়ার কথা জানান সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ।
পরে সন্ধ্যায় তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাকে বন্দুকের ভয় দেখানো হচ্ছে। আজ (বৃহস্পতিবার) বিকেল ৫টার মধ্যে আমাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে।”
এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আরাস্তু খানকে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
জামায়াতে ইসলামীর বেশ কয়েকজন নেতার ‘সংশ্লিষ্টতা’ থাকা ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে কয়েকটি পরিবর্তন হয় গত জানুয়ারিতে। সাবেক সচিব আরাস্তু খান ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান হন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে আসেন নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ। সে সময় ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদেও পরিবর্তন আসে।
সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ এখন বলছেন, “ইসলামী ব্যাংক আবারও স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে চলে গেছে।”
এই অবস্থা থেকে ব্যাংকটিকে ‘রক্ষার জন্য’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চাইছেন বলে জানান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সে কারণেই আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইছি। প্রধানমন্ত্রী কিছু না করলে তারপর আমি পদত্যাগ করব, তার আগে নয়।”
গত ৬ মে ইসলামী ব্যাংকে স্বতন্ত্র পরিচালক ও ইসি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের এক বছর পূর্ণ হওয়ার কথা জানিয়ে ফেইসবুকে আহসানুল আলম পারভেজ লিখেছেন, “ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের বৃহত্তম ব্যাংক। এই ব্যাংক দেশের ৩২ শতাংশ অর্থনীতির উপরে প্রভাব ফেলে।“১ কোটি ২০ লাখের বেশি আমানতকারীর সর্বস্ব ১০ লাখ বিনিয়োগ গ্রহীতাকে দেওয়া হয়েছে। কাকে দেওয়া হয়েছে, তারা ওই টাকা পুনরায় জঙ্গি অর্থায়ন অথবা সরকারবিরোধী রাজনীতিতে দিয়েছে কি না তা আমরা মনিটর করতে শুরু করি।
“বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ‘সোনার বাংলাদেশ’ বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন ‘সোনার বাংলাদেশ’ সেই ভিশনকে সামনে নিয়ে আমি ও নতুন পর্ষদ হিন্দু-বৌদ্দ-খ্রিস্টান-মুসলমান ৫ লাখ হতদরিদ্র মানুষকে ঋণ দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করি। আরও ৫ লাখ এসএমই (ক্ষুদ্র মাঝারি) যুবক ও নারী উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ প্রদানের নির্দেশ দিই, যাতে গরিবি হঠানোর মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের সমর্থন আদায় করতে পারি। তখনি শুরু হয় ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে প্লাস-মাইনাসের ষড়যন্ত্র।
“রাষ্ট্রবিরোধী এই ষড়যন্তের সাথে জড়িত আছে ব্যাংকের কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং দুর্নীতিগ্রস্ত কিছু সরকারি অফিসার। ষড়যন্ত্রটি এত জটিল যে অনতিবিলম্বে গোয়েন্দাসমূহের সাঁড়াশি তৎপরতা রাষ্ট্রের স্বার্থে অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে।”
নতুন পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর ‘ষড়যন্ত্রমূলকভাবে’ যেসব কর্মকাণ্ড হয়েছে, সেগুলোর কয়েকটি তুলে ধরেছেন সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ-প্রথমত: মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি নিয়ে যখন পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হয় তখন এ সরকার ইসলামবিদ্বেষী এবং এই পর্ষদও ইসলামবিদ্বেষী এরূপ প্রচারণা সারাদেশে চালানো হয়। এই প্রচারণা সত্য প্রমাণ করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইসলামী ব্যাংকের ক্যালেন্ডার থেকে ‘শরীয়াহভিত্তিক পরিচালিত ব্যাংক’ শব্দটি সরিয়ে দিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদকে বেকায়দায় ফেলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ভোট নষ্ট করার ষড়যন্ত্র শুরু করা হয়। আমি ও নতুন পর্ষদ এই ষড়যন্ত্রকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও আমাদের অমতে ওই সমস্ত (৫ থেকে ৭ লাখের বেশি) ক্যালেন্ডার বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
দ্বিতীয়ত: ইসলামী ব্যাংকের সাড়ে ১৩ হাজার কর্মকর্তার মধ্যে ৯৯ শতাংশ আদর্শ ও নিবেদিত ব্যাংকার। ইসলামী ব্যাংকিংকে ব্রত হিসেবে নিয়ে সারা জীবন উৎসর্গ করেছেন এদের অনেকে। ইসলামী ব্যাংকটাকে সার্বজনীন ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এই ৯৯ শতাংশ কর্মকর্তা নতুন পরিচালনা পর্ষদকে সহযোগিতা করছে। কিন্তু ব্যাংকের হাতে গোনা (দুই ডজনের কম) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ও রাষ্ট্রবিরোধী কাজে মামলা রয়েছে, তারা এসে দখল করে নেয় ইসলামী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা। প্রথমে তারা পরিচালনা পর্ষদের মধ্যে ভাঙন ধরাতে চায়। পরবর্তীতে পর্ষদসমূহের সম্পূর্ণ অবাধ্য হয়ে পড়ে। কেবলমাত্র বিভিন্ন পর্ষদে তাদের দ্বারা উত্থাপিত এজেন্ডার বাইরে কোনো নির্দেশনা পরিপালন করতে অপারগতা প্রকাশ করে। সরকারবিরোধী কার্যকলাপে সক্রিয় কর্মচারীদের ভালো ভালো পোস্টিং দিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী রাজনীতির সুযোগ করে দেওয়া হয়। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকর্তাদের ঢাকার বাইরে অন্যত্র বদলির নির্দেশনা অগ্রাহ্য করা হয়।
তৃতীয়ত: বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবসে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে পরিচালনা পর্ষদকে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা অমান্য করা হয়। একইভাবে ২৬ মার্চ যথাযথ মর্যাদায় পালন করা হয় নাই। পাশাপাশি ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় শাখায় অফিসের পরে গোপন মিটিং, ইয়ানত অর্থাৎ চাঁদা সংগ্রহ ও ক্যাডারদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।চতুর্থত: এ বছরের মুনাফা থেকে ৭০ কোটি টাকা ট্রান্সফার করা হয় ইসলামী ব্যাংকের বিতর্কিত যাকাত ফান্ডে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির সবাই আমাকে প্রশ্ন করেন, ইসলামী ব্যাংক হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানদের নীট মুনাফা থেকে কেন যাকাত কর্তন করে? মুসলমান আমানতকারীরা প্রশ্ন করেন, “আমার যাকাত আমি দেব, যাকে ইচ্ছা তাকে দেব। কেন আমার যাকাত বিতর্কিত জায়গায় বিতরণ করা হচ্ছে?”
সরকারকে সতর্ক করে অধ্যাপক আহসানুল আলম পারভেজ বলেন, “অশুভ শক্তির ইশারায় এখন ব্যাংকটিতে রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি পুনর্বাসিত হয়েছে এবং জাতির পিতার খুনিদের সাথে সংশ্লিষ্টরা ফিরে আসছেন নেতৃত্বে। আগামী বছর এই ব্যাংকটিকে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে ব্যবহার করার নীলনকশা সম্পাদন হচ্ছে।
“অপরপক্ষে আমার উপর সরে দাঁড়ানোর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে নিয়ে প্লাস-মাইনাসের ষড়যন্ত্র হচ্ছে।”